২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ব্যাংকে টাকা আছে, তবে লুটে খাওয়ার মতো নেই : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিপরিষদের সভা : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কথা এসেছে ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংকে টাকা থাকবে না কেন? অবশ্যই টাকা আছে। তবে লুটে খাওয়ার টাকা নেই। আর যারা লুটে নিয়েছে তাদেরকে আমরা চিনি। তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে অযথা কিছু কিছু কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো। বাজেট যদি সঠিকই না থাকে, মাত্র ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এত উন্নতি করল কিভাবে?
সংসদে গতকাল সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাজেট নিয়ে সংসদে ও বাইরে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে এ কথা বলেন।
বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য দেন। গত বৃহস্পতিবার সংসদে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পর রোববার থেকে ২০১৮-১৯ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়ে গতকাল শেষ হয় এবং সম্পূরক বাজেট পাস হয়।
সম্পূরক বাজেট পাস ও মঞ্জুরি বরাদ্দসহ পাস হওয়ার আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ও সংশোধিত বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা, অনেক কথা বাইরেও হচ্ছে, এখানেও হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এই বাজেট কিছুই না। যারা এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে কথা বলছেন তাদের কাছে আমার এটাই প্রশ্ন, বাজেট যদি সঠিকই না থাকে মাত্র ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এত উন্নতি করল কিভাবে?
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ বলছেন বাজেট দিয়েছেন বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বাজেট বাস্তবায়ন একটা বিষয় আছে। আমরা বাজেট উপস্থাপন করছি জুন মাসে। এক বছর পর আবার বাজেট দেবো। এক বছরে আমাদের যে বাজেট বিশেষ করে উন্নয়ন বাজেট যা আমরা বস্তবায়ন করি। আমাদের একটা নিয়ম আছে মাঝামাঝি সময় একটা হিসাব নিই। পরিমার্জন সংশোধন করে থাকি যাতে অর্থটা যথাযথভাবে কাজে লাগে। সেটাই সম্পূরক হিসেবে পরিবর্তিত উপস্থাপন করে থাকি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বলা হচ্ছে বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারি না, সেটা যদি বলে, তা হলে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেয়েছিলাম ২০০৮ সালে। আজকে সেখানে ৫ লাখ টাকার ওপরে চলে গেছে বাজেটে। এটা তা হলে আমরা করলাম কিভাবে যদি আমাদের বাস্তবায়নের দক্ষতাই না থাকে। কাজেই আমি বলব উন্নয়নের সুযোগটা সবাই নিচ্ছে। বিদ্যুৎ নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন, যে বিদ্যুৎ এত উৎপাদন হলো তা হলে শতভাগ পায় না কেন। বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো সবসময় চালু থাকে না। প্রত্যেক বিদ্যুৎকেন্দ্র সংস্কার করতে হয়, বন্ধ থাকে। আজ ৯৩ ভাগ মানুষ কিন্তু বিদ্যুৎ পাচ্ছে। গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশও হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটা কথা এসেছে যে, ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংকে টাকা থাকবে না কেন। অবশ্যই টাকা আছে। লুটে খাওয়ার টাকা নেই। আর যারা লুটে নিয়েছে তাদেরকে আমরা চিনি। কেউ দেশান্তর হয়ে পড়ে আছে অথবা দুর্নীতির দায়ে কারাগারে বন্দী। অনেকেই ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে আর কোনো দিন দেয়নি। এ রকম বহু ঘটনা আছে। সময় এলে এ ব্যাপারে আমরা আরো আলোচনা করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলেই আজকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমরা অনেক উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি, যা দেখে বিশ্ব অবাক হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। যেখানে যাই সেই কদরটা পাই, দেশবাসী সেই সম্মানটা পায়। অযথা কিছু কিছু কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো। আমরা যদি কাজই না করতাম দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে কমে ২১ ভাগে নেমে আসত না। ২১ ভাগ থেকে আরো নামাব।
প্রধানমন্ত্রী বাজেটকে উচ্চাভিলাষী আখ্যায়িত করে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে বলেন, কোনো মানুষের যদি উচ্চাভিলাষ না থাকে সে কোনো অর্জন করতে পারে না। উচ্চাভিলাষ না থাকলে এসব অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। তবে বিগত বছরগুলোয় বাজেট বাস্তবায়ন, পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে আমাদের লক্ষ্যগুলো সবসময় বাস্তবভিত্তিক ছিল।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো বাজেটে কিছুটা সংশোধন, সংযোজন এবং পরিমার্জনের প্রয়োজন হয় এবং আমরা প্রতি বছরই তা করে থাকি। এটা আমাদের দেশে বলে নয়, পৃথিবীর সব দেশে বাজেটে প্রস্তাবনা দেয়। যেমন আমি এ বছর যে প্রস্তাবনা নিয়ে আসছি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য। সেখানে আমরা একটা ধারণা করি যে আমরা কত রাজস্ব আয় করব। সেই সাথে উন্নয়নের বাজেটটা আমরা ঠিক করি। কোন লক্ষ্যে পরিচালিত হবে সেটা সুনির্দিষ্ট করি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমরা যে বাজেট দিয়েছিলাম, সেটাতেই পরিবর্তন পরিমার্জন করে সংশোধনী বাজেটের প্রস্তাব আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে গ্রস বরাদ্দ ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা এবং নিট বরাদ্দ ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় অন্যান্য বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নিট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ৩৭টি মন্ত্রণালয়ে অথবা বিভাগের গ্রস বরাদ্দ ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গ্রস বরাদ্দ ৩৬ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে নিট ২২ হাজার ৩৩ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে নিট ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। ৩৭টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বিপরীতে সম্পূরক মঞ্জুরি ও বরাদ্দের দাবি ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। তন্মধ্যে দায়যুক্ত ব্যয় ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ১৪ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। তিনি মঞ্জুরি দাবিগুলো যেন পাস করে দেয়া হয় সে জন্য স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যা খরচ হয়ে গেছে সেটার কিছুই করার নেই। তা যেন পাস করে দেন। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এগিয়ে যাবো।
কোনো দুর্নীতির প্রমাণ আমার বিরুদ্ধে কেউ করতে পারেনি : পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা ছাত্রদল করতেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একজন বালিশতত্ত্ব নিয়ে এসেছেন। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই ঘটনায় যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তার কিছু পরিচয় আমরা পেয়েছি। এক সময় তিনি বুয়েটে ছাত্রদলের নির্বাচিত ভিপিও নাকি ছিলেন। তাকে সেখান থেকে সরানোও হয়েছে। যখনই তথ্য পেয়েছি, সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।
সংসদে চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে পাসের সময় ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্পূরক বাজেট পাসের আগে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেন এবং একটি ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে (বিএনপিতে) এমন এমন লোক রয়ে গেছেন, জন্ম থেকেই তাদের চরিত্র দুর্নীতির। তার কারণও আছে। এই দলটি (বিএনপি) যিনি করেছিলেন, তিনি সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় সংবিধান ও সামরিক আইন লঙ্ঘন করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খন্দকার মোশতাকের সাথে হাত মিলিয়ে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিদের ইনডেমনিটি অর্ডারটিকে ভোটারবিহীন পার্লামেন্টে আইন হিসেবে পাস করিয়ে দিয়েছিলেন। অস্ত্রের মুখে সায়েম সাহেবকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসেছিলেন জিয়া। ক্ষমতা দখল করার পর তাদের হাতে যে দল গড়ে ওঠে, তাদের চরিত্রটা জানা উচিত। তাদের উৎস্যটাই হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির মধ্য থেকে উঠে আসা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর থেকে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে যারা দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, সব জায়গায় এই ঝঞ্ঝাট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে গেছে।
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতির ব্যাপারে তিনি বলেন, বালিশতত্ত্ব নিয়ে আমারও একটি প্রশ্ন আছে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র সেখানে গড়ে উঠছে, সেখানে আর কিছু না পেয়ে পেল বালিশ! এটা কোন বালিশ? কী বালিশ, সেটাও প্রশ্ন? এটা কি তুলার বালিশ? কোন তুলা? কার্পাস তুলা না শিমুল তুলা নাকি সিনথেটিক তুলা, নাকি জুটের তুলা। আর বালিশ নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করতে দেখলাম। এত মানুষ, এত বালিশ একদিনে কিনে ফেলল কিভাবে? এই বালিশ কেনার টাকার জোগানদার কে তা আর বলতে চাই না।


আরো সংবাদ



premium cement
আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ

সকল