২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চার আসামি এখনো অধরা ২২ আগস্ট চার্জশিট

-

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হচ্ছে রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, চন্দন সরকার, রাব্বি আকন, হাসান, অলি, টিকটক হৃদয়, সাগর, কামরুল ইসলাম সাইমুন, আরিয়ান শ্রাবণ, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, তানভীর, নাজমুল হাসান, রাতুল সিকদার ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। এদের মধ্যে রাতুল শিকদারের বয়স কম হওয়ায় সে যশোরে শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে রয়েছে। এদিকে আগামী ২২ আগস্ট আলোচিত এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ নম্বর আসামি মুসা বন্ড, সাত নম্বর আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, আট নম্বর আসামি রায়হান ও ১০ নম্বর আসামি রিফাত হাওলাদারকে এখনো পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।
অপর দিকে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির কথোপকথনসহ ম্যাসেজ আদান-প্রদানের তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মূলত প্রযুক্তির কারণেই রিফাত হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলায় প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হয়েছে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
বরগুনা জেলা পুলিশের এক সদস্য জানান, নয়ন বন্ডের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল ফোন নম্বরটি গোপনে ব্যবহার করত মিন্নি। নয়ন বন্ডই এ সিমটি মিন্নিকে দিয়েছিল। রিফাত শরীফের সাথে বিয়ের পরও নয়নের সাথে যোগাযোগ রাখাসহ নানা কারণে গোপনীয়তা বজায় রাখতে ওই সিমটি মিন্নি গোপনে ব্যবহার করত। এ ছাড়া আরো কয়েকটি নম্বর দিয়েও নয়নের সাথে কথা বলত মিন্নি। হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল ৯টা আট মিনিটের সময় এই নম্বর দিয়ে নয়ন বন্ডকে কল দিয়ে ছয় সেকেন্ড কথা বলে মিন্নি। এরপর আবার সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটের সময়ও নয়ন বন্ডের দেয়া ওই নম্বরটি দিয়েই আবারো নয়ন বন্ডকে কল দেয় মিন্নি। এ সময় নয়ন বন্ডের সাথে ৩৫ সেকেন্ড কথা বলে মিন্নি। এরপর ৯টা ৫৮ মিনিটের সময় নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে থাকা ওই নম্বরটিতে কল দেয়। এ সময় মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কথোপকথন হয় ৪০ সেকেন্ড। এরপর সকাল সোয়া ১০টার দিকে কলেজের সামনেই রিফাত শরীফের ওপর হামলা করে বন্ড বাহিনী। হামলার পর বেলা ১১টা ৩১ মিনিটের সময় নয়ন বন্ড মিন্নিকে একটি এসএমএস পাঠায়। এরপর আবার বেলা ৩টার সময় মিন্নিকে কল দিয়ে মিন্নির সাথে এক মিনিট ২০ সেকেন্ড কথা বলে নয়ন বন্ড। তদন্তের জন্য মিন্নি ও নয়ন বন্ডের ব্যবহৃত নম্বরের কললিস্ট ও এসএমএস কন্টেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এরপর এগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, রিফাত শরীফ মারা যাওয়ার পর নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে একটি এসএমএস পাঠায়। বিকেল ৪টার কিছু সময় আগে পাঠানো ওই এসএমএসটিতে লেখা ছিল, ‘আমারে আমার বাপেই জন্ম দেছে।’
মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেয়া সেই পুলিশ সদস্য আরো বলেন, নয়ন বন্ডের এমন এসএমএস পাঠানোর রহস্য উদঘাটনে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আমরা মিন্নির সাথে কথা বলেছি। তখন মিন্নি এ বিষয়ে আমাদের বলেছে, রিফাত শরীফকে মারার পরিকল্পনার সময় মিন্নি নয়ন বন্ডকে বলেছিল, তুমি যদি রিফাত শরীফকে মারতে পারো, তাহলে বুঝব তোমারে তোমার বাপেই জন্ম দিছে।
মূলত মিন্নির এমন কথার উত্তর দিতেই রিফাতের মৃত্যুর পর নয়ন বন্ড মিন্নিকে ওই এসএমএসটি পাঠায়। এ বিষয়টি আদালতে মিন্নি বলবে বলে পুলিশকে জানালেও আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ার সময় এই কথা লুকিয়ে যায় মিন্নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের এক সাক্ষী বলেন, নয়ন বন্ডের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল নম্বরটি একসময় নয়ন বন্ড নিজেও ব্যবহার করত। পরে ওই নম্বরটি পরিবর্তন করে নয়ন বন্ড। মিন্নি মাদকাসক্ত ছিল। এ কারণেই সে নয়নের সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখত। আর এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাত নয়ন বন্ড। রিফাত শরীফের মাধ্যমেই মিন্নির সাথে নয়ন বন্ডের পরিচয় হয়। নয়ন বন্ড ও মিন্নি উভয়ই মাদকসেবী হওয়ায় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হতে সময় লাগেনি।
এদিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং হাইকোর্টেও মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে। কিন্তু কোনো আদালতই জামিন মঞ্জুর করেননি মিন্নির। মিন্নির প্রতিটি জামিন শুনানিতেই বাদি ও রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করেছেন মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কথোপকথন ও ম্যাসেজ আদান-প্রদান সংক্রান্ত কললিস্ট ও হত্যাকাণ্ডের সময় সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ। এ ছাড়াও এ হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজি, তিন নম্বর আসামি রিশান ফরাজি, ছয় নম্বর আসামি রাব্বি আকন এবং ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এ ছাড়া মিন্নি নিজেও রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা আদালতের মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তাফা কাদের বলেন, গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন শুনানির সময় বাদি ও রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কথোপকথন ও ম্যাসেজ আদান-প্রদান সংক্রান্ত কললিস্ট উপস্থাপন করেছিল এবং আদালত তা আমলেও নিয়েছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার ওসি (তদন্ত) মো: হুমায়ুন কবির জানান, অভিযোগপত্র জমা দেয়ার জন্য গত বুধবার (১৪ আগস্ট) দিন ধার্য ছিল, প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারায় তিনি আদালতে তা দাখিল করতে পারেননি। তবে পরবর্তী তারিখ ২২ আগস্ট দাখিল করতে পারবেন বলে জানান।
মিন্নির পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল বুধবার। রিফাত হত্যার সাথে জড়িত আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করলেও বিচারক তা গ্রহণ করলে সেটিই চার্জশিট হিসেবে গণ্য হবে।
উল্লেখ্য গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেয়ার পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদি হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৮ এপ্রিল খুলে দেয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস চলবে শনিবারও মিরসরাইয়ে জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে লুট, মূল হোতা গ্রেফতার বৃষ্টি কামনায় ঈশ্বরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইসতিসকার নামাজ আদায় কুবিতে আল্টিমেটামের পর ভিসির কার্যালয়ে তালা ঝুলাল শিক্ষক সমিতি সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ শ্রমিক নিহতের খবরে ঈশ্বরগঞ্জে শোক দুর্যোগে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু কেন বাংলাদেশে?

সকল