২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

চট্টগ্রাম রাজশাহী টাঙ্গাইল ও চিরিরবন্দরে ছেলেধরা সন্দেহে ৭ জনকে পিটুনি

-

দেশের বিভিন্নস্থানে ছেলেধরা গুজবে উত্তেজিত জনতার মারমুখো আচরণের শিকার হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ছেলেধরা সন্দেহে মিরু মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে আহত অবস্থায় পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। চট্টগ্রামে এক মহিলাকে গণপিটুনি দিলে গুরুতর আহত হয় সে। রাজশাহীতে ছেলে ধরা সন্দেহে ৩ চিপস বিতরণকারীকে গণপিটুনি দেয়া হয়েছে। টাঙ্গাইলে ছেলেধরা গুজবে পিটুনিতে আহত হয়েছে দুইজন। আড়াইহাজারে এক মহিলাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার সয়া বাজারে এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কান্দিলা বাজারে ছেলেধরা সন্দেহে রোববার দুই যুবককে গণপিটুনি দিয়েছে জনতা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারো পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তারা প্রকৃতপক্ষে ছেলেধরা কি না তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
কালিহাতী থানার এসআই ফারুকুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরে সয়া বাজারে ছেলে ধরা সন্দেহে জনতা ওই যুবককে বেধড়ক পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ছাড়া টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউপি সদস্য মজনু মিয়া বলেন, রোববার সকালে কান্দিলা বাজারে ছেলে ধরা সন্দেহে একজনকে মারধর করার খবর পেয়ে সেখানে যাই। তাৎক্ষণিক পুলিশকে খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে সে ছেলে ধরা কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ছেলে ধরা সন্দেহে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে এক মহিলাকে গণপিটুনি দিয়েছেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় মধ্যম হালিশহর কলসীদীঘির পাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী জানান, সালমা বেগম নামে এক মহিলা তার দুই শিশুসন্তান নিয়ে রাস্তায় বের হলে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়। পরে দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ হালিশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম নয়া দিগন্তকে জানান, ঘটনার সত্যতা যাচাই করে জানা যায় সালমা বেগম ছেলে ধরা নয়। সন্দেহ করে এলাকাবাসী তাকে গণপিটুনি দিয়েছে। আহত সালমা বেগমের বাসা দীঘিরপাড়ের কালা জাহিদের কলোনিতে।
চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ছেলে ধরা সন্দেহে মো: মিরু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনাটি গতকাল ২১ জুলাই রোববার দুপুর ১২টায় উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের নানিয়াটিকর গ্রামের মুহুরীপাড়ায় ঘটেছে। আটক মিরু মিয়া কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর আব্দুল হাইয়ের ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় মিরু মিয়া একটি পুরাতন চটের বস্তা নিয়ে এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। এতে এলাকার লোকজনের ছেলেধরা সন্দেহ হলে তাকে আটক করে গণপিটুনি দিতে থাকে। এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মাবিয়া বেগম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে থানা পুলিশে খবর দেন। থানা পুলিশের এসআই আব্দুল জলিল ঘটনাস্থলে এসে মিরু মিয়াকে থানায় নিয়ে আসেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: হারেসুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আটককৃত মিরু একজন অর্ধপাগল ব্যক্তি। তবে এলাকাবাসীকে ছেলে ধরা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। ছেলেধরা সন্দেহে পাগলদের মারপিট না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
রাজশাহীতে ছেলেধরা সন্দেহে ৩ জনকে গণপিটুনি
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে চিপসের প্রচারণা চালাতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে তিন ব্যক্তি গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। এ সময় তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারেও ভাঙচুর চালায় স্থানীয় জনতা। গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর বিনোদপুরের মিজানের মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নগরীর মতিহার থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুরের দিকে তিনজন ব্যক্তি মামা চিপসের প্রচারণার জন্য বিনোদপুরের মিজানের মোড় এলাকায় যান। সেখানে তারা শিশুদের বিনামূল্যে চিপস দিতে শুরু করলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা ওই তিনজনকে ছেলেধরা বলে মারধর করেন।
পুলিশ আরো জানায়, পরে খবর পেয়ে মতিহার থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের রাজশাহী এগ্রো ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। তারা জানিয়েছেন, তাদের প্রস্তুতকৃত মামা চিপসের প্রচারণার জন্য ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
আড়াইহাজারে ছেলেধরা সন্দেহে মহিলাকে পুলিশে সোপর্দ
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, আড়াইহাজারে ছেলেধরা সন্দেহে ৬৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধা মহিলাকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল সকালে উপজেলার সদর পৌরসভার মসজিদ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আড়াইহাজার থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, সকাল ৮টার দিকে ওই মহিলা উপজেলা পরিষদ মসজিদের আশপাশে ঘুরা ফেরা করতে দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। পরে তাকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়া হয়।
ওসি আরো জানান, মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারলাম। সে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। ভিক্ষা করতে ওই এলাকায় গিয়ে ছিল। মহিলার নাম রাবেয়া বেগম। গোপালদী পৌরসভার মোল্লার চর গ্রামে তার বাড়ি। এ দিকে ছেলেধরা গুজবে কান না দেয়ার জন্য আড়াইহাজার থানা পুলিশের পক্ষ থেকে রোববার দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল