২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেমিফাইনালের লড়াইয়ে বাংলাদেশ

সাকিবের ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি
সাকিবের সেঞ্চুরি ও লিটনের দারুণ এক ইনিংসে সহজে জিতল বাংলাদেশ : ইন্টারনেট -

ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন আর পাত্তা পায় না বাংলাদেশের কাছে। টনটনের গত রাতের ম্যাচসহ টানা পাঁচ ম্যাচে ক্রিস গেইলদের হারাল বাংলাদেশ। বিশ^কাপের সেমিফাইনালে যেতে জয় বড় প্রয়োজনও ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩২১ রানের চ্যালেঞ্জ টপকে যায় তারা খুবই সহজে। ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন সাকিব আল হাসান। আসলে দিনটি ছিল বোধহয় তারই। এ ম্যাচে ওয়ানডেতে ছয় হাজার রান ও ২০০ বা ততধিক উইকেট নেয়ার একমাত্র ক্রিকেটার এখন সাকিব। তার পরে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস। এ ছাড়াও বিশ^কাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করার কৃতিত্বও নিয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের আত্মবিশ^াস ছিল অনেক। টস জেতা থেকে শুরু করে দুর্দান্ত ফিল্ডিং, এরপর অসাধারণ ব্যাটিং করে জয় তুলে নেয় ৫১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে। সাকিব ১২৪ ও লিটন দাস ৯৪ রানে থাকেন অপরাজিত। এ জুটি খেলেন অপরাজিত ১৮৯ রানের পার্টনারশিপ। এতে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন জিইয়ে রাখল মাশরাফিরা। পাঁচ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট। এবং পয়েন্ট টেবিলের পঞ্চম স্থানে তারা।
খেলায় সাধারণত যে ভুলগুলো হয়ে থাকে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টিতে ম্যাচ না হওয়ার গ্যাপে সম্ভবত সেগুলো শুধরে নিয়েছেন। নতুবা বিগ ম্যাচ। কিন্তু বাংলাদেশ খেলল নিখুঁত। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং। কোথায়ও ভুল করেননি তারা। বরং যোগ্যতার দল হিসেবে এবং বাংলাদেশ যে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে অনেক ভালো ক্রিকেট খেলে সেটা প্রমাণ করেই জিতেছে ম্যাচ। খেলায় বিশাল স্কোর সংগ্রহ করেও ক্রিস গেইল, জেসন হোল্ডার, শেই হোপ, লুইস, গ্যাব্রিয়েলরা অসহায় হয়ে পরেন বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের সামনে। টনটনে এ ম্যাচে প্রথম ব্যাটিং করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩২১ রানে আটকে দিয়ে তামিম ও সৌম্য সরকার নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে। কিন্তু এ জুটি ৫২ করেই বিচ্ছিন্ন। এরপর সাকিব এসে যোগ দেন তামিমের সাথে। তারা খেলেন দায়িত্বপূর্ণ ৬৯ রানের পার্টনারশিপ। এ সময় ৪৮ করে তামিম আউট হলে মুশফিক নেমেই আউট। ব্যাস, বাংলাদেশ ইনিংসে আউটের ঘটনা ওই পর্যন্ত। এ সময় সাকিবের সাথে এসে যোগ দেন লিটন। মোহাম্মাদ মিথুনের স্থানে লিটনকে চয়েস যে ছিল যথার্থ তার প্রমাণ দিয়েছেন এ ব্যাটসম্যান। প্রথম সাকিব যেহেতু হাতখুলে খেলছিলেন, তাই সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। সাকিব ৮৩ বলে সেঞ্চুরি করার পর এবার শুরু তার পর্ব। প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করে এরপর সেঞ্চুরির পানেই ছুটছিলেন। কিন্তু টার্গেট কম থাকায় আর তা হয়ে ওঠেনি। ৯৪ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে। ৬৯ বলে চার ছক্কা ও ৮ চারের সাহায্যে ওই রান করেন তিনি। সাকিব ১২৪ করেন ৯৯ বলে। তার ইনিংসে ছিল ১৬টি চারের মার। এর আগে ৪০ ওভারেই ৩০০ প্লাস রান করে ফেলে বাংলাদেশ। এরপর ১০ ওভার? জয়ের জন্য রানের তো খুব একটা প্রয়োজন ছিল না। ফলে ৪১.৩ ওভারেই পৌঁছায় তারা লক্ষ্যে।
এর আগে প্রথম ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের পেসারদের তোপের মুখে ছিল ক্যারিবিয়ানরা। বিশেষ করে মাশরাফি ও সাইফুদ্দিন চমৎকার বোলিং করেন। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন তাদের ওয়ান ডাউনে নামা শেই হোপ। বাংলাদেশকে বড় চেনা তার। বিগত টানা চার ম্যাচের দু’টিতে সেঞ্চুরি, বাকি দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে। যদিও একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চার ম্যাচের প্রথমটি সিলেটে, পরের তিনটি বিশ^কাপের প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট আয়ারল্যান্ডে। সেই হোপ আবারো জানান দিলেন, বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে তিনি কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নতুবা আবারো বিগ স্কোর? মুস্তাফিজের লেগ সাইটে দেয়া বল যেভাবে উড়িয়ে মেরেছিলেন, ওটা ছক্কা হয়ে যাওয়ারই কথা। কিন্তু সেভাবে ব্যাটে লাগেনি। ক্যাচ হয়ে আউট হওয়ার সময়Ñ তার নামের পাশে রান লেখা ওঠে ৯৬। নার্ভাস ইনিংসও বলা যায়। নাইন্টির ঘরে এসে কিছুটা টেনশনে ছিলেন। বেশ কিছু বলও নষ্ট করেছেন। সূচনা থেকে যেভাবে ইনিংস টেনে নিয়ে এসেছিলেন, সেভাবে খেললে সেঞ্চুরি হয়েই যেত। কিন্তু পারেননি। আসলে বাংলাদেশ যাকে নিয়ে হোম ওয়ার্ক করবে, তাকে বাদ দিয়ে যত ব্যস্ততা গেইলকে নিয়ে। অথচ গেইল এ ম্যাচে পুরাপুরি ফিট ছিলেন না, তা তার ব্যাটিংয়ে অনুমান করা গেছে। কম খেলেননি বল। ১৩ বল খেলেও কোনো রান না করে আউট। শুধু সাইফুদ্দিনই নন। মাশরাফির বলেও পরাস্ত হয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত উইকেট দিয়েছেন সাইফুদ্দিনকে। ওই সময় ক্রিজে আসেন শেই হোম। যোগ দেন এসে লুইসের সাথে। ইনিংসে কাজের কাজ করে দিয়েছেন ওই শেই হোপ! ওপেনিং জুটি ৬ রানের পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রান ওঠে ১১৬। এখানেই ক্যারিবিয়ান ইনিংস টেনে তোলেন ওই (শেই হোপ ও লুইস) দুই ব্যাটসম্যান। অথচ প্রথম পাওয়ারপ্লেতে তাদের রান ছিল মাত্র ৩২/১। এখান থেকে দলীয় স্কোর ৩২১/৮ নিয়ে যাওয়া মূলত ব্যাটসম্যানদেরই কৃতিত্ব। ইনিংসে হোপ এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে খেলিয়েছেন, অন্যদের। সেঞ্চুরি না পেলেও তার কৃতিত্ব ভুলে যাওয়ার মতো নয়। ৬৭ বলে ৭০ করে লুইস আউট হয়ে যাওয়ার পর হোপ খেলেন আরো একটি চমৎকার পার্টনারশিপ। সেটা ছিল হেটমায়ারের সাথে। ৮৩ রানের ছিল ওটা। মূলত ওই পার্টনারশিপে ক্যারিবিয়ানরা ৩০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। হেটমায়ার ৫০ করে আউট হন। হেটমায়ার আউট হওয়ার পর নেমেছিলেন আন্দ্রে রাসেল। ভাগ্যিস মুস্তাফিজের দ্বিতীয় বলেই আউট তিনি। নতুবা স্কোর সাড়ে ৩০০ হয়ে গেলে করার কিছু থাকত না। তবে অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ঠিকই পুষিয়ে দিয়েছেন। ১৫ বলে ৩৩ রানের এক ইনিংস খেলে দলকে ৩০০ প্লাসে যেতে সহায়তা করেন। হোপ আউট হন একেবারে শেষ মুহূর্তে। দলের রান তখন ২৯৭। ৪৭তম ওভারের শেষ বলে আউট হয়েছিলেন তিনি। ১২১ বলে ৯৬ করে আউট হন তিনি।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এ দিন মাশরাফি, মুস্তাফিজ, সাইফুদ্দিন, সাকিব সবাই ভালো করেন। তবে ক্যারিবিয়ানরা বিগ শট নেয়ার চেয়ে শট রানে বেশি মনযোগী হয়ে স্কোর বাড়িয়ে নেয়। হতে পারে এটা তাদের গেম প্লানের অংশবিশেষ!
মুস্তাফিজ নেন তিন উইকেট ৫৯ রানের বিনিময়ে। ৯ ওভারে ওই রান দেন তিনি। সাইফুদ্দিন অবশ্য ১০ ওভারই করেন। তিনিও নেন তিন উইকেট তবে সেটা ৭২ রানের বিনিময়ে। মাশরাফির হিসেবি বোলিংয়ে ৮ ওভারে দেন ৩৭ রান। এ ছাড়া সাকিব ৫৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছেন সাকিব অনায়াসে। সেঞ্চুরি ও বল হাতে দুই উইকেট। এ সেঞ্চুরিতে সাকিব ব্যাটিংয়ে এককভাবে শীর্ষে অবস্থান করছেন রান সংগ্রহের দিক দিয়ে। রোহিত শর্মাকে টপকে ওই শীর্ষ অবস্থান তার। উল্লেখ্য, এর আগে বিশ^কাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চেজ ছিল ৩১৯ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গত বিশ্বকাপে নেলসনে। কাল সেটা টপকে গেছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement