১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রিফাত হত্যা

মিন্নির জবানবন্দী প্রত্যাহার আবেদন নামঞ্জুর

-

রিফাত শরীফ হত্যার প্রধান সাক্ষী ও পরে হত্যা মামলার আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির দুইটি আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টায় বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো: সিরাজুল ইসলাম গাজী তার আবেদন দু’টি প্রত্যাখ্যান করেন।
আদালতের বিচারক মো: সিরাজুল ইসলাম গাজী এজলাসে বসে আবেদনের ব্যাপারে বলেন, মিন্নির জবানবন্দী বাতিলের আবেদন করতে হলে জেলারের কাছে থেকে কাগজপত্র আদালতে আসতে হবে। তা ছাড়া মিন্নির চিকিৎসার বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
মিন্নির আইনজীবী ও বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম জানান, মিন্নির জবানবন্দী জোর করে নিয়েছে পুলিশ এবং তিনি খুব অসুস্থ থাকায় তার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হচ্ছে না মর্মে দু’টি আবেদন করা হয়। আবেদন দু’টি আদালত নামঞ্জুর করেছেন। আদালত যেভাবে বলছেন আমরা সেভাবেই সামনে এগোচ্ছি।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে ১৯ জুলাই বিকেল ৫টায় বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
গত শুক্রবার এ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো: হুমায়ুন কবির জানিয়েছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিন্নিকে আদালতে তোলা হয়। সেখানে রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে মিন্নি জবানবন্দী দেন।
এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৩ জন রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। এ ছাড়া এ মামলার দুইজন এখনো রিমান্ডে রয়েছেন।
বন্ধু হেলালের মোবাইল আলোচনায় : দেশব্যাপী আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দু’দিন আগে হেলাল নামের এক বন্ধুর মোবাইল ফোন নিয়েছিলেন রিফাত। তবে কি কারণে বা কেন হেলালের মোবাইল ফোন রিফাত নিয়েছিলেন তা জানাতে পারেননি হেলালের বোন পারুল বেগম ও স্ত্রী মনিকা বেগম।
তবে এরই মধ্যে রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন হেলাল। এ কারণে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।
এসব বিষয়ে প্রথমে কথা হয় হেলালের স্ত্রী মনিকা বেগমের সাথে। এরপর যুক্ত হন হেলালের বড় বোন পারুল বেগম। পারুল বেগম বলেন, অসুস্থতার কারণে গত ২৪ জুন আমি হেলালকে সাথে নিয়ে আমার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার জন্য বাজারে যাই। বাজারের মিষ্টিপট্টি এলাকায় আমরা পৌঁছলে রিফাত শরীফের সাথে দেখা হয়। এ সময় রিফাত শরীফ হেলালকে ডেকে নিয়ে তার মোবাইল ফোনটি দিতে বলেন। হেলাল নিজের মোবাইল ফোনটি রিফাতের হাতে দিলে মোবাইলটি নিয়ে চলে যান রিফাত। এ সময় রিফাত শরীফের সাথে মিন্নিও ছিলেন।
পারুল বেগম আরো বলেন, ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। পরে বাসায় এসে মাকে বিষয়টি জানাই। তখন মা বেশ কয়েকবার রিফাত শরীফকে কল দিয়ে মোবাইলটি দিয়ে যেতে বলেন। এরপর বিকেল ৫টায় রিফাত আমার ভাই হেলালকে ডেকে নিয়ে মোবাইলটি দেন। পারুল বেগম আরো বলেন, মোবাইলটি রিফাত শরীফ কেন নিয়েছিলেন তা আমি জানি না। ওই মোবাইলে গোপন বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য ছিল কি না তা-ও আমি জানি না।
হেলালের স্ত্রী মনিকা বেগম বলেন, হেলালের মোবাইলটি রিফাত শরীফ নিয়েছিলেন বরগুনা পৌর মার্কেটের নিচে থাকাকালীন অবস্থায়। সকাল সাড়ে ১০টা বা ১১টার দিকে। মোবাইলটি নিলেও আমার শাশুড়ির অনুরোধে বিকেল ৪টা কিংবা ৫টার দিকে ফিরিয়ে দেন রিফাত।
মনিকা বেগম আরো বলেন, মোবাইলটি রিফাত শরীফ কেন নিয়েছিলেন তা আমি জানি না। মোবাইলে গোপনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য ছিল কি না তা-ও আমার জানা নেই।
এ দিকে হেলালের কাছ থেকে মোবাইল নেয়ার দু’দিন পরই রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ২৬ জুন বুধবার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘটনার দু’দিন আগে সোমবার রিফাত শরীফ হেলাল নামে তার এক বন্ধুর মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। হেলাল রিফাত শরীফের বন্ধু হলেও নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ওই মোবাইল উদ্ধারের জন্য নয়ন বন্ড মিন্নির দারস্থ হয়। পরে রিফাত শরীফের কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধার করে মিন্নি। কিন্তু ওই ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে রিফাত শরীফের মারধরের শিকার হয় মিন্নি।
এ সময় মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফের হাতে যে মারধরের শিকার হয়েছেন তার প্রতিশোধ নিতে নয়নকে মারধর করতে বলে। তবে মারধরের সময় নয়ন যাতে উপস্থিত না থাকে, সেটিও নয়নকে বলে দেয় মিন্নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, হেলালের কাছ থেকে মোবাইল নেয়ার বিষয়টি আমি জানি না। তবে রিফাত হত্যায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে আমি জানি।
দুই কারণে জামিন হয়নি মিন্নির : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত রোববার বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো: সিরাজুল ইসলাম গাজী এ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে মিন্নির জামিন আবেদন করে আদালতের কার্যতালিকায় তোলা হয় মামলাটি। পরে বেলা ১১টায় মিন্নির জামিনের জন্য শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বিচারক।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সঞ্জীব দাস বলেন, মূলত দু’টি কারণে মিন্নির জামিন হয়নি। রিফাত হত্যা মামলার শুনানির পর বিচারক মো: সিরাজুল ইসলাম গাজী জামিন না দেয়ার এ দু’টি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিচারক বলেছেন, এ মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী এবং অন্যতম আসামি রাব্বি আকন হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এ ছাড়া মিন্নি নিজেও এ হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হলো।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, মিন্নির জামিন আবেদন আদালত নামঞ্জুর করেছেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে মিন্নির জামিনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করব আমরা।
এ ব্যাপারে নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, মিন্নির জামিন নামঞ্জুর হয়েছে এটা আমি শুনেছি। আমার একমাত্র ছেলেকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে মিন্নি জড়িত। এ মামলায় অভিযুক্তদের আইনের ফাঁক দিয়ে জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement