২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরো অবনতির আশঙ্কা

-

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা দুই বছরেও ন্যায়বিচার পায়নি। শরণার্থী হিসেবে তারা সংগ্রাম সুরক্ষা ও মর্যাদার জন্য চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনবিষয়ক সাম্প্রতিক খবরে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত। যেহেতু এ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত, তাই ভবিষ্যৎ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার সুরক্ষিত হয় না বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
গতকাল বুধবার সকালে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে কর্মরত ৬১টি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও এক যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায়। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যে অবস্থানকারী পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, কারণ সেখানে সঙ্ঘাত বেড়েই চলেছে।
চলতি সপ্তাহের মধ্যে আনুমানিক তিন হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাবাসনের সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ, স্বেচ্ছাকৃত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বানও জানায় এই ৬১টি এনজিও। কারণ রাখাইন রাজ্যে এখনো রোহিঙ্গাদের চলাচলের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার চর্চার ক্ষেত্রে কোনো অর্থপূর্ণ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বাস্তুচ্যুত কমিউনিটির সাথে আলোচনার পরিসরও খুবই সীমিত।
বৈষম্যমূলক নীতির কারণে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি পড়াশোনা, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবিকার অধিকারের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা আরো সীমিত করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার সদস্য রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন শিবিরে আটকা পড়ে আছে, তারা নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছে না। অন্য দিকে মানবাধিকার সংস্থাদের প্রবেশাধিকার সীমিত করে দেয়া হয়েছে। তাই রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের মানবাধিকার স্বীকৃতি দেয়া এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া এমনকি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত প্রদানসহ তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতেরও আহ্বান জানায় এনজিওগুলো।
সংস্থাগুলো মনে করে, রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সব সম্প্রদায় যাতে নিরাপদে থাকতে পারে এবং প্রাথমিক পরিষেবা ও জীবিকার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা উচিত মিয়ানমার সরকারের।
বর্তমান সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে কর্মরত এই ৬১টি এনজিও রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের সহায়তা এবং অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি কিছু বিষয়ে আহ্বান জানায়। এগুলো হচ্ছেÑ ১. রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণেরজন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ২. মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারকে সম্মান প্রদর্শন। ৩. শিক্ষা, জীবিকা ও সুরক্ষায় রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে সহায়তা করা। ৪. এ সমস্যার মধ্যম বা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বের করা।
দুই বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম এ শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী জনগণের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোকে সহায়তা করে আসছে এনজিওগুলো। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে, বর্ষার প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে এবং রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এতটুকুই যথেষ্ট নয়। রোহিঙ্গাদের জন্য আরো অনেক কিছু করা দরকার বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তাই তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো তহবিল বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছে; যাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে শরণার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জীবনমানের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement