২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

ম্যাচসেরা বেন স্টোক : আসর সেরা উইলিয়ামসন
শিরোপা হাতে ইংল্যান্ড দলের উল্লাস : এএফপি -

অবশেষে বিশ^চ্যাম্পিয়ন হলো ইংল্যান্ড। ক্রিকেটের জন্মদাতা হয়েও দীর্ঘ ১১ আসরে চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়েছে ট্রফি। ওইসব আসরে ৩ বার ফাইনাল খেলেও বঞ্চিত হন তারা। ফলে বিশ^চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আজন্ম স্বপ্ন অধরাই থাকে। এবার লর্ডসে নিজস্ব চতুর্থ ও টুর্নামেন্টের ১২ তম আসরের নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ওই শিরোপা পেলেও উত্তেজানাও নাটকীয়তায় ভরা ছিল এ ফাইনাল। কে জিতবে, কে হারবে সেটাও নিশ্চিত হতে সুপার ওভার খেলতে হয়েছে। কারণ নির্ধারিত ১০০ ওভারের ম্যাচ হয়েছিল টাই। প্রথম ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ডের করা ২৪১/৮ জবাবে ইংল্যান্ড শেষ বলে ১ রান নিয়ে ২৪১/৯ করে ম্যাচ টাই হয়। এরপর খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। ১ ওভারের ওই খেলায় প্রথম ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড ১৫ রান সংগ্রহ করলে নিউজিল্যান্ড খেলতে নেমে ১ বলে ২ রান প্রয়োজন পড়লেও সেটা কাভার করতে পারেনি। ১ রান নিয়ে গাপটিল রান আউট হয়ে গেলে ম্যাচ আবারো হয়ে যায় টাই। কিন্তু নিয়মানুসারে ইংল্যান্ড বেশি বাউন্ডারি হাঁকানোয় তারা ম্যাচ জিতে যায়। খেলায় ইংল্যান্ড ২৬টি ও নিউজিল্যান্ড ১৭টি বাউন্ডারি হাঁকায়। সত্যিই শিরোপা জিততে ‘ভাগ্য’ও লাগে। নিউজিল্যান্ডের সে ভাগ্যটা সহায় ছিল না। নতুবা নির্ধারিত ওভারের ম্যাচেই জিতে যাওয়ার কথা তাদের। ক্যাচ ড্রপ ছাড়াও ফিল্ডিংয়ে কিছুটা দুর্বলতা তাদের ছিল। খেলার নির্ধারিত ওভারের ৪৯তম ওভার ছিল টার্নিং পয়েন্ট। কারণ শেষ ২ ওভারে ইংল্যান্ডকে জিততে করতে হতো ২৪ রান। জিমি নিশামের করা ওই ওভারের প্রথম ২ বলে ২ রান নিয়ে ইংল্যান্ড ভেঙে পরার উপক্রম। তৃতীয় বলে প্লাঙ্কেট হন আউট। চতুর্থ বলে ম্যাচটা যিনি নিউজিল্যান্ডের হাত থেকে ছিনিয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে রেখেছেন সেই বেন স্টোকসের হাঁকানো বলটি বাউন্ডারিতে ক্যাচ ধরেন বোল্ট। কিন্তু নিজের অসতর্কতার জন্য বল নিয়ে বাউন্ডারিতে পা ফেলেন। ক্যাচ হয়ে যেখানে আউট, সেটা হয়ে যায় ছক্কা। ইংল্যান্ড যেন ঘুরে দাঁড়ায়। পরের বলে ১ রান নিলেও শেষ বলে আবার আউট আর্চার। এবার শেষ ওভারে জিততে প্রয়োজন ১৫ রান। বোল্টের করা এ ওভারে স্টোকস প্রথম দুই বলে রান নিতে না পারলেও তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান। চতুর্থ বলে বাউন্ডারির চেষ্টা কররেও সেটা হয়নি। বরং দ্বিতীয় রান নিতে যেয়ে সেটা হয়েও যায়। কিন্তু ফিল্ডার গাপটিলের থ্রো স্টোকসের ব্যাটে লেগে সেটা কিপারের গ্লাবসে না যেয়ে সোঝা সীমানা পার হয়ে গেলে ৪। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মাথায় আকাশ ভেঙে পরার মতো। কারণ ওই বলে চার না হলে সেখানেই জিতে যায় তারা ম্যাচ। সেখানে হয়ে যায় ৬ রান (২+৪)। এরপর শেষ ২ বলে ৩ রান প্রয়োজন পড়লেও ১ রান নিয়ে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আদিল রশীদ আউট। এবার শেষ বলে প্রয়োজন ২ রান। কিন্তু স্টোকস ১ রান নিলে সেটা হয়ে যায় টাই। এরপর তো সুপার ওভারের ঘটনা। তবে সেখানেও শেষ বলে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২ রান। সেটা দৌড়ে কাভার করতে পারেনি। রান আউট হলে উল্লাসে মেতে ওঠে ইংল্যান্ড। ইংরেজদের আজন্ম স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আনন্দে।
এর আগে প্রথম ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ করা ২৪১ রান মোটেও চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছিল না। বিশেষ করে ফাইনালের মত গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে। আবার এ রান ছিল চ্যালেঞ্জিংও। কারণ আগের দিনও লন্ডনে বৃষ্টি হয়। আগের রাতে এমনকি সকালেও ছিল বৃষ্টি। খেলা ১৫ মিনিট পিছিয়ে শুরু হওয়ার কারণও ছিল ওই বৃষ্টি। এরপরও টসে জিতে কেন উইলিয়ামসন কেন প্রথম ব্যাটিং নিয়েছেন সেটা বোধহয় তিনিই জানেন। তবে এটা ঠিক সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল তা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং দেখে বুঝা গেছে।
উইকেটে ব্যাটিং করতে পরিশ্রম করতে হয়েছে কিউইদের। সাধারণ যারা স্ট্রোক খেলে অভ্যস্ত তারাও খেলতে পারছিলেন না বল। সেটা বোলারদের নিখুঁত বোলিংয়ের কারণেই যে হয়েছে তা নয়। উইকেটেরও ছিল ভূমিকা। দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও নিকোলস ইনিংস সূচনা করলেও এটা দীর্ঘায়িত হয়নি। অভিজ্ঞ গাপটিল এ ম্যাচেও ব্যর্থ। দলীয় ২৯ রানে আউট হয়ে যান তিনি ১৮ বলে ১৯ রান করে। তবে অপর ওপেনার নিকোলস ছিলেন ইনিংসের সেরা স্কোরার। ৫৫ রান করেন তিনি ৭৭ বল খেলে। তার পর টম ল্যাথামের করা ৪৭ রান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গাপটিল আউটের পর মূলত নিকোলস ও কেন উইলিয়ামসন মিলে যে পার্টনারশিপটা খেলেন, সেটাই সর্বাধিক। ৭৪ রান। এ ছাড়া আর একটা জুটিও ৫০ পার হয়নি। একটা ওয়ানডে ম্যাচে বিগ স্কোর গড়তে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ভালো জুটি গড়াও জরুরি। নিউজিল্যান্ড এখানে ব্যর্থ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিতে রান আসে ৪৬। যা করেছিলেন গ্রান্ডহোম ও ল্যাথাম। তৃতীয় সর্বোচ্চ ল্যাথাম ও জিমি নিশামের ৩২। ব্যাট হাতে তৃতীয় সর্বাধিক রান করেন কেন উইলিয়ামসন। ৫৩ বলে ৩০ রান করে আউট হন তিনি। এরপর যারা রান করেছেন, সেটা শুধুই নিয়মরক্ষার। এমনকি শেষ ১০ ওভারে ভালো একটা স্কোরের সুযোগ থাকলেও সেখানেও ব্যর্থ তারা। ওই দশ ওভারে রান আসে ৬২ রান তিন উইকেট হারিয়ে।
ইংলিশ বোলারদের মধ্যে প্লাঙ্কেট ও ওয়েকস সফল ছিলেন। ২জনই নেন তিনটি করে উইকেট যথাক্রমে ৪২ ও ৩৭ রানের বিনিময়ে। ওয়েকস এ ম্যাচেও ভালো বোলিং করেছেন। এরপর ২৪২ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইংল্যান্ডকেও ধুঁকতে হয়েছে। ৮৬ রানের মধ্যে টপ চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে রীতিমতো ইংল্যান্ড শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। ওখান থেকে ম্যাচ টেনে তুলেন বেন স্টোকস ও জস বাটলার। ১১০ রানের পার্টনারশিপ খেলেন তারা। এতেই জয়ের স্বপ্ন আবার জেগে ওঠে ইংল্যান্ডের। বাটলার ৫৯ করে আউট হয়ে গেলেও ক্রিজের এক প্রান্তে বেন স্টোকস দাঁড়িয়ে খেলতে থাকেন নিজের খেলাটা। শেষ পর্যন্ত ৮৬ রানে অপরাজিত থেকে উত্তেজনাপূর্ণ এক ঘটনার মধ্যদিয়ে দলকে পৌঁছে দেন স্বপ্নের লক্ষ্যে। আর সেটা ইংল্যান্ড বিশ^চ্যাম্পিয়ন। স্টোকস ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। অপর দিকে টানা ২ বার ফাইনাল খেলেও শিরোপ স্পর্শ করতে ব্যর্থ নিউজিল্যান্ড। মেলবোর্নে আগের আসরে ভেঙে পরলেও এবার দুর্দান্ত খেলেছে কেন উইলিয়ামসের দল। শিরোপাটা তাদেরই ছিল। কিন্তু ‘ভাগ্য’ ও লাগে। সেটা অনুকূলে না থাকলে কী হয়। এবার শেষ হলো তাদের আফসোসে! কী ভুলগুলো তাদের হয়েছে- সেটা মনে হলে কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা কিউইদের। ওয়ার্ল্ডকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন কেন উইলিয়ামসন।


আরো সংবাদ



premium cement
বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী

সকল