২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অ্যামটবের সংবাদ সম্মেলন

রাজহাঁসের মরণ দশা বাজেটে

-

টেলিযোগাযোগ খাতে প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) বলেছে, বাজাটে প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক নীতিমালা বর্তমান ও নতুন গ্রাহকদের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপাবে। এতে ‘রাজহাঁসের’ মরণ দশা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন অ্যামটব প্রতিনিধিরা।
সংগঠনের মহাসচিব এস এম ফরহাদ বলেন, ‘মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি সরকারের জন্য রাজহাঁস, এটি সোনার ডিম দেয়। বাজেট বক্তৃতায় রাজহাঁস থেকে পালক তোলার কথা বলা হয়েছে, রাজহাঁস যেন ব্যথা না পায়। এ খাত ৬ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপিতে অবদান রাখছে। সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে পালক তুলে শুধু ব্যথা দেয়া নয়, মরণ দশা হয়েছে। এই রাজহাঁসকে সরকার যেন কোলে করে রাখে, যেন বেশি রেভিনিউ দিতে পারে।’
এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় কর আদায় প্রসঙ্গে ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের অর্থমন্ত্রী জ্যঁ কোলবার্টের একটি উক্তির কথা স্মরণ করিয়ে বলেছিলেন, ‘রাজহাঁস থেকে পালক উঠাও যতটা সম্ভব ততটা। তবে সাবধান! রাজহাঁসটি যেন কোনোভাবেই ব্যথা না পায়।’
বাজেটে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিমের ওপর কর দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০০ টাকা এবং মোবাইল কোম্পানির আয়ের ওপর সর্বনি¤œ শুল্ক ০.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফরহাদ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম কর ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অবিবেচনাপ্রসূত হারে কর হার বৃদ্ধি ও নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপ ফোর-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের পুরো প্রক্রিয়াটিকেই হুমকির মুখে ফেলবে।’
আয়ের সঞ্চিতির ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করায় তা পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় করপোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন অ্যামটব মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘নতুন করে আরোপিত এই করের বোঝা কমিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যূনতম রিজার্ভে অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রদানে বাধ্য করবে, যা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ কমিয়ে আনবে। আয়ের সঞ্চিতির ওপর করারোপ মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দ্বৈত করারোপ করবে। যেহেতু ইতোমধ্যেই নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিয়ে আসছে, নতুন করে আরোপিত করের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ কর প্রদান করতে হবে।’
সরকার দেশের অর্থনীতি ও ডিজিটাল বাংলাদেশের অবকাঠামোর মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত টেলিযোগাযোগ খাতকে সহায়তা করার স্থলে বরং প্রস্তাবিত কর ও শুল্ক কাঠামো আরোপের মাধ্যমে ‘পঙ্গু’ করে দেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কোনো দাবি মানা হয় না, আরো বেশি ট্যাক্স ইমপোজ করা হয়েছে। অনেকে বলে, প্রফিট করি, কিন্তু দেখাই না। তবে কোনো অডিটে বের হয়নি যে আমরা টাকা পাচার করছি। আমাদের পাশে কেউ নেই কথা বলার, একমাত্র প্রেস (সংবাদপত্র) ছাড়া।’
মোবাইল কোম্পানির আয়ের ওপর সর্বনি¤œ শুল্ক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘লস করার পর আমার ২ শতাংশ দিলে ক্যাপিটাল থেকে দিতে হবে। এটি খুব আনফেয়ার কাজ হচ্ছে। যারা প্রফিট করছে না তাদের ওপর প্রভাব বেশি পড়বে।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘যে ট্যাক্স এসেছে ছোট অপারেটর আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সিমের ওপর যে অতিরিক্ত ট্যাক্স বসানো হয়েছে বড় প্রভাব ফেলবে।’
গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাদাত হোসেন, টেলিটকের উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল আলমসহ অপারেটরদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement