২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টেলিটকের প্রশাসনিক ব্যয় মাসে ১১ কোটি টাকা

-

উন্নয়ন প্রকল্পের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে প্রশাসনিক ব্যয়, পরামর্শক ব্যয়, ট্যুর, গাড়ি কেনা, জ্বালানি খরচ, বিভিন্ন ধরনের সম্মানিতে। আর এসব ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলেই প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেশি হচ্ছে। সরকারি বিধান থাকলেও টেলিটকের সোয়া তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পেই প্রতি মাসে প্রশাসনিক ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা। আর প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি ব্যয় হবে মাসে ১৬ লাখ টাকা। আর প্রতিটি মোটরযানের দাম ধরা হয়েছে ৬০ লাখ ২২ হাজার টাকার বেশি। তবে এই প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি রয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত। আর এই বঞ্চিতদের হার গ্রাম পর্যায়ে বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্রয়ক্ষমতা অনেকাংশে কম। বেসরকারি মালিকানাধীন অন্যান্য মোবাইল অপারেটররা এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যবসায়িক ও মুনাফার বিবেচনায় নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে মোবাইল ব্রডব্র্যান্ড সেবা প্রদান করতে অনেকেই অনিচ্ছুক। ফলে গ্রামপর্যায়ে গ্রাহকেরা শহরের মতো অত্যাধুনিক মোবাইল ব্রডব্র্যান্ড সেবা থেকে বঞ্চিত। আর এ কারণে জনসাধারণের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগের অসম বণ্টন সৃষ্টির মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। তাই গ্রামে সবার মাঝে প্রাথমিকভাবে ফোরজি ও পরে ফাইভ-জি পৌঁছে দিতেই এই প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হচ্ছে ৯ হাজার ৪১০ সেট টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম কেনা, তিন হাজার বিটিএস সাইট নির্মাণ, ট্রান্সমিশন হাবের জন্য ১০০ সাইট প্রস্তুতকরণ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেনা, কাস্টমার কেয়ার ৩০ সাইট ও আসবাবপত্র কেনা। সরকার ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী আগামী ২০২১-২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ফাইভ-জি প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ।
বর্তমানে টেলিটকের ভয়েস ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের কাভারেজ অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় সীমিত। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে কভারেজ খুবই কম। টেলিটকের মোট টাওয়ার বা সাইট সংখ্যা সাড়ে চার হাজারটি। এর মধ্যে টু-জি বিটিএস যন্ত্রপাতি হলো সাড়ে চার হাজারটি, থ্রি-জি বিটিএস তিন হাজার ৬২টি এবং ফোর-জি বিটিএস এক হাজার ১০০টি। এই টাওয়ার ও টেলিকম যন্ত্রপাতির সংখ্যা অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় নিতান্তই কম।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পটি ৩৬ মাস বা তিন অর্থবছরে বাস্তবায়ন করা হবে। এই ৩৬ মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য জিওবি খাত থেকে মোট ৩৮৬ কোটি আট লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ফলে প্রতি মাসে শুধু প্রশাসনিক খাতে ব্যয় হবে ১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এই ব্যয়ের যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। অন্য দিকে পেট্রল, অয়েলসহ জ্বালানি খাতে ৩৬ মাসে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে এই প্রকল্পে শুধু জ্বালানি খাতেই খরচ করতে হবে ১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২৭টি মোটরযান কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। মুদ্রণ ও মনিহারিতে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এখানে প্রতি মাসে ব্যয় হবে ২১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। মেরামতে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ছয় কোটি ৪৭ লাখ ২১ হাজার টাকা। এখানে মাসে ব্যয় হবে ১৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
এ দিকে টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামাদি কেনার জন্য দুই হাজার ৩০৫ কোটি আট লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদিত কোনো শিডিউল অব রেইটস না থাকায় এসব যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশন ও ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি কিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, তা সুস্পষ্ট নয়।
পরিকল্পনা বিভাগের অক্টোবর-২০১৬ জারিকৃত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ-৪ অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রাক্কলিত ব্যয় সম্পন্ন সব বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করার শর্ত রয়েছে। টেলিটকের প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট ব্যয় তিন হাজার ২৮২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হলেও কোনো ফিজিবিলিট স্ট্যাডি সম্পন্ন করা হয়নি। প্রকল্পটির কার্যপরিধি দেশব্যাপী হওয়ায় এবং টেলিযোগাযোগ খাতের অন্যান্য বেসরকারি মোবাইল অপারেটর থাকায় এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বেসরকারি অপারেটরদের মার্কেট শেয়ার ৯০ শতাংশের বেশি।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি উইং বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও পরিকল্পনা বিভাগের পরিপত্রের অনুচ্ছেদ-৯ ও ১০ এর শর্তানুযায়ী অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করেনি। কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি তিন হাজার ২৮২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। চায়না এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় দুই হাজার ৮০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গত ২০১৫ সালের জুনে একটি প্রকল্প সমাপ্ত করা হয়। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে টেলিটকের সেবার মান ও সক্ষমতা কী পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তার বিবরণ সংযুক্ত হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement
হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল

সকল