২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

৩ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

অসদাচরণের অভিযোগ
-

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগের তদন্ত শুরু হওয়ায় তাদেরকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এই তিন বিচারক হলেন, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক এবং বিচারপতি কাজী রেজাউল হক। রাষ্ট্রপতির সাথে পরামর্শক্রমে প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ওই তিন বিচারপতিকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। পরে তিন বিচারপতি ছুটির আবেদন করেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মো: সাইফুর রহমান।
সাইফুর রহমান বলেন, হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা তাদের অবহিত করা হয়েছে। দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের পর ওই তিন বিচারপতি ছুটি চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশিত কজ লিস্টেও (কার্যতালিকায়) নির্ধারিত বেঞ্চে তাদের নাম ছিল না।
এ দিকে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের অনুসন্ধান বিচার বিভাগের অন্যদের জন্য একটি বার্তা বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল বিকেলে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতিকে কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
আরো অনেক বিচারপতির বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে : সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক
অন্য দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, কেবল তিন বিচারপতিই নন, আরো অনেক বিচারপতির বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেছি।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে দুর্নীতি করেন। আইনজীবীরা তাদের কাছে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। তিনি বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করার বিষয়টিকে স্বাগত জানাই। তবে এ তদন্ত কারা করছে, তা স্পষ্ট করারও দাবি জানাচ্ছি।
বিচারপতিদের অসদাচরণের অভিযোগ তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আবারও পুনরুজ্জীবিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আবারও পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এখন এটির কার্যক্রম কী অবস্থায় রয়েছে আমরা জানি না। তাই এটি স্পষ্ট করা দরকার।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সাথে পরামর্শ করেই প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতিকে কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য থেকে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া তিন বিচারপতির বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির। রাষ্ট্রপতির সাথে প্রধান বিচারপতি আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আইনজীবীরা চান সব বিচারপতি বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকুক। আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় ও কলুষমুক্ত করতে বারের (আইনজীবী সমিতি) বেশির ভাগ সদস্য দাবি করে আসছিল।
অভিযোগ ওঠা ওই তিন বিচারপতির অনুসন্ধান কে কিভাবে পরিচালনা করবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধানের বিষয়ে ঠিক করবেন। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি বলেও জানান মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে সঠিক রাস্তায় রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে কলুষমুক্ত করতে যা যা করা দরকার তা তাদের করা উচিত। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ওঠা এই ধরনের অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ আরো অনেক আগেই নেয়া উচিত ছিল।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন তিনি নিজেই রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সাথেও আলোচনা করেছেন। তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জনসম্মুখে প্রকাশ করা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তির জন্য শুভ হবে না।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের অনুসন্ধান হবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) ফাইল করে রেখেছি। তবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকলেও প্রধান বিচারপতি তার জুনিয়র তিনজন বিচারপতিকে নিয়ে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতেন।
তবে আইনের ঊর্ধ্বে কোনো মন্ত্রী, বিচারপতি বা সাধারণ মানুষ থাকতে পারে না। এই পদক্ষেপের ফলে যারা নিজেদের সঠিক পথে পরিচালনা করছেন না তাদের কাছে একটি ইঙ্গিত (বার্তা) যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement