১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে রাষ্ট্রদূতদের : প্রধানমন্ত্রী

লন্ডনে ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর গুরুত্বারোপের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল লন্ডনে এই প্রথমবারের মতো আয়োজিত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে যোগ দিয়ে এ আহ্বান জানান।
সম্মেলনের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, আমাদের চলমান উন্নয়ন কর্মসূচি যাতে অব্যাহত থাকে, সেজন্য রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত ১৫ জন রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং স্থায়ী প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দেন। এর শিরোনাম হচ্ছেÑ ‘দূত (ইউরোপ) সম্মেলন’। শনিবার বিকেলে (লন্ডন সময়) স্থানীয় একটি হোটেলে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: নজিবুর রহমান এবং পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশী দূতদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন, অভিবাসন ও রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ও সম্মেলনে আলোচনা হয়।
দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের একটি কার্যকরী এবং সময়োপযোগী অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণের পরামর্শ দেন, যাতে করে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক আরো গভীর ও নিবিড় হয়। তিনি বলেন, ‘এই জন্য আমাদের দেশে বিনিয়োগের আরো সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে ব্যবসা এবং দক্ষ জনশক্তি রফতানি বাড়াতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এখন একটি বৃহৎ এবং দক্ষ যুবশক্তি রয়েছে, যারা বিশ্ব শ্রম বাজারের চাহিদা পূরণে সক্ষম। একটি দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে এমন একটি অ্যাপ চালু করেছি যার মাধ্যমে জনগণ ৯টি ভাষা শিখতে পারছে।’
প্রধানমন্ত্রী দূতগণকে নিজ নিজ কর্মস্থলে বিভিন্ন দেশের বাজার পরিবীক্ষণ করে সে দেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের বাধাগুলো চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রয়োজনে দ্রুত এবং উন্নত সেবা প্রদানের জন্যও কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৮ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি এবং চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ নাগাদ যা ৮ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করা আমাদের লক্ষ্য। একই সাথে ২০২০ সাল নাগাদ আমাদের মাথাপিছু আয় দুই হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশের কিছু লোক এবং যারা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে তারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা দেশের উন্নয়নের গতিটাকে থামিয়ে দিতে চাচ্ছে।’ তিনি বিএনপির নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘তারা বিগত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অথচ তারা এই নির্বাচনে যথার্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ প্রপাগান্ডায় বিশ্বাস করে না বরং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় আস্থা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনকে গুরুত্ব দেয়। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুসৃত এই পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার এই পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। তিনি বলেন, এই নীতি অনুসরণ করে তার সরকার কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সাথে ছিটমহল বিনিময়সহ অনেক বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি একইভাবে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুরও সমাধান হবে।’
সম্মেলনে অংশ নেয়া রাষ্ট্রদূতরা হলেন আবু জাফর (অস্ট্রিয়া), মো: শাহাদৎ হোসেন (বেলজিয়াম), মুহম্মদ আবদুল মুহিত (ডেনমার্ক), কাজী ইমতিয়াজ হোসেন (ফ্রান্স), ইমতিয়াজ আহমেদ (জার্মানি), জসিম উদ্দিন (গ্রীস), আবদুস সোবহান সিকদার (ইতালি), শেখ মোহাম্মদ বেলাল (নেদারল্যান্ড), মুহম্মদ মাহফুজুর রহমান (পোল্যান্ড), রুহুল আলম সিদ্দিক (পর্তুগাল), ড. এস এম সাইফুল হক (রাশিয়া), হাসান মাহমুদ খন্দকার (স্পেন), নাজমুল ইসলাম (সুইডেন), শামিম আহসান (সুইজারল্যান্ড) এবং সাইদা মুনা তাসনীম (যুক্তরাজ্য)।
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতগণ সংশ্লিষ্ট দেশে তাদের নিজ নিজ কার্যক্রম, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা পৃথকভাবে উপস্থাপন করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement