২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

লাখো পরিবার পানিবন্দী

বন্যার অবনতি, বিপদসীমার ওপরে নদ-নদীর পানি, তীব্র ভাঙন
বন্যার পানিতে সাতকানিয়া উপজেলা প্লাবিত হওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হচ্ছে এক বয়স্ক নারীকে : নয়া দিগন্ত -

দেশের অধিকাংশ স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে অনেক জেলায় পানিবন্দী থাকা অসহায় মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্নারও কোনো ব্যবস্থা করতে পারছেন না তারা। ফসল নষ্ট হওয়ার পর গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ পানিবন্দী মানুষ। খাদ্য, খাবার পানির সঙ্কটের মধ্যে নেই পর্যাপ্ত ত্রাণেরও কোনো সরবরাহ। মানবেতর অবস্থায় দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন পার্বত্য অঞ্চল থেকে শুরু করে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলের পানিতে নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এখনো অনেক নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে নদীতীরবর্তী অনেক এলাকায় মারাত্মক ভাঙন শুরু হয়েছে।
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ থেকে জানান, ‘ভাই আমরারে দেখতে আইছেন, দেহেন বন্যার পানির সাথে যুদ্ধ করইরা কিভাবে বাঁইচা আছি’। দেহেননা, যে দিখে চাইবেন খালি ফানি আর ফানি। কোনো গাঁও গেরাম দেহা যায় না, হাওরের কূল-কিনার নাই। বাড়ি-ঘর বাঁচামু, না নিজে বাঁচমু এই চিন্তায় শেষ। এমন আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনা হাওরের বাসিন্দা জয়নাল মিয়া।
আবার ট্রলার দেখে এগিয়ে এসে এক মহিলা জানতে চান, কিছু দিবায়নি। চাউল দিবায় না টেহা (টাকা) দিবায়। ভাবতাছি তোমরা মনে হয় আমরার লাগি কিছু খাওন লইয়া আইতাছো। আইজ সারা দিনে কোনো রকম এক বেলা আধা পেট খাইছি। বাচ্ছারার কান্দন সইতা ফারি না। চুলাত ফানি হের লাইগা ভাতরান্দা বন্ধ।’ এ ভাবেই কিছু খাবার দেয়ার আকুতি জানিয়েছিলেন পাকনা হাওরের হঠামারা গ্রামের বিলপাড় হাটির ৩৫ ঊর্ধ্ব এক নারী। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরতে যেয়ে দেখা যায়, তার মতো অর্ধশতাধিক মানুষ ট্রলার-নৌকার শব্দ শুনে ত্রাণের আশায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় আছেন নিজ বাড়ির ঘাটে।
এদিকে সুনামগঞ্জের বন্যার্তরা ৫ দিন পর অবশেষে বাড়ি ছাড়লেও বেশির ভাগই আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। জেলার সব ক’টি উপজেলায় এমন খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে হাওরের বাসিন্দারা আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে, আশ্রয় নিচ্ছেন আত্মীয় বাড়িতে। জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা উপজেলার দ্বীপসদৃশ গ্রামগুলোর বন্যার্তরা নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। হাওরের বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পানিবন্দীদের চরম বিপর্যয়। কোনো কোনো জায়গায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয়, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ নানা সঙ্কট বিরাজ করছে। বৈশাখে বোরো ফসল গোলায় ওঠার সময় যে কৃষকরা অকাতরে লোকজনের মধ্যে ধান বিলি করতেন, তাদের অনেকের ঘরে পানি উঠার কারণে ত্রাণের আশায় প্রহর গুনছেন। বহু গ্রামের লোক এখন একবেলা, আধাবেলা ও অনেকে শুকনো খাবার খেয়ে কোনো রকম দিন কাটাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের চেয়ে একেবারেই কম। এমন পরিবারও রয়েছে যারা কোনো ত্রাণ পায়নি।
রেজাউল করিম রেজা কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যসঙ্কট। চারদিকে পানি আর পানি। নেই চারণভূমি কিংবা গবাদিপশু রাখার মতো উঁচু স্থান। কৃষকরা তাদের শেষ সম্বল গবাদিপশু রেখে নিরাপদ আশ্রয়েও আসতে পারছে না। রোববার বিকেলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার কুড়িগ্রামের বন্যাদুগর্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় সার্কিট হাউজে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সচিব বন্যা মোকাবেলায় সব বিভাগকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।
জেলার ৯টি উপজেলার চরাঞ্চলের তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫২ ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ। রোববার বিকেল ৩টায় চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৭৬ সেমি, নুনখাওয়ায় ৪০ সে.মিটার, সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৮১ সে. মিটার উপরে ছিল। তবে কাউনিয়ায় তিস্তার পানি ২ সে.মিটার কমে বিপদসীমার ২০ সে.মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। চর, দ্বীপচর, নদীসংলগ্ন গ্রামের সবগুলোই এখন পানিতে ভাসছে। ৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পাশাপাশি নদীভাঙনে এ পর্যন্ত গৃহহীন হয়েছে এক হাজার ৩১টি পরিবার। ভেঙে গেছে দুটি স্কুল। স্কুলগৃহে, মাঠে ও চলাচলের রাস্তায় পানি উঠায় কুড়িগ্রামে ২৮৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এসব স্কুলের অনেক মাঠ চার-পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ১৮ ইউনিয়নের ১৬৫ চরে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। চরাঞ্চলের ৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমর পানি ওঠায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন চরাঞ্চলের মানুষ। রান্না করে খাবার জায়গা না থাকায় অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটছে তাদের। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩৭ সেন্টিমিটার বেড়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৩৮ সেন্টিমিটার বেড়ে গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কায় দিন কাটছে গাইবান্ধার মানুষের। এ দিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি তোড়ে সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের বাগুড়িয়া এলাকায় রোববার সকালে বাঁধের ১০০ ফিট অংশ ধসে গেছে। ফলে আকস্মিক বন্যায় প্রায় সাত শতাধিক বাড়িঘর এবং ওইসব এলাকার ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, বান্দরবানে পাহাড়ি ঢলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। জেলা শহরের দশটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এ দিকে সাংগু-মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বান্দরবানের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ। অন্য দিকে জেলা শহরের সাথে তিন উপজেলা রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। শহরের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা পানির নিচে। বিভিন্ন এলাকায় সাঙ্গু নদীর পানি প্রবেশ করায় তিন হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা শহরে বিদ্যুৎ বিভাগের দু’টি উপকেন্দ্রে নদীর পানি ঢুকায় দু’দিন থেকে জেলা শহর ও রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দ্রুত বাড়ছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শফিউল আলম জানিয়েছেন, বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, বগুড়ায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে সোনাতলা ও সারিয়াকান্দির নিম্নাঞ্চলের ৮০ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রোববার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার ত্রাণ কর্মকর্তা আজাহার আলী মণ্ডল জানান, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় বন্যার পানিতে ৫৬৮ হেক্টর কৃষিজমি এবং দুই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৬০টি পরিবারের ৫৭ হাজার ২৮০ লোক।
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ি ঢলে শনিবার রাত ৮টার দিকে মৌলভীবাজারের শেরপুর এলাকার কুশিয়ারা নদীর পাশের সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোণা জামে মসজিদের পাশে, দাউদপুর সড়কের মধ্যস্থল, ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান অরবিন্দ পোদ্দার বাচ্চু বলেন, পাউবোর সহযোগিতায় বালু ভর্তি বস্তা ফেলে পানি আটকানো যায়নি। এ দিকে শনিবার কমলগঞ্জের ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে পৌর শহরের রামপাশা ও রহিমপুর এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কমলগঞ্জের ধলাই নদীর ভাঙনে রাজনগর উপজেলার এগারোটি গ্রামের নিম্নœাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে কিছুটা কমলেও বন্যা পরিন্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ দিকে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১৫টি চর গ্রামের অনেক পরিবার এখনো পানিবন্দী রয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বৃষ্টি ও উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে তিস্তা নদী কয়েক দিন ধরে ফুঁসে উঠেছে। নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, গতকালও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব ক’টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়নের গুজিমারি এলাকায় পরিত্যক্ত রেললাইন ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রচণ্ড পানির তোড়ে অনেকের বাড়িঘর ভেসে গেছে। দুই শতাধিক পরিবার ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় দীর্ঘ দিন ধরে দেওয়ানগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট পরিত্যক্ত রেলপথটি বাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। দীর্ঘ এ পরিত্যক্ত রেলপথে নদীভাঙ্গা বানভাসী শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়ে আছে। এ রেলপথে ছোট ছোট অনেক পুল-কালভার্ট রয়েছে। এগুলো বন্ধ করে দেয়ায় যমুনার পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রেললাইনটি ভেঙে যায় বলে এলাকাবাসী জানান। ইউএনও মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও পিআইও এনামুল হাসান জানান, পৌরসভাসহ আট ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছে সাতকানিয়া। গত বিশ বছরের মধ্যে এমন বন্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলার ৯০ শতাংশই প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন। এদিকে সাতকানিয়াকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণা করে সরকারিভাবে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক কেন্দ্র কেরানিহাট পুরোটাই প্লাবিত হয়েছে। কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি বাহিত হওয়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ভোলায় মেঘনার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৩ উপজেলার প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৩৫টি গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তা-ঘাট। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, রোববার মেঘনার পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বাঁধের বাইরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, তিস্তা-ধরলাসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত হয়েছে। এখনো পানিবন্দী রয়েছে নদীর তীরবর্তী প্রায় ২০ গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ। স্থানীয় প্রশাসন ত্রাণ তৎপরতা শুরু করলেও বন্যার্তরা জানিয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। পানিবন্দী মানুষজন পরিবার-পরিজন এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সার্বক্ষণিক তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে পাউবো।
চকরিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, চকরিয়ায় বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত এবং পাহাড় ধসে স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বমুরকুল এলাকায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের দুইজন মাটি চাপা পড়ে মারা যায়। এক সপ্তাহ ধরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে মাতামুহুরী নদীতে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটে। এতে উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরুত্যাখালী বেড়িবাধ ভেঙে শতাধিক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এ দিকে উপজেলার আভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। শনিবার রাতে পাহাড় ধসে নিহতরা হলেন, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড়ের বমুরকুল এলাকার দিনমুজুর মো: আনোয়ার সাদেক (৩৬) ও তার স্ত্রী ওয়ালিদা বেগম (২৫)। এ ছাড়া গতকাল পানির তোড়ে নিখোঁজ যুবক পূর্ববড়ভেওলা ইউনিয়নের দিয়ারচর এলাকার জামাল উদ্দিনের পুত্র মোহাম্মদ রাজু (২৬)।
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চন্দনাইশ ও পটিয়ায় ৩ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে আছে। এদিকে শনিবার রাত ৯টা থেকে ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মহাসড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করায় দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজা জানিয়েছেন, গতকাল শঙ্খ নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান বলেন, শোভনদন্ডী, আশিয়া, বড়লিয়া ও ভাটিখাইন এলাকা তলিয়ে গিয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত

সকল