২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিন্ডিকেট ঠেকাতে সক্রিয় বিক্ষুব্ধ বায়রার সদস্যরা

সৌদি ভিসা সেন্টারের উদ্যোগ কার্যকর হয়নি
-

বায়রার বেশির ভাগ সদস্যদের প্রতিবাদে সৌদি ভিসা সেন্টার চালুর উদ্যোগ কার্যকর হয়নি। এটি বাতিল হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাদের মতে, এই ড্রপবক্স চালুর পেছনে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছিল না। বায়রার সহায়তায় সৌদি দূতাবাসের তখনকার কনসাল জেনারেলকে প্রভাবিত করে একটি সিন্ডিকেট এই ড্রপবক্স চালুর উদ্যোগটি নিতে যাচ্ছিল। এ দিকে ড্রপবক্স বিরোধী আন্দোলনকারী সদস্যরা জনশক্তি রফতানি খাতে সিন্ডিকেট ঠেকাতে সক্রিয় রয়েছেন। তারা ইতোমধ্যেই ‘বায়রা তৃণমূল ঐক্যফ্রন্ট’ নামে সংগঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। ড্রপবক্স সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করার জন্য তারা বায়রার বর্তমান নেতৃত্বকে দায়ী করে সিন্ডিকেটমুক্ত বায়রা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে তলবি সভা আহ্বান করারও চিন্তা করছে বলে জানিয়েছেন।
‘ড্রপবক্স সিন্ডিকেট নির্মূল কমিটি’র সদস্যসচিব মোবারক উল্লাহ শিমুল এ ব্যাপারে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা মনে করছি সৌদি দূতাবাস এই ড্রপবক্স নিয়ে আর অগ্রসর হবে না। কারণ এই ড্রপবক্সের ব্যাপারে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন ছিল না এবং বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে জানত না। কিন্তু দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক কোম্পানি গঠন করেছে, তারা নানাভাবে দূতাবাসের সাবেক কনসাল জেনারেলকে প্রভাবিত করে এবং বায়রার কয়েকজন নেতা সংগঠনের নামে নিয়ম বহির্র্ভূতভাবে চিঠি দিয়ে এই অনুমোদনটি সৌদি দূতাবাস থেকে আদায় করেছিলেন। কিন্তু সাধারণ সদস্যদের প্রতিবাদে দূতাবাস তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি। এই সিদ্ধান্ত বাতিল বলে আমরা মনে করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে যে হারে জনশক্তি যাচ্ছে তাতে এই ধরনের ড্রপবক্সের আদৌ প্রয়োজন নেই এবং পাশের দুই-তিনটি দেশে এই ধরনের ড্রপবক্স চালু করার উদ্যোগ প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়।
মোবারক উল্লাহ শিমুল জনশক্তি রফতানি খাতকে সিন্ডিকেট মুক্ত রাখার লক্ষ্যে ‘বায়রা তৃণমূল ঐক্যফ্রন্ট’ গঠিত হয়েছে জানিয়ে বলেন, বায়রার বর্তমান কমিটির কয়েকজন নেতা সাধারণ সদস্যদের মতামত না নিয়ে সিন্ডিকেটের পক্ষে চিঠি দিয়ে এই ড্রপবক্স আদায়ে সহায়তা করেছিল। সাধারণ সদস্যদের চরম আপত্তির পরও এখন পর্যন্ত জরুরি ইসি সভা বা সাধারণ সদস্যদের নিয়ে কোনো সভা করেনি। বরং বায়রার স্বার্থবিরোধী অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। আমরা এই সংগঠনের ব্যানারে বায়রাকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা এবং নির্বাচিত বায়রা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাব। প্রয়োজনে বায়রার তলবি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলেও তিনি আভাস দেন। এ দিকে সম্প্রতি বায়রার অন্যতম উপদেষ্টা মো: দলিল উদ্দিন মণ্ডল ৯টি সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে বায়রার উপদেষ্টা থেকে পদত্যাগ করেছেন।
বায়রা তৃণমূল ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ইতোমধ্যেই বায়রার সাধারণ সদস্যদের একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে সংগঠনটি আহ্বায়ক আবদুল আলিম, সদস্যসচিব মোবারক উল্লাহ শিমুল এবং প্রধান সমন্বয়ক ফজলুল মতিন তৌহিদের স্বাক্ষর রয়েছে। এতে বর্তমান বায়রার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলা হয়, আমাদের শেষ ভরসার সংগঠন বায়রার নেতৃত্ব আমাদের নিষ্পেশিত করার মুখ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। সর্বশেষ ড্রপবক্স বিরোধী আন্দোলন বানচালে বিকল্প কমিটি গঠন করার অভিযোগ করে চিঠিতে বলা হয়Ñ সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ কঠিন প্রতিবাদে সাধারণ সদস্যদের বিজয় হয়েছে।
এর আগে ড্রপবক্সের ব্যাপারে চিঠি দেয়া এবং সাধারণ সদস্যদের মতামত না নিয়ে সিন্ডিকেটের পক্ষে অবস্থান নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, আপনাদের তো জানতে হবে বায়রা কী জন্য চিঠি দিয়েছে। বায়রার সদস্যদের মতামত না নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা কোন জায়গায় লেখা আছে যে, বায়রার কোনো সিদ্ধান্ত সভার সাথে আলোচনা করে পাঠাতে হবে? তিনি আরো বলেন, একটি রিক্রুটিং এজেন্সির চিঠির কারণেই সৌদি দূতাবাস এই সার্ভিস সেন্টারের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে এটা কি স্বাভাবিক যুক্তিতে ধরে? বায়রার মহাসচিব জানান, সৌদি দূতাবাসের সিদ্ধান্তের কারণেই সার্ভিস সেন্টার চালু হচ্ছিল। গত ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির সভার বরাত দিয়ে গত ২৫ এপ্রিল সৌদি দূতাবাসে পাঠানো চিঠিতে দু’টি সৌদি ভিসা সেন্টার চালুর জন্য সৌদি দূতাবাসকে অনুরোধ করে বায়রা। বায়রার সভাপতি স্বাক্ষরিত ইংরেজিতে লেখা একটি চিঠিতে বলা হয়েছেÑ বায়রা ৪৫, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ বনানী, ঢাকায় সৌদি ভিসা সেন্টার-২ কে পুরোপুরি সমর্থন করবে। এ জন্য আমরা ভিসা সার্ভিস সেন্টার-২ কে গ্রহণ/অনুমোদন দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’ মূলত দু’টি সার্ভিস সেন্টার চালুর উদ্যোগের পেছনে বায়রার এই চিঠি মুখ্য ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা। এজন্য ড্রপবক্স বিরোধী আন্দোলনকারীরা বায়রার বর্তমান নেতৃত্বকে দায়ী করে আসছিল। তাদের মতে, গত বছর এমন উদ্যোগের কথা জানা গেলেও তখন বায়রার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সৌদি দূতাবাসকে না করা হয়েছিল বলে তখন দূতাবাস তা চালু করেনি। পরে বায়রা পক্ষ নেয়ায় দূতাবাস প্রভাবিত হয়ে অনুমোদন দিয়েছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement