১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চট্টগ্রামে মহাসমাবেশে মির্জা ফখরুল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিতে হবে

-

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। এই কমিশনকে দিয়ে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বিগত সংসদ নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে নূর আহমদ সড়কে অনুষ্ঠিত বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সড়কের একপাশে তৈরি করা মঞ্চে হাজির ছিল কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর। মহাসমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম হয়। সমাবেশকে ঘিরে বিপুল সংখ্যক মিছিল যোগে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে যান। পুরো নগরী ছিল মিছিলে প্রকম্পিত।
সমাবেশে বক্তৃতা করেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, মহাসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। তিনি জনগণের ভোটের অধিকার, বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে আনতে গণঐক্য গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণকে হত্যা করছে। দেশে এখন হত্যা ও ধর্ষণের উৎসব চলছে। প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, মেগা প্রকল্পের নামে চলছে লুটপাট। ব্যাংকগুলোকে লুট করে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এসব কিছুই হচ্ছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার কারণে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে সরকার এসব অন্যায় করার সাহস পেত না। মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার পুলিশ, প্রশাসন এবং বিচার বিভাগকে দলীয় করণ করেছে। এমনকি মিডিয়াতেও হস্তক্ষেপ করছে। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাজীদের তত্ত্বাবধানে একজন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটির সদস্য হয়ে হজে যাচ্ছেন, যা অত্যন্ত লজ্জাকর।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার জনগনকে, নির্বাচনকে ভয় পায়। সে জন্য রাতের আঁধারে ভোট নিয়ে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বিধায় কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে ক্ষমতায় এসেও তারা একইভাবে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।
বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি দেশের সব স্বাধীনতাকামী, গণতন্ত্রকামী মানুষের নেত্রী। তিনি এ দেশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসেননি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন খালেদা জিয়া। ১/১১ সরকারের সাথে আপস না করায় তারা ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিল এবং আবারো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগ ছলচাতুরীর মাধ্যমে মতায় আসার পর হতেই একদলীয় শাসন কায়েমের প্রচেষ্টা চালিয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সে জন্যই তিনি আজ কারাগারে মিথ্যা সাজানো মামলায়। শুধু তাকে হয়রানি করার জন্য ৩৪টি মিথ্যা মামলা দিয়ে ১৭ মাস ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা: খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। নানা অজুহাতে জামিন না দিয়ে সরকার তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্ত করতে হবে, নইলে গণতন্ত্র মুক্ত হবে না।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্র্ণ অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এই ধরনের মামলায় পাঁচ দিনও জেলে থাকার কথা নয়। সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবে তার জামিন হচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে রাজপথ ছাড়া আর বিকল্প থাকবে না। তিনি বলেন, রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করব। সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, হয় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন, নইলে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কেন হাসিনার কাছে নেত্রীর মুক্তি চাইব? আমরা এই সরকারের পদত্যাগ চাই। সরকারের পদত্যাগ যদি নিশ্চিত করতে পারি তবে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। তিনি বলেন, আইনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না, অথচ আইনে মুক্তির বিধান আছে। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইব না, মুক্ত করব।
নজরুল ইসলাম খান সরকার দলীয় এক নেতার বক্তব্যকে উল্লেখ করে বলেন, খালেদা জিয়া নাকি দেশের জন্য বিপজ্জনক। এর জবাবে আমি বলতে চাই, খালেদা জিয়া তাদের জন্য (সরকারি দলের) বিপজ্জনক। কারণ তিনি শেয়ার বাজার লুট হতে দেন না, তিনি ব্যাংক লুট করতে দেন না এবং সর্বোপরি মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করতে দেন না। এদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আসার লড়াইয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সিপাহসালার হবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যেদেশে একটি অবৈধ সরকার থাকে, রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারে না। কাজেই যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, যেভাবে সংসদ চলছে, বেগম খালেদা জিয়ার বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না ভাবতে হবে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সংগ্রামে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
সভাপতির বক্তৃতায় ডা: শাহাদাত হোসেন বলেন, বেগম খালেদা মুক্তির আন্দোলন চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলো। আমরা নেত্রীকে মুক্ত করে আনবই।

 


আরো সংবাদ



premium cement