২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘পশ্চিম বাংলাদেশ’ বানাতে চান মমতা

লোকসভায় বিজেপি
-

ভারতের লোকসভায় ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতা বলেছেন, বাংলাদেশীদের প্রবেশ অব্যাহত রেখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যটিকে ‘পশ্চিম বাংলাদেশ’ বানাতে চান। এ জন্য তিনি বাংলাদেশ থেকে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান আমদানি করেছেন। লোকসভায় বক্তৃতাকালে বিজেপি নেতা দিলিপ ঘোষ আরো দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আসলে প্রধানমন্ত্রী হতে চান। তিনি চান পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ এক হয়ে ‘পশ্চিম বাংলাদেশ’ তৈরি হোক। একটি চক্র পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবারের মতো ১৮টি আসন জিতেছে বিজেপি। গত মঙ্গলবার ভারতের লোকসভায় ‘মোশন অব থ্যাংকস’ পর্বে বক্তৃতা দিতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন দিলিপ ঘোষ।
দিলিপ ঘোষ বলেন, লোকসভা নির্বাচনে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই সহিংস ঘটনা ঘটেছে। ওই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ, একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গণতন্ত্রও। বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে যেতে হলে আপনার বাংলা জানতে হবে। এখন ‘সোনার বাংলা’ পেতে যাচ্ছি আমরা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করতে গিয়ে দিলিপ ঘোষ আরো বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইছেন ভারতে। তিনি বলেন, মমতা বাংলায় এখন নতুন সে­াগান এনেছেন- জয় বাংলা। বাংলাদেশের এই সে­াগান তুলে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে অভিনেতা নিয়ে এসে প্রচার করেছেন। এতেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিসন্ধি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ইভিএম সরিয়ে ব্যালটে ভোট করানোর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবিকেও একহাত নিয়ে দিলিপ ঘোষ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ইভিএমে হারেন, তখন তিনি দাবি করেন ব্যালটে ভোটের। আর ব্যালটের ভোটে হারলে হয়তো নির্বাচনই বন্ধ করে দেবেন। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন প্রকল্প ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি মূলত সংখ্যালঘুদের টার্গেট করেই তৈরি করা হয়েছে। তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিজেপি নাগরিকত্ব ও ধর্মকে মিশিয়ে ফেলছে। এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিলের মধ্য দিয়ে কেবল একটি সম্প্রদায়কে নিশানা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮ জন সংসদ সদস্য পদ জিতেছে বিজেপি। আর তারপর থেকেই তৃণমূলকে কার্যত কোণঠাসা করার কোনো পথই বাকি রাখছে না তারা।
ঐক্যের আহ্বান মমতার : চাপের মুখে পড়ে রাজ্য রাজনীতিতে নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রথম তিনি প্রকাশ্যে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সাহায্য চান। রাজ্য রাজনীতিতেও একসঙ্গে চলার বার্তা দিলেন। এতদিন তিনি বাম-বিজেপি-কংগ্রেসকে একসঙ্গে দেখাতে চেয়েছেন।
বিজেপিকে রুখতে একসঙ্গে চলা দরকার বলে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপিকে রুখতে একসঙ্গে চলা দরকার। একেবারে বিধানসভার অধিবেশন থেকে সুজন চক্রবর্তী ও আবদুল মান্নানদের উদ্দেশে ঐক্যের বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপিকে রুখতে আমাদের একজোট হতে হবে। মমতা বলেন, জাতীয় স্তরে আমরা সব ইস্যুতে কংগ্রেসের পাশে থাকি। এবার এ রাজ্যেও তেমনটাই হবে। আমরা একসঙ্গে চলব। বামদেরও তিনি এই লড়াইয়ে একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়ে বলেন, বিজেপির মতো শক্তিকে রুখতে রাজ্যের কল্যাণে একসঙ্গে চলা জরুরি। জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করব আমরা। মমতা বলেন, আমি মনে করি আমাদের সবার বিজেপির বিরুদ্ধে যুদ্ধে একত্র হওয়া উচিত। এর অর্থ এই নয় যে আমাদের রাজনৈতিকভাবে হাত মেলাতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ আলাদা, সেখানে আদর্শের লড়াই থাকবে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের মতো এ রাজ্যেও বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা একসাথে চলতে পারি।
বাংলায় ভিনরাজ্যের সংস্কৃতি আনার চেষ্টার জন্য বিজেপির সমালোচনা করে মমতা বলেন, বাংলায় ভিনরাজ্যের সংস্কৃতি আনার চেষ্টা চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির। সেই কারণেই ভাটপাড়ায় আগুন জ্বলছে। হিংসা ছড়াচ্ছে বিজেপি।
আসামের নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ আরো ১ লাখ : এক লাখেরও বেশি মানুষকে আসামের খসড়া নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ দেয়া হলো। গতকাল বুধবার এই তালিকা প্রকাশ হয়েছে। মোট এক লাখ দুই হাজার মানুষের নাম প্রকাশ হয় ভারতের নাগরিক পঞ্জির সংযোজিত বহিষ্কার খসড়া তালিকায়।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত তালিকায় তাদের নাম ছিল; কিন্তু এবার অন্তর্ভুক্তির জন্য অনুপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হলেন তারা। আসামের নাগরিক তালিকা ১৯৫১ সালের পরে আর সংশোধিত হয়নি। বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতেই এই তালিকা সংশোধনের দাবি করা হচ্ছে।
যাদের নাম তালিকায় রয়েছে, তাদের আলাদা আলাদা করে জানানো হবে বাড়ির ঠিকানায় চিঠি দিয়ে। তবে বাদ পড়া ব্যক্তিরা সুযোগ পাবেন পুনর্বিবেচনার আবেদনের। ১১ জুলাইয়ের মধ্যে এনআরসি সেবাকেন্দ্রে তারা আবেদন করতে পারবেন।
গত বছর ৩০ জুলাই প্রকাশিত তালিকায় দেখা গিয়েছিল ৪০ লাখের ওপরে মানুষের নাম ওই তালিকায় নেই। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক দেখা দেয়। তালিকায় তাদের নাম পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন লাখ লাখ মানুষ। খসড়া তালিকায় ২ দশমিক ৯ কোটি মানুষের নাম রয়েছে। আবেদন জমা পড়েছিল ৩ দশমিক ২৯ লাখ মানুষের।
সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে আসামের নাগরিক পঞ্জি তৈরি হচ্ছে। চূড়ান্ত তালিকা ৩১ জুলাই প্রকাশ হবে। তালিকায় নাম নেই এমন যেকোনো ব্যক্তি বহিষ্কারের অর্ডারের প্রত্যয়িত কপি নিয়ে বিচারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেই সাথে আবেদনের প্রেক্ষিতটিও পেশ করতে হবে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাগরিক তালিকা নিয়ে নির্বাচনের আগেই তার বক্তব্য জানিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘একজনও প্রকৃত ভারতীয়র নাম নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ যাবে না’। মোদির এমন বক্তব্যে বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কিছু রয়েছে কি না তা জানতে আরো সময় লাগবে।
ভারত দাবি করে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিল, দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে আবাস গড়ে এই উদ্বাস্তুরা। তাদেরকে এই ৪৮ বছর পরে নাগরিক পঞ্জি করে বাদ দিতে চাইছে বিজেপি সরকার। এনআরসি কাণ্ড নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরেই তীব্র সমালোচনায় পড়ে মোদি সরকার, ফের ক্ষমতায় এসে আসামের নাগরিক পঞ্জি যাছাই-বাছাই শুরু করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement