২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নতুন স্তর নিয়ে আইএমএফ

ভ্যাটের একটি হারই কার্যকর করা উচিত : আইএমএফ

-

নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি বলেছে, বহুস্তর বিশিষ্ট ভ্যাট বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। বাংলাদেশে বহুস্তর বিশিষ্ট যে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে তা ‘ট্যাক্স অন ট্যাক্স’ হিসেবে বিবেচিত করা যায়। কারণ এর ফলে ভোক্তাদের একাধিকবার কর দিতে হবে। এতে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। তাই বাংলাদেশের উচিত ভ্যাটের একটি হারই কার্যকর করা। একই সাথে আইএমএফের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ, ঋণখেলাপিদের এক্সিট দেয়ার নীতিমালা, বাজেটে অর্থায়ন নিয়েও সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
আইএমএফের আর্টিক্যাল ফোরের একটি মিশন গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে এ বিষয়গুলোর অবতারণা করে বলে জানা গেছে। আইএমএফের পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের ডিভিশন চিফ ডাইসাকু কিহারা। অন্য দিকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। এর আগে আইএমএফ প্রতিনিধিদলটি অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথেও বৈঠক করেন। এ সময় অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
আগামী অর্থবছরে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এ আইনে চারস্তর বিশিষ্ট ভ্যাট কার্যকর করা হবে। এই স্তরগুলো হলোÑ ৫, সাড়ে ৭, ১০ ও ১৫। ভ্যাটের নতুন হার আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। এ বিষয়ে আইএমএফের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় কোনো দেশেই স্তরভেদে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের নজির নেই। ভ্যাট কখনো একাধিক স্তরের বাস্তবায়ন করা যায় না। সরকার যখন ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করে সেখানে ভ্যাটের একটি হারই নির্ধারণের কথা উল্লেখ ছিল। আইএমএফের পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়Ñ এখন স্তরভিত্তিক ভ্যাটের হার কার্যকর করার কারণে আগামীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির পাবে কি না? এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে নতুন বাজেট বাস্তবায়নের কারণে কোনো জিনিসের দাম বাড়বে না। এ সময় আইএমএফ পক্ষ থেকে বলা হয়, স্তরভিত্তিক ভ্যাট ‘ট্যাক্স অন ট্যাক্স’ হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এর ফলে ক্রেতাদের একাধিক কর দিতে হতে পারে।
অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আইএমএফের পক্ষ থেকে বাজেট অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজেটে যে বিশাল অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে তা কিভাবে মেটানো হবে। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য মূলত দু’টি খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে। এর একটি হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ। অন্যটি হচ্ছেÑ সঞ্চয়পত্র থেকে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। অন্য দিকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে ২৭ হাজার কোটি টাকা। সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আইএমএফ প্রতিনিধিরা এ সময় বলেন, ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট রয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার ব্যাংক থেকে কিভাবে ঋণ নেবে, আর ঋণ নিলে কী তারল্য সঙ্কট আরো প্রবল আকার ধারণ করবে কি না। এর জবাব হিসেবে বলা হয়, সরকার চেষ্টা করবে ব্যাংক থেকে যেন কম ঋণ নেয়া হয়। এ জন্য রাজস্ব আদায় জোরদার করা হবে।
আইএমএফের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণও জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়, খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য সরকার একটি নীতিমালা করেছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিটের কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকায়। তিন মাসে বেড়েছে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ২২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement