২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৫৯৭

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯০ শতাংশ রোগী
হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী :নয়া দিগন্ত -

২৪ ঘণ্টায় আবারো ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৫৯৭ জন। তবে গত বুধবারের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য কমেছে। গত বুধবার সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক হাজার ৬২৬ জন। গতকাল রাজধানীর চেয়ে সম্মিলিতভাবে রাজধানীর বাইরের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা: সানিয়া তাহমিনা জানিয়েছেন, ‘ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ৯০ শতাংশ রোগী বর্তমানে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। বর্তমানে যত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু ভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৫৯৭ জন কিন্তু একই সময়ে সারা দেশে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৭২৮ জন। গতকাল রাজধানীতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৬১ এবং রাজধানীর বাইরে সারা দেশে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৩৬ জন।’
গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে ১১২ জন। এ ছাড়া মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০২ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৮ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৬০ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ জন, পুলিশ হাসপাতালে ১৮ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮৮ জন, কর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪৭ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৩ জন, বিজিবি হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। ঢাকার বাইরের ঢাকা বিভাগে ২৩৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৯, খুলনা বিভাগে ১৭৯, রাজশাহী বিভাগে ৭৩, রংপুর বিভাগে ৩৩, বরিশাল বিভাগে ১৩৭, সিলেট বিভাগে ২০ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: সাইফ উল্লা মুন্সি জানান, এডিস মশাই কেবল ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করতে পারে। অন্য কোনো মশা এ ভাইরাস বহনে সক্ষম নয়। ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করছে, এমন একটি মশা মানুষকে কামড়ালেই সে মানুষটি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষকে সাধারণ কোনো মশা কামড়ালে ওই মশা ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতে পারে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুসারে একটি পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ এডিস মশা ফুলের মধু খেতে পছন্দ করলেও স্ত্রী এডিস মশা মানুষ ও প্রাণীকে কামড়ে রক্ত খেতে পছন্দ করে ডিম ফোটানোর জন্য। রক্ত খাওয়ার পর স্ত্রী এডিস মশা পানি খুঁজে ডিম ছাড়ার জন্য। এডিস মশা মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। অন্য কথায় এ মশাকে ঘরকুনোও বলা চলে। এ ছাড়া এডিস মশা ডিম থেকে পূর্ণ বয়স্ক মশা হওয়া পর্যন্ত মাত্র ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। লার্ভা থেকে পিউপা (উড়তে সক্ষম হওয়ার আগের পর্যায়) থেকে পাঁচ দিন সময় লেগে যায়। এডিস মশার এই ছোট জীবনকালেই মানুষের সমূহ ক্ষতি করে যায়।
তেঁতুুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা জানান, তেঁতুলিয়ায় নতুন করে আরেকজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত রোগী ফাতেমা (২২) পেশায় একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের আজিজনগর গ্রামের ফরহাদ হোসেনের মেয়ে ফাতেমা ঢাকার মধ্য পীরেরবাগ, মিরপুর-২, মেডিহোম হাসপাতালে চাকরি করেন। বাড়িতে আসার পর ফাতেমা জ¦রে আক্রান্ত হলে গত বৃহস্পতিবার তেঁতুলিয়া হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার নিতে আসেন। সেখানে তার ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: মনোয়ারুল ইসলামের কাছে রেফার করেন। বর্তমানে ফাতেমা হাসপাতালের ডেঙ্গু ক্যাবিনে ভর্তি আছেন। এ নিয়ে তেঁতুলিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ঢাকা ফেরত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল তিনজনে। দুইজন ডেঙ্গুরোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ২৯২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো ভর্তি রয়েছে ৫২ জন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২০৫ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছে ৩৫ জনকে। আক্রান্তদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা: শেখ আবু শাহিন জানান, সাতক্ষীরায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সাতক্ষীরায় স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখা বেশি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগের ৬নং কক্ষে ডেঙ্গু কর্নার নামে একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলা হয়েছে।
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ২৫ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। জেলা সিভিল সার্জন ডা: মুজিবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৯২০ জন রোগী ভর্তি হলেও বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৩ জন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন ৮৪৭ জন।
সিভিল সার্জন আরো জানান, চিকিৎসাধীন রোগীর মধ্যে কেউ আশঙ্কাজনক নয়। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগী কুমিল্লায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়নি। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement