২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডেঙ্গু নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে মন্ত্রী-এমপিরা

-

এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন মন্ত্রী-এমপিরা। প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশের মানুষ ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছেন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। ফলে এই এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু মোকাবেলায় অনেক মন্ত্রী-এমপি ও জনপ্রতিনিধির অবস্থা এখন বেগতিক। অনেক মন্ত্রী-এমপিদের ঘুম হারাম হলেও অনেকেই আবার গাছাড়া ভাব নিয়ে আছেন। তবে কোন কোন মন্ত্রণালয়, দফতর, সংস্থা ও ওয়ার্ড জোরালোভাবে কাজ করছেÑ সে বিষয়টি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকারপ্রধান খোঁজখবর নিচ্ছেন। আগামীতে দলীয় পদ-পদবি পাওয়ার ক্ষেত্রে, সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং মন্ত্রী সভায় সংযোজন-বিয়োজনের ক্ষেত্রে তাদের এই কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপের বিষয়টি সরকারপ্রধানের নজরে আসার সাথে সাথেই নেতাকর্মী ও মন্ত্রী-এমপিদের তিনি কঠোর নির্দেশ দেন। এরপরই নড়েচড়ে বসে দল ও সরকারের সব বিভাগ। গত ৮ আগস্ট লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেই সরকারপ্রধান ডেঙ্গুর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, গণভবনে নেমে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম কথা হচ্ছে ডেঙ্গু। কে কী করছে, কার কী বক্তব্য। যেকোনো মূল্যে প্রাণঘাতী এডিস মশা মোকাবেলা করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পরিসর বাড়াতে হবে। তিনি চিকিৎসার জন্য যখন লন্ডনে ছিলেন তখনো প্রতিদিন ফোন করে করে খোঁজ রাখছিলেন। তার নির্দেশনা জানাচ্ছিলেন। সরকার, দুই সিটি করপোরেশন এবং আমরা কেউ-ই ডেঙ্গুকে হালকাভাবে নেইনি। চিকিৎসকদের দিয়ে আমরা একটি মনিটরিং সেল করেছি। ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের পাশে আমরা আছি ২৪ ঘণ্টা। এগুলো আমরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি বলেন, ঢাকা সিটিতে প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা যতই মুখে নিয়ন্ত্রণের কথা বলি না কেন, পরিস্থিতি এখনো এটা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বাস্তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ডেঙ্গু মোকাবেলা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। ফলে কমিটমেন্টের জায়গা থেকে শেখ হাসিনার নির্দেশ মেনে কাজ করতে হবে। যারা কাজ করছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই, আর এই ধন্যবাদ অব্যাহত থাকবে। যারা করেননি নেত্রী বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের ভাষ্য মতে, এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু শুরুতেই হালকাভাবে নেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দায়সারা বক্তব্য দিয়েও কেউ কেউ পার পাওয়ার চেষ্টা করেন। যার ফলে দেশের মানুষের মধ্যে যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তেমনি এডিস নিধন ও ডেঙ্গু রোগ মোকাবেলা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এখনো পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া সংশ্লিষ্টরা কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সভা-সেমিনার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুরুর দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দেয়ায় দেশের মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেন। যদিও এখন তিনি সভা-সেমিনার নিয়ে জোরালোভাবে তৎপর রয়েছেন। তবে তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ধারেকাছে নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, মশার উৎসস্থল ধ্বংসে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম চালানোর ফলে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব ও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে এ অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি সব সংস্থা ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করছে। আশা করা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক বিশ্বের মধ্যে ব্রাজিলে এডিস মশার প্রকোপ অনেক বেশি। তাদের সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। ডেঙ্গুকে মহামারি ঘোষণা করে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছর হেলিকপ্টার দিয়ে এডিস মশার বিস্তার রোধ ও এডিস মশা ধ্বংস করার জন্য কার্যকর ওষুধ ছিটানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর ও সংস্থাগুলো দায়সারা বক্তব্য দিয়ে সভা সেমিনার করে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মনে করছে, কোনোমতে টেনেটুনে সেপ্টেম্বর মাস পেরোলেই এডিস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আসলে এ ধারণা নিয়ে বসে থাকলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এডিস মশার লার্ভা এক বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে। এখনই ওই লার্ভা ধ্বংস না করলে এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। জঙ্গি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সফল হয়েছি। ডেঙ্গু মোকাবেলায়ও আমরা সফল হবো। তিনি বলেন, মশা নিধনে স্থানীয় সরকার বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগÑ নিয়ন্ত্রণ সেল, ওয়ার্ডভিত্তিক তদারকি কর্মকর্তা, কীটনাশক ক্রয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। মশক নিধন অভিযান যথাযথ বাস্তবায়ন, সমন্বয় সাধন ও নিবিড় তদারকির জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে ১২৯ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগও মশক নিধন ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিতকরণে সাত সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করেছে। দেশব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম তদারকি আরো কার্যকর করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগে গত ১৬ জুলাই থেকে একটি নিয়ন্ত্রণ সেল খোলা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement