২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সামাজিক অস্থিরতা উঠেছে চরমে

ত্রাণের জন্য বন্যার্তদের হাহাকার; ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যর্থতা; শেয়ারবাজারে অশুভ খেলা; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবন বিষিয়ে তুলছে
-

হঠাৎ করেই সামাজিক অস্থিরতা চরমে উঠেছে। চার দিকে বিরাজ করছে এক অসহিষ্ণু পরিবেশ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ‘ছেলে ধরা’ সন্দেহে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অব্যাহতভাবে চলছে গণপিটুনি। বুঝে না বুঝেই আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বেড়েছে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ। থেমে নেই শিশু নির্যাতন। খুনের ঘটনাগুলোতে ফুটে উঠছে চরম নৃশংসতা। এসবের পাশাপাশি দেশের প্রায় অর্ধেক জেলায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের ব্যর্থতা, শেয়ারবাজারে অশুভ খেলা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবন অনেকটা বিষিয়ে তুলেছে।
‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ এমন একটি নিছক গুজবের ওপর ভর করে মাসখানেক ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হচ্ছেন নিরীহ নারী-পুরুষ। আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ীÑ এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩৬ জন এবং গত এক সপ্তাহে অন্তত সাতজন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত শনিবার সকালে উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাসলিমা বেগম রেনু নামে এক মাকে একদল উন্মত্ত লোকেরা পিটিয়ে মারার দৃশ্য সবাইকে নাড়া দিয়েছে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে রেনুর রক্তমাখা অসহায় মুখখানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বর্বরতার প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিয়েছে। নৃশংসতার কোনো প্রতিবাদ না করে উৎসুক জনতার ভিডিও ধারণের ঘটনাও মনুষত্ব বোধের বড় অবক্ষয় হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।
রেনুর ভাই আয়মান সুমন বোনের এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে আবেগতাড়িত একটি পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টের শেষ দিকে তিনি লিখেছেনÑ ‘দুটি হাত চারটি হাত লাঠি হাতে ক্রমাগত পিটিয়ে পিটিয়ে শেষ করে দিলোÑ শুধু রেনুর জীবনটা নয়, তার সব স্বপ্ন, তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। আমার বোন রেনুর হত্যার ভিডিওটি যারা করেছেন, যারা দেখেছেন, তাদের সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনারা সবাই অনেক গোছানো মানুষ। পরিপাটি ফিটফাট, নিরাপদ। রেনু, বোনটা আমার যদি এর ছিঁটেফোটাও স্মার্ট হতো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে গণপিটুনির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেয়া হলেও তা যথাযথভাবে কাজে আসছে না। পত্রিকার খবর অনুযায়ীÑ গত সোমবার এক দিনে ছেলে ধরা সন্দেহে বিভিন্ন স্থানে ২৩ জন গণপিটুনির শিকার হয়েছে। ছেলে ধরা গুজবের ফলে সৃষ্ট এসব ঘটনা মানুষের স্বাভাবিক পারিবারিক জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মা-বাবারা সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগে রয়েছেন। স্কুলে সন্তানদের পাঠাতেও অনেকে ভয় পাচ্ছেন। সন্তানদের চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেন না কেউই।
সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে গেছে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতন। আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী-২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৬৩০টি। এদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮ বছর বা তার চেয়ে নিচে। আর ধর্ষণ ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার কারণে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে ২১টি। ধর্ষণের শিকার সবচেয়ে বেশি হয়েছে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু। আসকের হিসাবে ২৫৮টি শিশু গত ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০১৮ সালে এ ঘটনা ছিল ২৭১টি। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের হিসাবে গত ছয় মাসে শিশু ধর্ষণের ঘটনা আরো বেশি। মাসে গড়ে প্রায় ৮৩টি।
ধর্ষণ, গণপিটুনির মতো হত্যাকাণ্ডও লেগেই আছে। তুচ্ছ, সাধারণ ঘটনায়ও মানুষের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা এগুলোকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে অভিহিত করছেন। এসবের পাশাপাশি বন্যায় প্লাবিত এখন দেশের ২৫টির বেশি জেলা। পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী-বন্যায় এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৩টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এক লাখ ৯০০ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট ও পানিবাহিত নানা রোগ। বানভাসি মানুষ পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা পাচ্ছেন না বলে প্রতিদিন অভিযোগ আসছে। ফলে বন্যার্তদের মধ্যে চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার।
বন্যার অজুহাতে বেড়ে গেছে দ্রব্যমূল্য। বাজারে পর্যাপ্ত সবজির জোগান থাকলেও দাম নাগালের বাইরে। মাছের বাজারে আগুন। গরিবের মাছ পাঙ্গাস, তেলাপিয়ার কেজিও ৩০০র ঘরে। অন্যসব মাছের দাম শুনেই চোখ ছানাবড়া করে ঘরে ফিরছেন সাধারণ মানুষ।
এ দিকে প্রাণঘাতী চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মশাবাহিত এ রোগ প্রতিরোধে সরকার শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে স্বয়ং আদালত মতামত দিয়েছেন। হাসপাতালগুলো রোগীতে সয়লাব। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখেরও বেশি। ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। তাদের মধ্যে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন মো: শাহাদাত হাজরাও রয়েছেন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের ফলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশা নিধন অভিযান প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
শেয়ারবাজারে চলছে অশুভ খেলা। সূচক অব্যাহতভাবে নি¤œমুখী। গত ১৫ দিনে ২৭ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এতে করে ২০১০ সালের পর ফের বড় ধরনের লোকসানের মুখোমুখি বিনিয়োগকারীরা। অনেকে ইতোমধ্যেই পথে বসেছেন। এ রকম চতুর্মুখী ত্রাহি অবস্থায় পড়ে ভুক্তভোগীদের দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তায়। তারা এ অবস্থা থেকে মুক্তির প্রহর গুনছেন।
সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছেন এভাবেÑ ‘ভালো মন্দ মিলিয়ে চলছে দেশ। তবে মন্দের কর্তৃত্বই বেশি। বাংলাদেশ পরিণত হচ্ছে ধর্ষণের দেশে। মাদকাসক্তি, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে, বাড়ছে। বিনাবিচারে সন্দেহভাজনদের হত্যা বেড়ে চলেছে। সরকারি দলের অনেক লোকের ও পুলিশের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিচারব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রশাসন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রীয় সব ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত। শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্র ও জাতি গঠনের পরিপন্থী। রাজনীতি ভীষণভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত।’


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল