২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিমানবন্দর সড়কের পাশে পুলিশের ডাম্পিং ব্যারাক

কাওলার বন্ধ রাস্তাটি খুলে দেয়ার দাবি সর্বসাধারণের
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি রাস্তা বন্ধ করে রাখা পুলিশের (ট্রাফিক) জব্দ করা গাড়ি : নূর হোসেন পিপুল -

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (শেপাং) ১২ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের দোকানপাট নেই। অনেকটা জনমানবশূন্য। কিন্তু এর পুরো উল্টো চিত্র বিরাজ করছে আমাদের রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রধান সড়কের আশপাশের এলাকায়। অভিযোগ রয়েছে, বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে দেশী-বিদেশী যাত্রীদের প্রধান সড়কের সামনে মহাভোগান্তিতে পড়তে হয়। গাড়ির জটে এমনিতেই মানুষ দিশেহারা, তার ওপর রাস্তার দু’পাশে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য দোকানপাট। রয়েছে ভাসমান হকারের উৎপাত। এরই মধ্যে আবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান সড়কের ঠিক উল্টো পাশের একটি সড়ক বন্ধ করে সেখানে জব্দ করা গাড়ি (ডাম্পিং ব্যারাক) রাখার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুুলিশ (ট্রাফিক উত্তর বিভাগ)।
দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছোট বড় গাড়িগুলো পড়ে থাকার কারণে ডাম্পিং ব্যারাকে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিয়েছে বলে স্থানীয় মানুষ আশঙ্কা করছে। তারা অবিলম্বে বিমানবন্দর গোলচত্বর থেকে কাওলা সড়কে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত গাড়িগুলো সরিয়ে আবারো রাস্তাটি সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে।
গতকাল সরকারি সফরে থাকা সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির একজন কর্মকর্তা নেপাল থেকে নয়া দিগন্তকে বলেন, এই সড়ক ব্যবহার করে আমরা সিভিল অ্যাভিয়েশনের স্টাফ কোয়ার্টারে নিরাপদে চলাচল করতাম। কিন্তু এখন ওই কাওলা সড়কটি ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে। সেখানে এখন শুনছি গাঁজাখোরদের আস্তানা হয়েছে। দেশের প্রধান বিমানবন্দর সড়কের পাশে এমন একটি গাড়ির ডাম্পিং ব্যারাক থাকাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি স্কুলের অভিভাবক শেখ ফজলুল হক নান্নু গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমানবন্দর গোলচত্বর (রেলক্রসিং) থেকে কাওলা স্টাফ কোয়ার্টার সড়কের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এই পথ দিয়ে আগে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যাওয়া-আসা করতে পারলেও এখন পারছে না।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুধু স্কুলের ছাত্রছাত্রী বা সর্বসাধারণের যাতায়াতের অসুবিধাই হচ্ছে না, বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা অর্ধশতাধিক বাস, মিনিবাস ও এর আশপাশে পানি জমে এডিস মশার লার্ভার জন্ম নিচ্ছে। মোট কথা এটি এখন মশার কারখানা হয়ে গেছে। সারাক্ষণ এ এলাকায় শুধু মশা ভন ভন করছে। স্থানীয়ভাবে ট্রাফিক বিভাগের পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ডিএমপিতে গাড়ি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নাই। তাই এই রাস্তাটিকে তারা আপাতত গাড়ি রাখার ডাম্পিং ব্যারাক বানিয়েছে।
এর আগে সরেজমিন রাস্তাটি পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, বিমানবন্দর গোলচত্বর থেকে কাওলা সড়কের দূরত্ব মাত্র ২০০ গজ দূর। আর যেখানে ডাম্পিং ব্যারাক সেই রাস্তার উল্টো পাশেই রয়েছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এরপাশেই রয়েছে বিমানবন্দরের ভিভিআইপি গেট। বিমানবন্দরের প্রধান গেটের উল্টোপাশের মসজিদের পাশের পুলিশ বক্সের সামনের রাস্তা দিয়েই চলে গেছে কাওলা সড়ক। যেখানে এখন টিএম পরিবহনের বাস, প্রাইভেট কার, মিনিবাস, সিএনজি, লেগুনা গাড়িগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। রয়েছে পুলিশের গাড়িও। ওই গাড়িগুলোর সামনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের একটি সাইনবোর্ড বসানো রয়েছে। লেখা আছে, ভেতরে যানবাহনে পরিপূর্ণ থাকায় রাস্তা বন্ধ। বিমানবন্দরে প্রবেশের জন্য ছাপরা মসজিদ রোড (সিভিল অ্যাভিয়েশন গেট) ব্যবহার করুন।
দুই সপ্তাহ আগে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক কনস্টেবল এ প্রতিবেদককে বলেন, এই সড়কে চলাচলকারী যেসব গাড়ির কাগজপত্র থাকে না সেসব গাড়ি আটক করে এখানে ডাম্পিং করা হয়। যারা কাগজ ঠিক করে আনছে সেগুলো ছেড়ে দেয়া হয়। রাস্তা বন্ধ করার কারণে সর্বসাধারণের অসুবিধা হচ্ছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই ট্রাফিক সদস্য বলেন, এখানে গাড়ি ডাম্পিং করার জন্য আমাদের স্যাররা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে আগেই অনুমতি নিয়েছেন। এ সময় পাশেই নারায়ণগঞ্জের গাড়ির জন্য অপেক্ষারত ছিলেন মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসা এক যাত্রী। তিনি তার স্বজনকে ডাম্পিং ব্যারাক দেখিয়ে বলছিলেন, মালয়েশিয়ার শেপাং বিমানবন্দরের ১২ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে কোনো দোকানপাট দেখি নাই। কিন্তু আমাদের বিমানবন্দরের গেট দিয়ে বের হওয়ার পর রাস্তা পার হতেই ভয় লেগেছে। আর একটা মাত্র ওভার ব্রিজ। যেটি দিয়ে পারাপার হতে অনেক ভোগান্তি হয়েছে। বিদেশগামী মানুষের চলাচলের জন্য এখানে আরো একটি ওভার ব্রিজ দ্রুত প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। এরপর তিনি বলেন, বিমানবন্দরের প্রধান সড়কের সামনে এত দোকানপাট। ভাসমান হকার। যা মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর এলাকায় ভাবাই যায় না। এসব আমাদের দেশের সরকারের এখনই ভাবা উচিত।
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা উত্তর ট্রাফিক বিভাগের ডিসি প্রবীরকুমার রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি। যার কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে গতকাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানার একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, এলাকাটি আমাদের হলেও ডাম্পিং ব্যারাকটি ট্রাফিক বিভাগের। তাদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement