২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

৩৮১ তাড়া করে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় ৩৩৩

ডেভিড ওয়ার্নার ১৬৬ : মুশফিক অপরাজিত ১০২
উইকেট নেয়ার পর সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজ ও মুশফিকের উল্লাস : এএফপি -

বিশকাপের রেকর্ড করেই জিততে হতো বাংলাদেশকে। ৩৮১ চেজ করে জেতা সহজসাধ্য না। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের বিপক্ষে। তবু এমন এক ম্যাচকে উপভোগ্য করে তুলে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। কারণ নটিংহ্যামে জয়ের জন্যই খেলছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটিংটা সেভাবেই হয়। দুর্ভাগ্য তাদের। ফিল্ডিংটা যদি আরেকটু ভালো এবং বোলিংটা যদি আরেকটু নিশানায় রেখে অস্ট্রেলিয়াকে সাড়ে ৩০০ রানের মধ্যেও আটকে দেয়া যেত তাহলেও এ ম্যাচ হয়তো জিতেই যেত বাংলাদেশ। কিন্তু ৩৮২ করে জয় তোলা শুধু বাংলাদেশ কেন, অন্য যে কেউ হলেও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে এ ম্যাচে কয়েকটি বিষয় ছিল লক্ষণীয়। ডেভিড ওয়ার্নারের ১৬৬, মুশফিকের অপরাজিত ১০২ ছাড়াও যে বিষয়টা বিস্মিত করেছে সেটা সাকিব প্রসঙ্গ। সাকিবকে আউট করার পর অজিরা যেভাবে উল্লাস করেছে, তাতে মনে হচ্ছিল বিশ^কাপটাই বোধহয় নিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের। এতটা ভয় তারা সাকিবকে পেয়েছে, সেটা কল্পনাতীত। ওরা জানত, সাকিব ক্রিজে থাকা মানে ৩৮১ রান ফ্যাক্টর না বাংলাদেশের জন্য। এ জন্য ওদের টার্গেটই ছিল সাকিবকে যেকোনো মূল্যে দ্রæত আউট করে দেয়া। ৪১ রান করে আউটও হয়ে যান তিনি। এরপর রান তুলেছে। কিন্তু জয় পেতে যে গতি প্রয়োজন, সেটা ছিল না। তবু ৩৩৩ রান করেছে ওই বিশাল স্কোর তাড়া করতে গিয়ে এবং অলআউট হয়নি, এটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সাফল্য। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সাফল্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যেভাবে ব্যাটিং করে জিতে গিয়েছিল, তাতেই অজিদের টেনশন বেড়ে যায়। অবশেষে ৪৮ রানে জয়ের মাধ্যমে সেটা থেকে মুক্তি পেয়েছে তারা। এ জয়ে অস্ট্রেলিয়া উঠে গেছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। তাদের পয়েন্ট ৬ ম্যাচে ১০। বাংলাদেশ সেই আগের স্থানেই ৫।
সাকিব আউট হওয়ার পরও যে সম্ভাবনা ছিল সেটা মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহকে ঘিরে। এ জুটি খেলেছিলেন ১২৭ রান। মাহমুদুল্লাহ দলের প্রয়োজনীয় রানের দিকে চোখ রেখে ব্যাটিংটা করে যাচ্ছিলেন। মুশফিক দিচ্ছিলেন তাকে সাপোর্ট। কিন্তু ৫০ বলে ৬৯ করা মাহমুদুল্লাহ বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হলে সাব্বিরের উপর দ্বায়িত্ব বর্তায়। কিন্তু প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান এ ব্যাটসম্যান নাইলের বলে। ফলে হ্যাটট্রিক চান্সও এসেছিল। কিন্তু মেহেদি সেটা আর হতে দেয়নি। আসলে মিচেল স্টার্ক ও কামিন্স দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। বিশেষ করে লাইন ও নিশানায় বল রেখে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ক্রিজে আটকে রেখে সফল হন। সেখানেই তারা সাফল্য দেখায়। ওই দুই ব্যাটসম্যান ছাড়া তামিম এদিন হাফ সেঞ্চুরি করেন। ৭৪ বলে করেছিলেন তিনি ৬২। এ দিন কড়া মার্কিয়ে ছিলেন লিটনও। তিনিও আউট হয়ে যান ২০ করে। তবে রান আউট দিয়ে সূচনা করে গিয়েছিলেন সৌম্য। স্টার্ক, নাইল ও স্টয়নিস নেন দুটি করে উইকেট।
এর আগে অস্ট্রেলিয়া যা করেছিলেন সেটাতেই তারা নিরাপদ অবস্থানে চলে গিয়েছিল। পার্থে গত বিশ^কাপে আফগানদের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার করা ৪১৭/৬ বিশ^কাপের ইতিহাসের এ পর্যন্ত রেকর্ড রান এ ছাড়াও ৪০০ এর উপরে আরো তিনটি (ভারত ৪১৩, দ.আফ্রিকা ৪১১. দ আফ্রিকা ৪০৮) স্কোর আছে। তবে অস্ট্রেলিয়া তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর সংগ্রহ করেছে এ ম্যাচে। নটিংহ্যামে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের স্কোর ৩৮১/৫। এ আসরে বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন আরো একটা তুফান গিয়েছে। সেটা করেছিল ইংল্যান্ড। ৩৮৬/৬ করেছিল তারা। ওই ম্যাচে ইংল্যান্ডই জিতেছে। অত রান কেন, সাড়ে ৩০০ বরাবর রানও চেজিংয়ে কোনো রেকর্ড নেই বিশ^কাপে। বাংলাদেশ ৩০০ এর আগেই অল আউট হয় ওই ম্যাচে। তাহলে অজিদের বিপক্ষে কী হবে? এ প্রশ্নটা ছিল সবার মুখে মুখে। অজিদের করা প্রথম ইনিংসে শেষ ওভারের ঠিক আগে বৃষ্টি নেমে আসে। কিছুক্ষণ পর থেমেও যায়। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ওই বিশাল স্কোর সংগ্রহ করে। অস্ট্রেলিয়ার ওই রান সংগ্রহের পেছনে তিনজন ব্যাটসম্যানেরই অবদান বেশি। অ্যারন ফিঞ্জ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ওসমান খাজা। ওপেনাররা সংগ্রহ করে ১২১ রান এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ওয়ার্নার ও ওসমান করেন ১৯২। এ দুই জুটিই শেষ করে দেয় বাংলাদেশের বোলারদের লাইন ও নিশানা। অথচ সূচনা থেকে ভালোই করছিলেন তারা। বেশ কোণঠাসায় রেখেছিলেন তারা অজিদের। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ৫৩ রান নিতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা। দুই ওপেনার অতটা অ্যাটাকিং মুডে খেলতে পারেনি। মাশরাফি, রুবেল, মুস্তাফিজরা বেশ সফল ছিলেন এ ক্ষেত্রে। কিন্তু দ্বিতীয় জুটিতে সব শেষ হয়ে যায়। অবশ্য দুই ব্যাটসম্যানই খেলেছেন চমৎকার। ব্যাটসম্যানরা যদি ভালো খেলতে থাকে, গ্যাপে বল রাখে তাহলে ফিল্ডারদেরও কিছু করার থাকে না। চমৎকার ব্যাটিং উইকেটের পূর্ণ সুবিধাই তারা নিয়েছেন, টসে জিতে প্রথম ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে। প্রথম ১০০ রান পূর্ণ করেন তারা ৯৯ বলে। ২৭.২ ওভারে ১৫০ করেছিলেন তারা।
এ দিন ওয়ার্নার ছিলেন সতর্ক। দেখেশুনেই খেলেন। ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে সেঞ্চুরি করেন ১১০ বলে। ১৩৯ বলে ১৫০ পূর্ণ করে ১৬৬ রানে গিয়ে আউট হন তিনি। ওসমান খাজা অবশ্য ওয়ার্নারের ১৫০ করার আগেই হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। ৫০ বলে ৫০। তার ইনিংস সাঝানো ১৪৭ বলে। যার মধ্যে ছক্কা ৫ ও চার ১৪টি। খাজাও কম করেননি। ৮৯ করে আউট হয়েছেন। তার ইনিংসে রয়েছে ১০টি চার। ৭২ বলে ওই রান করেন তিনি। আসলে বোলারদের এদিন করার ছিল না কিছুই। যেভাবেই বল দিয়েছে ব্যাটসম্যানরা সেটাই ইচ্ছেমতো খেলেছেন। কোনো বোলারই প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি তাদের উপর। মাঝে পার্টটাইম বোলার সৌম্য সরকার ভালো করেছেন। তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৮ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে ওই রান নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া রুবেল ৯ ওভারে ৮৩, মুস্তাফিজ ৯ ওভারে ১/৬৯, সাকিব ৬ ওভারে ৫০ ও মেহেদি হাসান ১০ ওভারে দিয়েছেন ৫৯ রান। মাশরাফি ৮ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। ডেভিড ওয়ার্নার এ ম্যাচেও সেরা পারফরমারের পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশের লিগ পর্বে বাকি আর ৩ ম্যাচ। আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান।


আরো সংবাদ



premium cement