১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আগামী বছর ডেঙ্গুর এত প্রকোপ থাকবে না ২ নারীসহ ৪ জনের মৃত্যু

-

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, আগামী বছরও ডেঙ্গু থাকবে, কিন্তু এ বছরের মতো এত বেশি থাকবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ বছর যে হারে ব্যাপক ভিত্তিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে অন্যান্য বছর এমন ছিল না। আগামী বছরও ডেঙ্গুজ্বরের বাহক মশা নিধন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ফলে আগামী বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কম হতে পারে।
গতকাল বুধবার রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌভভাবে আয়োজিত ‘নলেজ শেয়ারিং অন ডেঙ্গু সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি কথা বলেন।
ডেঙ্গু পরীক্ষায় কিছু ভুল রিপোর্টও হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে এ বছর এত বেশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হবে তা কেউই বুঝতে পারেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ আরো কিছু কারণে বিভিন্ন দেশে এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল। চলতি বছর বিশ্বের ১২৭টি দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়েছে।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু কেন জানতে চাইলে অধ্যাপক আজাদ বলেন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যু কম হয়েছে। বাংলাদেশে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক দুই শতাংশ। তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লোকেরাও বলেছেন, আমরা এখানে যেভাবে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা করছি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এভাবে করা হচ্ছে।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান উল্লেখ করে জানান, এ বছর বেশি আক্রান্ত হয়েছে পুরুষ। আক্রান্তদের ৬৩ শতাংশ পুরুষ ও ৩৭ শতাংশ নারী। আবার আক্রান্তদের ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত; ২৮ শতাংশ। এ বয়সী রোগীরা কর্মজীবী অথবা ছাত্র। আবার ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা ছিল ২১ শতাংশ। পেশাগত দিক থেকে দেখা গেছে, আক্রান্ত ৩৭ শতাংশ ছাত্র, ৩৭ শতাংশ চাকরিজীবী, ১৩ শতাংশ গৃহে কর্মরত, ৫ শতাংশ ব্যবসায়ী এবং অবশিষ্ট ৮ শতাংশ অন্যান্য পেশার। ১ মে থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ২৭ হাজার ৭৪২টি ডেঙ্গু পরীক্ষায় মাত্র চার হাজার ৯২০টি এনএসওয়ান পরীক্ষা পজিটিভ হয়েছে এবং ২২ হাজার ৮২২টি নেগেটিভ হয়েছে।
অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ঢাকার বাইরে এডিস অ্যালবুপিক্টাস মশা বেশি পাওয়া গেছে। অ্যালবুপিক্টাস কম কামড়ায়। অপর দিকে ঢাকার মধ্যে এডিস এজিপ্টাই বেশি। একটি এজিপ্টাই তার জীবদ্দশায় কম করে হলেও ১২ বার ডিম দেয়। একটি এজিপ্টাই একটি বাড়ির সবাইকে কামড়াতে পারে। অন্য দিকে এডিস অ্যালবোপিক্টাস একবারই কামড়ায়। এ মশা কামড়ালে মানুষ ব্যথা অনুভব করেন না। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, সাধারণ সম্পাদক নিখিল মানখিন।
এ দিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার ও বুধবারে দুই নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছেন। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুই নারী এবং মাদারীপুরের রাজৈর ও ঝিনাইদহের মহেশপুরে দুই ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
কুষ্টিয়া ও ভেড়ামারা সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মিনা খাতুন (২৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের কাজীহাটা গ্রামের রায়হান আলীর স্ত্রী। গত মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: নুরুল আমীন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার জাকির হোসাইন জানিয়েছেন, নিজ বাড়িতেই ডেঙ্গুজরে আক্রান্ত হয়ে মিনা খাতুন ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ভর্তি হন। তিন দিন পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এর আগে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জোসনা খাতুন নামে এক নারী আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কুষ্টিয়ায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮০৫ জন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, ডেঙ্গুজ্বরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রহিমা বেগম (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে খুলনায় ডেঙ্গুতে মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রহিমা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার আজরাইল গ্রামের রফিকুল ইসলাম মোড়লের স্ত্রী বলে জানা গেছে। খুমেক হাসপাতালের আরপি ডা: শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, গত সোমবার বিকেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার সকালে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিদ্দিকুর রহমান (৫৫) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি স্থানীয় কবিরাজপুর ইউনিয়নের দফাদারের (গ্রাম পুলিশ) চাকরি করতেন। তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর এলাকার কবিরাজপুর গ্রামে। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত সিদ্দিকুর রহমানকে সোমবার দুপুরে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকেলে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে মঙ্গলবার সকালেই তিনি মারা যান।
ফরিদপুর সিভিল সার্জন ডা: এনামুল হক জানান, ফরিদপুরে এ পর্যন্ত ২২২৩ জন ডেঙ্গু রোগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬৪২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, মারা গেছেন আটজন। এ ছাড়াও ৩৫ জন রোগী নতুন করে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে জেলায় ২৩০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুরে ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে ছিদ্দিকুর রহমান ছিদ্দিক (৩৫) মারা গেছেন। গত শনিবার ফতেপুর ইউনিয়নের যুগিহুদা গ্রামের হেকিম মুন্সীর ছেলে রাজমিস্ত্রি ছিদ্দিক জ্বরে আক্রান্ত হন। রোববার সকালে তাকে মহেশপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তারেরা সোমবার তাকে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখান থেকে ওই দিন রাতেই ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছানোর পর ছিদ্দিক মারা যান।
নতুন ডেঙ্গু রোগী ৬৩৪ জন : গতকাল নতুন করে আরো ৬৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এটা গত মঙ্গলবারের চেয়ে কিছুটা কম। মঙ্গলবার সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭৫৩ জন। বৃষ্টি হ্রাস পাওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
গতকাল দেশের অবশিষ্ট অঞ্চলের চেয়ে এককভাবে রাজধানীতে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ডেঙ্গুতে। রাজধানীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২১ জন। এর মধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৯ জন এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হন ৬২ জন। রাজধানী ঢাকার বাইরে সম্মিলিতভাবে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১৩। বিভাগীয় এলাকার হাসপাতালগুলোর মধ্যে এখনো ঢাকা ও খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। গতকাল ঢাকা বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ জন এবং খুলনা বিভাগে ছিল ১৩৮ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৫১, রাজশাহী বিভাগে ৪৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৬৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে সাতজন, রংপুরে ১২ জন এবং সিলেট বিভাগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে পাঁচজন। সারা দেশে চিকিৎসাধীন আছেন তিন হাজার ৩৭১ জন।
গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯ জন। এ ছাড়া মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩০ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে তিনজন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ জন, পুলিশ হাসপাতালে একজন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৫ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চারজন ভর্তি হয়েছেন।
এ ছাড়া রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে আদদীন হাসপাতালে সাতজন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনজন, কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে দুইজন, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে পাঁচজন, বারডেম হাসপাতালে তিনজন, স্কয়ার হাসপাতালে চারজন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে পাঁচজন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে তিনজন, সালাহউদ্দিন হাসপাতালে একজন, অ্যাপোলো হাসপাতালে দুইজন, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে একজন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সিরিয়ায় আইএস-এর হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা সদস্য নিহত ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের আওয়াজ নির্মমভাবে দমন করে : রিজভী সরিষাবাড়ীতে স্কুলছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি উজিরপুরে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কা, নিহত ১

সকল