২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রিফাত হত্যা

জিজ্ঞাসাবাদের পর মিন্নি গ্রেফতার

-

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবার বাড়ি থেকে পুলিশ লাইনে আনা হয় মিন্নিকে।
গত রাত ৯টায় বরগুনার গোয়েন্দা পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানায়। রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
সংবাদ সম্মেলনে বরগুনা জেলা এসবির পুলিশ সুপার জানান, মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এ মামলার সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে (২০) সকালে ডেকে এনে মামলার ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও দীর্ঘ সময় ধরে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মিন্নিকে রাত ৯টায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে সকালে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আসামি শনাক্ত করার কথা বলে সকালে পুলিশের একটি দল মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসে।’
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন বলেন, মিন্নি রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী। জবানবন্দী রেকর্ড করার জন্য মিন্নি ও তার পরিবারকে পুলিশ লাইনে আনা হয়েছে। পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় জানার আছে। এর আগে গত শনিবার রাত ৮টায় নিহত রিফাত শরীফের বাবা ও হত্যা মামলার বাদি আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বরগুনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন তার ছেলে হত্যার ঘটনায় পুত্রবধূ মিন্নিও জড়িত বলে সন্দেহ করছেন তিনি। সেদিন মিন্নি হত্যাকাণ্ডে জড়িত এমন সন্দেহের পেছনে ১০টি কারণও বলেন তিনি। তার সন্দেহের বিষয়টিকে আমলে নেয় পুলিশ।
সেই সংবাদ সম্মেলনে আবদুল হালিম দুলাল শরীফ অভিযোগ করেন, ‘রিফাত হত্যাকাণ্ডের নতুন ভিডিও ফুটেজ দেখে আমি ধারণা করছি, আমার ছেলেকে হত্যার পেছনে তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জড়িত। মিন্নি যদি হামলাকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা না করে রিফাতকে জড়িয়ে ধরতো, তাহলে আমার ছেলে নির্মম হত্যার শিকার হতো না।’
তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আসামিরা মিন্নির ওপরে চড়াও হয়নি এবং মিন্নি কোনোভাবেই আক্রান্ত হয়নি। তার প্রশ্ন, ‘কেন, মিন্নি কেন আক্রান্ত হয়নি?’ তবে এর পরদিন মিন্নি পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘বরগুনায় যারা ০০৭ গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন, তারা খুবই ক্ষমতাবান ও অর্থশালী। তারা রিফাত হত্যার বিচারকে অন্য দিকে প্রবাহিত করার জন্য আমার শ্বশুরকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। খুনিদের আড়াল করতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘নয়ন বন্ড একজন মাদকসেবী ও মাদককারবারি। তার নামে অনেক মামলা ছিল। সে আমাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করত। আমার ছোট ভাই ও বাবাকে হত্যার হুমকি দিত। এ জন্য তার বিরুদ্ধে কখনো মুখ খোলার সাহস পাইনি।’ মিন্নি বলেন, ‘বিয়ের দুই মাস পর স্বামীকে হারালে একজন নারীর মানসিক অবস্থা কেমন থাকতে পারে? তার ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনবরত কুৎসা এবং বাজে ছবি পোস্ট দেয়ার কথা শুনে আমি আরো বিপর্যস্ত। রিফাতকে হত্যার পর থেকেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ এ সময় তিনি অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিও জানান।
এ দিকে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর বরগুনার এক সংসদ সদস্যের ছেলে ঘটনাটিকে প্রভাবিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এমন অভিযোগ তুলে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। মিন্নিও তার সংবাদ সম্মেলনে সেদিকে ইঙ্গিত করেন। এর আগে গত ২৮ জুন মিন্নির নিরাপত্তার জন্য তার বাবার বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের থামানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওই দিন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদি হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এজাহারে উল্লেখ থাকা সাত আসামিসহ সন্দেহভাজন আরো সাতজনকে পুলিশ এর আগে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। বাকিদের কারাগারে পাঠিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement