২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাবুলে বিয়ের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা: নিহত ৬৩ আহত ১৮২

-

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় অন্তত ৬৩ জনের মৃত্যু এবং অপর ১৮২ জন আহত হয়েছে। শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে কাবুলের পশ্চিমে শিয়া অধ্যুষিত একটি এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানটি চলছিল। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি হ্রাসের ব্যাপারে ওয়াশিংটন ও তালেবানের সমঝোতা চূড়ান্ত হওয়ার প্রাক্কালে এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটল। তালেবান বলেছে, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসরাত রাহিমী বলেছেন, বিয়ে বাড়িতে আমন্ত্রিত অতিথি সমাগমের ভেতর বিস্ফোরণ ঘটায় হামলাকারী। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কাবুলে বোমা হামলায় এটিই সবচেয়ে বড় হতাহতের ঘটনা। তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। আফগানিস্তানে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো জমজমাট আয়োজনের হয়, এতে বিপুল লোক সমাগম ঘটে। অনুষ্ঠানে পুরুষদের থেকে এবং নারী ও শিশুদের আসন আলাদা থাকে।
বিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া মোহাম্মদ ফারাজ জানান, তিনি যখন মহিলাদের সেকশনে ছিলেন তখন পুরুষদের এলাকায় বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। এ সময় সবাই চিৎকার করে অনুষ্ঠানস্থল থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। প্রায় ২০ মিনিট হল ধোঁয়ায় ঢেকে ছিল। বোমা বিস্ফোরণের দুই ঘণ্টা পর সেখান থেকে লাশ বের করে আনা হয়। পুরুষদের সেকশনের সবাই নিহত অথবা আহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ভয়াবহ ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো গোষ্ঠী। তবে সরকার এ হামলার জন্য আফগান তালেবানকে দায়ী করছে। কিন্তু তালেবানের পক্ষ থেকে সরকারের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে, হামলার সঙ্গে কোনোভাবে তারা যুক্ত নয়। হামলার প্রত্যক্ষদর্শী গুল মোহাম্মদ বলেন, বিয়ে বাড়িতে গায়কদের জন্য তৈরি একটি মঞ্চের পাশেই বোমা বিস্ফোরিত হয়। হামলায় নিহতদের মধ্যে নারী-শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন। হামলায় আহতদের একজন মোহাম্মদ তুফান বলেন, ‘বহু অতিথি নিহত হয়েছেন।’
গত ৩১ জুলাই আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় ফারাহ প্রদেশে রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ৩৪ বাসযাত্রী নিহত হয়। বালা বুলুক জেলার কান্দাহার-হেরাত মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় ১৭ জন। এ ছাড়া গত ৭ জুলাই আফগানিস্তানে গোয়েন্দা বাহিনীর একটি কার্যালয়ে গাড়িবোমা হামলার ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়। এর মধ্যে আটজনই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং বাকি চারজন বেসামরিক।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে দেয়া হবে না : তালেবান
এদিকে তালেবান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, আগামী মাসে সে দেশে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা হবে দেশটিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার শামিল। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক দফতরের মুখপাত্র সোহেল শাহিন শনিবার বলেছেন, আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা যখন আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তখন সে দেশে নির্বাচন হলে তা হবে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর। তালেবান আলোচনার মাধ্যমে আফগান সঙ্কটের সমাধান করতে চায় বলে জানান শাহিন। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সৈন্য প্রত্যাহারের চুক্তি করার পর আফগান পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে তালেবান। সে আলোচনায় আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো নির্ধারণ করা হবে বলে শাহিন জানান। আফগানিস্তানের তালেবান কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তারা কাবুল সরকারের সঙ্গে যেকোনো রকমের সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। আফগান সরকার তাকে পাশ কাটিয়ে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান আলোচনাকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement