২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তিল ধারণের ঠাঁই নেই

-

বাস-ট্রেন-লঞ্চে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত বাসের দেখা মিলছে না। রাস্তায় ধীরগতি। সব মিলিয়ে নানা ঝক্কি-ঝামেলা। তার পরও নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। গতকালও রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। এক দিকে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ, রাজধানী ফাঁকা হচ্ছে; অন্য দিকে সড়ক মহাসড়কে বাড়ছে ভিড়।
গতকাল রাজধানীর বাস টার্মিনাল, লঞ্চ স্টেশন ও রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় ঘরমুখো মানুষের তৃতীয় দিনের মতো উপচে পড়া ভিড়। ভেতরে জায়গা না হওয়ায় অনেকে চড়েছেন গাড়ির ছাদে। বিশেষ করে লঞ্চ ও ট্রেনের ছাদে তীর ধারণেরও কোনো ঠাঁই ছিল না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব যাত্রীকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। আজ সকালেও এমন ভিড় হবে রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে।
রাজধানী ফাঁকা : গত তিন দিনে রাজধানী বেশ ফাঁকা হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা। গতকাল রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা বেশ ফাঁকা লক্ষ করা যায়। সাধারণত গরুর হাট ও বিপণিবিতানগুলো কেন্দ্রিক কিছুটা ভিড় লক্ষ করা গেছে।
মহাসড়কে ধীরগতি, ফেরিঘাটে দীর্ঘ জট : এক দিকে ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী, অন্য দিকে মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে মহাবিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সকাল থেকেই দেখা যায় রাজধানীর বের হওয়ার পথগুলোতে তীব্র যানজট। গাবতলী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় তীব্র জট ছিল সকাল থেকেই। এ ছাড়া ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের বেশ কিছু এলাকায় যানজট ছিল। কোনো কোনো রাস্তায় যানবাহনের ধীর গতির কারণে যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। গতকাল সকাল থেকে শত শত যানবাহন জড়ো হয় শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। সূত্র জানায়, গতকাল দিনভর ফেরিঘাটগুলোতে তীব্র জট ছিল। ফেরিঘাটগুলোতে সিরিয়াল ভেঙে যানবাহন পারাপারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘাট নিয়ন্ত্রকেরা টাকার বিনিময়ে যানবাহন ফেরিতে তুলছে বলে অভিযোগ। এ দিকে ঘাটগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী একজন জানিয়েছেন, টাকা না দিলে গাড়ির সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না ঘাটে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় : অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অব্যাহত রয়েছে। এমন কোনো পরিবহন নেই যে পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে না। কোনো কোনো পরিবহনে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় হচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। এমনকি বিমানেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ মিলেছে।
লঞ্চ ও ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় : লঞ্চ ও ট্রেনে গতকাল উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী এবং ছাদে চড়া যাত্রীদের সংখ্যাই বেশি। কোনো রকমে মানুষ ট্রেনে উঠছেন। নারী ও শিশুদেরকে নিয়ে ট্রেনে উঠতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগেভাগে যারা টিকিট কেটেছেন তাদের অনেকেই সিটে বসতে পারেননি বলেও অভিযোগ মিলেছে। ভেতরে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার যাত্রী ট্রেনের ছাদে চড়ে ছুটছেন বাড়িতে। ছাদে উঠতে গিয়ে অনেক যাত্রীকে আহত হতেও দেখা গেছে। এমনকি নারী যাত্রীদেরকেও ট্রেনের ছাদে চড়তে দেখা যায়। লালমনিরহাটগামী এক যাত্রী বলেন, টিকিট নেই কোথাও। বাধ্য হয়ে তারা ট্রেনের ছাদে চড়ছেন।
লঞ্চেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া নিষেধ থাকলেও প্রতিটি লঞ্চেই দেখা গেছে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে। লঞ্চগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে।
অনেকে ছুটছেন বিকল্প পথে : লঞ্চ, বাস ও ট্রেনে জায়গা না পেয়ে অনেকেই ছুটছেন বিকল্প পথে। কেউ খোলা ট্রাকে, আবার কেউ কেউ মাইক্রো বাস বা মিনি বাস ভাড়া করে। এভাবে যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও অনেকেই বলেছেন তাদের কোনো উপায় নেই। মালবাহী ট্রাকের ওপরে অনেকে সওয়ার হচ্ছেন। যেসব ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছে; সেসব ট্রাকে এখন মানুষ বাড়ি ফিরছে। অনেকে ছোট ছোট পিকআপ ভাড়া করে বাড়ি যাচ্ছেন।
রাজধানীর বাসগুলো মহাসড়কে : রাজধানীর অনেক ছোট ছোট বাস এখন মহাসড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর বেশির ভাগ বাসই মহাসড়কে চলাচলের উপযুক্ত নয়। এই বাসগুলোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ময়মনসিংহে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, রাজধানী থেকে নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। পরিবহন সঙ্কট ও দুই-তিনগুণ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তীব্র যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছে। কষ্টের যাত্রায় রাজধানী থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর, শেরপুর, হালুয়াঘাট, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ময়মনসিংহেও পরিবহন সঙ্কটের কারণে দুই থেকে চারগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। নিরুপায় যাত্রীরা বাস-ট্রাক অথবা সিএনজি-অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে ছুটছেন। যানজট নিয়ন্ত্রণে ময়মনসিংহের পুলিশ প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেয়ায় গতবারের চেয়ে কিছুটা হলেও ভোগান্তি কমেছে। তবে ঢাকা থেকে শেরপুর, নেত্রকোনা, হালুয়াঘাট, জামালপুর, কিশোরগঞ্জসহ দূর-দূরান্তের যাত্রীরা সরাসরি গন্তব্যে না গিয়ে ময়মনসিংহ যাত্রা বিরতি দিয়ে যাচ্ছেন তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
ঢাকা থেকে দুই তিনগুণ ভাড়ায় ময়মনসিংহ এসে বাইপাস থেকে পাটগুদাম ব্রিজ বা টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড অথবা ফুলবাড়ীয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে রিকশা অথবা অটোরিকশায় তিন থেকে চারগুণ বেশি ভাড়ায় পৌঁছতে হচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা জানান, পরিবহন স্বল্পতা থাকলেও ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করছেন না। ময়মনসিংহের পরিবহন সম্পর্কে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ দিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে মোহনগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও তারাকান্দি চলাচলকারী প্রতিটি ট্রেনের ছাদেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ট্রেনের ভেতরেও উপচেপড়া ভিড়।


আরো সংবাদ



premium cement