১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ঢাকায় মানববন্ধন আন্দোলনেই সরকারের পতন হবে : ফখরুল

বিএনপির মানববন্ধনে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

ক্ষমতাসীনরা গণলুট করছে মন্তব্য করে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আসুনÑ নিজের অধিকার, ভোটের অধিকার এবং কথা বলার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। এই সরকার আমাদের সব অধিকারকে কেড়ে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা আজকে ঐক্যবদ্ধ হই দলমত নির্বিশেষে, সব দল মিলে আমাদের স্বার্থরক্ষা ও অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই, স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্নত রাখতে ঐক্যবদ্ধ হই। সামনের দিনে আরো বৃহত্তর আন্দোলন তৈরি করে এই দানব সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। গতকাল সকালে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, তার ডায়াবেটিস এবং আরথ্রাইটিস বেড়ে গেছে। ঘাড়ের ব্যথা বেড়ে গেছে। তিনি সাহায্য ছাড়া হাঁটা-চলা করতে পারেন না। হুইল চেয়ারে চলতে হচ্ছে তাকে। এই সরকার, এই সরকারের কর্মকর্তারা এবং পিজির (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ বলছেন, তিনি নাকি সুস্থ রয়েছেন! তিনি একেবারেই সুস্থ নন। আজকে অসুস্থ অবস্থায় তিনি কারারুদ্ধ হয়ে দিনাতিপাত করছেন। আমরা অবিলম্বে অসুস্থ নেত্রীর সুচিকিৎসার জন্য তার মুক্তির দাবি করছি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি মহাসচিব নিজেই স্লোগান ধরেন- ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও’, ‘মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।’ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা এই কর্মসূচি পালিত হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাথ ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, জাসাস, মহিলা দল, ড্যাব, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন। মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির কাজী আবুল বাশার, উত্তরের আহসান উল্লাহ হাসান, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু বক্তব্য দেন। কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, শামীমুর রহমান শামীম, আবদুল আউয়াল খান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, আমিনুল হক, কাদের গনি চৌধুরী, শরীফুল আলম, মীর নেওয়াজ আলী, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, হেলেন জেরিন খান, রফিক সিকদার, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ওমর ফারুক শাফিন, সালাহউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, কাজী আমীর খসরু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ডা: শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিঙ্কু, জিয়া পরিষদের ড. এমতাজ হোসেন, আব্দুল্লাহিল মাসুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া মানববন্ধন উপলক্ষে সকাল থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ভোট ডাকাতি করে, জনগণের অধিকারকে হরণ করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা অন্যায়ভাবে দেশনেত্রীকে আটকিয়ে রেখেছে শুধু একটি কারণে। দেশনেত্রী যদি মুক্ত থাকতেন তিনি জনগণকে নিয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। এই অবৈধ সরকার রাষ্ট্রের সব যন্ত্রগুলোকে, সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আজকে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মিডিয়া-প্রেস সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্য। একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাস্তবায়িত করার জন্য এ সরকার জোর করে টিকে আছে।
তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখছেন, টেলিভিশনে দেখছেন, কিভাবে গণলুট করা হচ্ছে, কিভাবে দুর্নীতি করা হচ্ছে। আজকে তারা দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছেন। দুর্নীতির টাকা দিয়ে তারা দেশে-বিদেশে পাচার করে বাড়ি-ঘর তুলছেন। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই, তারা বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসে না বলেই এই দেশটাকে গণতন্ত্রহীন অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম এ দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবো বলে, এ দেশের মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে দেবো বলে। আজকে এই আওয়ামী লীগের সরকার যারা একবার ১৯৭৫ সালে বাকশাল করে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, গণতন্ত্র হত্যা করেছিল আজকে আবার ভিন্ন কৌশলে তারা একই কায়দায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করছে।
রোহিঙ্গা ও আসামের নাগরিকপঞ্জি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আজকে বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে পারছে না। কারণ তাদের সেই বৈধতা নেই, তাদের সেই সাহস নেই। তাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। দুই বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত পাঠাতে পারেন নাই। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী বন্ধুদেশ তাদের আসামের মন্ত্রীরা তাদের নেতারা হুমকি দিচ্ছেন, বাংলাদেশী যারা অনুপ্রবেশ করেছে তাদেরকে তারা ঠেলে বের করে দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে! আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, কোনো বাংলাদেশী কখনো ভারতে যায় নাই স্বাধীনতার পরে। আজকে গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে বাংলাদেশকে আবার বিপদগ্রস্ত করার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেড় বছর হতে চলল বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারের প্রভাবের কারণে আদালত মুক্তমনে কাজ করতে পারছে না। ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্ত করা সম্ভবপর হচ্ছে না। আমরা এই আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধভাবে সারা বাংলাদেশে আন্দোলনের পথ আমাদের বেছে নিতে হবে, কর্মসূচি দিতে হবে। একমাত্র রাজপথেই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বেগম জিয়ার মুক্তি অর্জন করতে পারব।
গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেন, মানববন্ধন নয়, দানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। খালেদা জিয়ার জন্য নয়, আগে সরকার পতনের আন্দোলন করব। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আসুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার শপথ নিই, যার মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন।


আরো সংবাদ



premium cement