২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

’৯২-এর পর ফাইনালে ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর ইংল্যান্ড অধিনায়ক মরগান ও রুটের উল্লাস : এএফপি -

গ্যালারিতে বার বার উচ্চরিত হচ্ছিল ’৯২, ’৯২! সেবার ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ এতই দাগ কেটেছিল ইংল্যান্ডের, সেটা ঠাওর করা গেছে, গতকাল এজবাস্টনে। বিশ^কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল ’৯২ সালের ফাইনালে যাদের কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয় সেই অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচটা জিতেছে তারা ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে এবং অনেকটাই একরতফাভাবে। কিন্তু এর মধ্যে কি কিছুটা প্রতিশোধ বা অন্যরকম দেখছেন ইংলিশরা? দেখলে দেখতেও পারেন! তবে ওইবারের পর সেমিফাইনালেও যেতে পারেনি আর। ফাইনাল তো দূরে থাক। ফলে এবার ফিরিয়ে আনল তারা ’৯২। আগামী রোববার লর্ডসে তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। আরেক স্বপ্নভঙ্গের গল্প তাদেরও। গত আসরেও দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু এই অস্ট্রেলিয়ার কাছে রীতিমতো বিধ্বস্ত। নিউজিল্যান্ড আসল সময়ে ব্যর্থ। এটা তাদের নামের সাথে এঁটে যাচ্ছে। এবার কী হবে তাহলে। ক্রিকেটের জন্মদাতা দাবি করা ইংল্যান্ডের যেমন আজীবনের স্বপ্ন বিশ^কাপটা একটু ছুঁয়ে দেখা। নিউজিল্যান্ডেরও। তাহলে কে হবে আইসিসির এ মেগা আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন। রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এ উত্তরের জন্য।
তবে ইংল্যান্ড এবার দুর্দান্ত খেলছে। সব দলেরই কিছু না কিছু ছন্দপতন ঘটলেও এওন মরগানের দলে তার আঁচ লাগেনি। নিজ মাঠে অনুষ্ঠিত আসরে দুর্দান্ত খেলে চলেছেন। গতকালের সেমিফাইনালও তারা এক তরফা করে খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়াকে অনেকটা ক্রিকেট শেখানোর মতো করে খেলে ১০৭ বল হাতে রেখে বিশাল ব্যবধানে জিতে নিয়েছে ম্যাচ। টস নাকি ভাইটাল ছিল। কিন্তু সে টসে জিতেছিল অসিরাই। কিন্তু এরপর প্রথম ব্যাটিং করে যে দুর্গতি। কোনোমতে ২২৩ রান করতে সক্ষম হয়েছিল তাও এক ওভার আগেই অল আউট হয়ে। কিন্তু উইকেটে যেকোনো সমস্যা ছিল না তা প্রমাণ দিয়ে খেলেছিল ইংল্যান্ড। অসি বোলাররাও চেষ্টা কম করেনি। কিন্তু ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ওপর কোনো সময়ই প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেনি তারা। জনি বেয়ারস্টো, জেসন রয় সূচনা করে খেলেন ১২৪ রানের জুটি। বেয়ারস্টো ৩৪ রান করে আউট হয়ে গেলেও রয় খেলে যান সেঞ্চুরির লক্ষ্যে। কিন্তু ব্যক্তিগত ৮৫ রানে কামিন্সের বলে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার ভুল সিদ্ধান্তের বলি হতে হয় তাকে। পুল করতে গিয়েছিলেন। রিপ্লেতে দেখা গেছে ব্যাট বা গ্লাবস থেকে অনেক দূর দিয়ে বল যায় কিপারের কাছে। কিন্তু ওই বলেই আউট দেন লঙ্কান ওই আম্পায়ার। রয় এটা মানতে পারেননি। কিছু বাগি¦তণ্ডা হলেও এমন ভুলের শিকার হওয়ার পর মাথা ঠাণ্ডা রাখা কষ্টকর। এরপর মরগান ও রুট মিলে শেষ করে দেন ম্যাচ। রুট ৪৯ আর মরগান অপরাজিত থাকেন ৪৫ রান নিয়ে। ইংল্যান্ড জিতে যায় ম্যাচ ৩২.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে।
এর আগে প্রথম ব্যাটিং করতে নামা ব্যাট হাতে অসিদের পারফরম্যান্স দেখে বিস্ময় জেগেছে। এত বাজে ব্যাটিং বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের আর সহসাই দেখা যায়নি বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের মুখে এক রকম ভেঙে পড়ে। ১৪ রানে তিন টপ অর্ডার হারিয়ে যে প্রেসারের মধ্যে পড়ে যায় বর্তমান অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে আর বের হতে পারেনি। ওই সময় আউট হয়েছিলেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার ও পিটার হ্যান্ডসকম। ৬.১ ওভারেরই মধ্যে ঘটে এমন ঘটনা। ইংলিশ ফাস্ট বোলারদের সুইয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। ক্রিজের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্টিভেন স্মিথ। অন্য প্রান্তে থাকা উইকেটরক্ষক কাম ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি চমৎকার খেলেছেন। কিন্তু আর্চারের এক বাউন্সারে দাড়ি ফেটে রক্ত বের হওয়ার পর দুই দফা ব্যান্ডিস করা হয় তাকে। সেটা নিয়েই স্মিথের সাথে ব্যাটিং করে দলের সম্মান কিছুটা হলেও রক্ষা করেন।
এ জুটি ছিল ১০৩ রানের। এর মধ্যে ক্যারি ৭০ বল খেলে ৪৬ রান করে আউট হয়ে যান। স্মিথ তখনো ছিলেন। এবং খেলেন ৮৫ রানের এক দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস। স্মিথ যদি না দাঁড়াতেন, তাহলে ২০০ রান হতো কি না সন্দেহ। ১১৯ বলে ওই রান করেন তিনি। যার মধ্যে ছিল ৬টি চারের মার। ইংলিশ বোলারদের আগুনঝরা বোলিংয়ের মুখে শুধু এ জুটিই যা খেলেছে। এ ছাড়া স্মিথ ও স্টার্কের ৫১ ও স্মিথ ম্যাক্সওয়েলের ৩৯ রানের জুটি ডাবল ফিগার। আর সব পার্টনারশিপ দ্বিতীয় অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই আউট। গত বিশ^কাপে বাংলাদেশের সাথে হেরে কোয়ার্টারেই উঠতে ব্যর্থ ছিল ইংল্যান্ড। এবার ফাইনালে।
এর আগে অসি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্মিথ, ক্যারি ছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ রান আসে স্টার্কের ব্যাট থেকে। ৩৬ বলে ২৯ করেন। ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে আসে ২৩ রান, যা তিনি করেন ২২ বল খেলে। প্রথম আর্চার, ওয়েকস এর তোপের মুখে উইকেট বিসর্জন ও রান নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর আদিল রশিদের মুখে পড়েন আবার অসিরা। আদিলের স্পিন বিষে নীল হয়ে যায় যেন তারা। রশিদ ১০ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট এবং যখন অনেক স্ট্রাগলের পর রান বাড়িয়ে নেবেন তারা ঠিক সে মুহূর্তে। খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন ক্রিস ওয়েকস। ম্যাচ সূচনায় দুর্দান্ত বোলিং করার সুবাদে।


আরো সংবাদ



premium cement