২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশের অর্থনীতি ভালো পুঁজিবাজারে এর প্রভাব নেই কেন : অর্থমন্ত্রীর প্রশ্ন

-

দেশে অর্থনীতির অবস্থা ভালো, এর প্রভাব তো শেয়ারবাজারের পড়ার কথা। কিন্তু তা পড়ছে না কেন সে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে কাজ করছে সরকার। এ জন্য বাজেটে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামীতেও পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের তরফ থেকে যা যা করা দরকার করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। প্রথমে তিনি শেয়ারবাজার নিয়ে কোনো কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করলেও পরে বলেন, ‘শেয়ারবাজারের জন্য আমার কাজটা হবে একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি করে দেয়া; যাতে শেয়ারবাজার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। শেয়ারবাজারে লাভ-লোকসানের সাথে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পুঁজিবাজার সরকারের শেয়ার খুব কম রয়েছে। এখান থেকে সরকার শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাবে এমনটি নয়।’
তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজার একটি বাজার। যারা এখানে বিনিয়োগ করবেন তারাই লাভবান হবেন। লাভও হতে পারে আবার লোকসানও হতে পারে। প্রতিটি দেশেই পুঁজিবাজারে মাঝে মধ্যে শেয়ারের দাম কমে। এখন যেমন ট্রেড ওয়ার (বাণিজ্য যুদ্ধ) চলছে। সেটা খুব বেশি দিন থাকবে না। খুব শিগরিই তা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
‘১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে একবার ট্রেড ওয়ার হয়েছিল। সে সময় ২০ হাজার আইটেমের ওপর ট্যারিফ বসানো হয়েছিল। এতে সারা বিশ্বে প্রায় ৬৬ শতাংশ বাণিজ্য কমে গিয়েছিল। কয়েক দিন আগে এবং আমেরিকার মধ্যে একটা সমস্যা সৃষ্টির কারণে ৪ থেকে ৫ শতাংশের মতো ট্রেড কমে গেছে। এসব জিনিস অনেক সময় শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলে। তবে পুঁজিবাজার সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম কমে আবার বাড়ে। তবে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নজির নেই। ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতে পুঁজিবাজারের ইনডেক্স চলে এসেছিল ১৮ হাজার থেকে ৭ হাজারে। সেখানে কমেছে আবার বেড়েছে। আমাদের এখানেও বেড়েছে আবার কমেছে। আমাদের পুঁজিবাজারে এখন খুব বেশি ওঠানামা নেই। স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে শক্তিশালী বা বড় বিনিয়োগকারী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থাকা দরকার। তবে আমাদের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেশি। পার্শ¦বর্তী দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়ে। আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা শুধু লাভ করতে চান। ট্রেড করে ছোট্ট লাভ করে বেরিয়ে যেতে চান। এটি কিন্তু পুঁজিবাজার না। পুঁজিবাজারের দু’টি পদ্ধতি আছে। একটা হচ্ছে আপনি ট্রেড করবেন, লাভ করবেন। আবার আপনি ইনভেস্টমেন্ট ধরে রাখবেন, যাতে ক্যাপিটাল গেইন পেতে পারেন। আমাদের এখানে দুঃখজনক যে ক্যাপিটাল গেইনের চিন্তা করেন না অনেকে।
তিনি বলেন, ‘আমার ১০০ টাকার শেয়ার কবে ১৫০ টাকা হবে এটি কেউ চিন্তা করেন না। আমার কাছে যা ছিল পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটে আমি তা করেছি। ডিভিডেন্টের ওপর একাধিকবার করারোপ তুলে দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করছাড় দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের দরফ থেকে যা যা করা দরকার করব। কারণ এখনো হাজার হাজার মানুষ পুঁজিবাজারের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং তাদেরকে বাদ দিয়ে দেশের অর্থনীতি চিন্তা করতে পারি না। তাই তাদের সমর্থন দেয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাবো।’
উল্লেখ্য, বাজেটে পুঁজিবাজারে বেশ কয়েকটি প্রণোদনা দেয়ার সত্ত্বেও দেশের দুই পুঁজিবাজারের প্রায় প্রতিদিন শেয়ার মূল্য পতন হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। এখন তারা প্রতিদিনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement