১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অভিযোগের শেষ নেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের

সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথে সমন্বয়হীনতা ; নেতাদের বাদ দিয়ে এমপি-মন্ত্রীদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে
-

অভিযোগের শেষ নেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের। কমিটি গঠনে সমন্বয়হীনতা, অনুপ্রবেশকারীদের অগ্রাধিকার ও মদদ দেয়া, সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন, নেতাদের বাদ দিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের গুরুত্ব দেয়া, কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ পাঠালে বাস্তবায়ন না হওয়া, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও কেন্দ্র থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়াসহ একগুচ্ছ অভিযোগ তৃণমূলের।।
দলটির তৃণমূলপর্যায়ের নেতারা মনে করেন, তৃণমূলকে আওয়ামী লীগের প্রাণ বলা হলেও সেই তৃণমূল নেতাদের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। যখন কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন হয় তখন কেন্দ্র থেকে চিঠি ইস্যু করা হয় কিংবা বৈঠক করে গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। কিন্তু তৃণমূলে নানা সমস্যা থাকলেও সেগুলো সমাধান করা হয় না। বছরের পর বছর সমস্যা জিইয়ে থাকে। সমাধানের উদ্যোগ নিলেও মাঝপথে অনেক সময় থেমে যায়। তৃণমূলের সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রে কোনো সুপারিশ পাঠালে তা কার্যকর হয় না। গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জেলা-উপজেলার সুপারিশ ৯০ দিনের মধ্যে যদি কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত না দেয় তাহলে সেটা বাতিল হয়ে যায়। এটার পরিবর্তন করা দরকার। তৃণমূলের সুপারিশ ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না দিলে তা কার্যকর হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ঢাকা বিভাগের সব জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সাথে কেন্দ্রের বিশেষ সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা ও মহানগর নেতারা তৃণমূলের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করার জন্য সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের দায়ী করেন তারা। সভায় গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক বলেন, সহযোগী সংগঠগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ আর একটি সংগঠনের কমিটি সম্মেলন করে করা হয়েছে। বাকিদের কমিটি কেন্দ্র থেকে ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এই সংগঠনগুলো নিয়ে আমাদের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হয়। এই কমিটির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্র। আরেকটি সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঢোকার যোগ্যতা নাই, নিয়মে নাই; বিভিন্ন সময় তাদের দিয়ে কেন্দ্র থেকে এই কমিটিগুলো করে দেয়া হয়। তারা কাজ করে তাদের নিজেদের মতো। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দিতে হবে। কোনো কমিটি করতে গেলে জেলা কমিটির সাথে পরামর্শ করতে হবে।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুক বলেন, ঘাটাইল ও ভুয়াপুরে কমিটি আমরা করতে পারি নাই। এই সঙ্কট থেকে আমাদের মুক্তি দিতে হবে। আমাদের আরো কিছু সমস্যা আছে যা এখানে বলতে পারছি না। দল ঠিক থাকলেই এমপি-মন্ত্রী ঠিক থাকবে। তাই সেই বিষয়গুলোও সমাধান করতেই হবে। রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুর হাকিম বলেন, যারা সংগঠন বিরোধী কাজ করেন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আমরা ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠাই। কিন্তু এগুলোর ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী কেরামত আলী বলেন, আমাদের এখানে যুবলীগ ১৪ বছর আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। যুবলীগের সাংগঠনিক অবস্থা আমরা বলতে পারি মুখথুবড়ে পড়েছে। আবার ডিও লেটারের মাধ্যমে কমিটি দেয়া হয়। ডিও লেটারের মাধ্যমে ছাত্রলীগের কমিটি হলে খুবই খারাপ হয়। শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনলকুমার দে বলেন, আমাদের এখানে সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থা ভালো না। দীর্ঘ দিন ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে কয়েকটি। আমাদের আরো অনেক কথা আছে। সব কথা প্রকাশ্যে বলা যায় না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, আমাদের ছয় থানার ১২ জনের মধ্যে ছয়জনই ভারপ্রাপ্ত। এগুলো আমরা ভারমুক্ত করতে চাই। তিনি আরো বলেন, তৃণমূলের প্রশাসন এমপি-মন্ত্রীদের বেশি গুরুত্ব দেয়। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের এখানে যুব মহিলা লীগ ও কৃষক লীগ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। যারা কোনো দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। কমিটিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের পরিবারের সদস্যদের স্থান দেয়া হয়। আমরা এ বিষয়ে কেন্দ্রকে অবহিতও করেছি। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর পাইনি। মহানগরের সহযোগী সংগঠনের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পান না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের মধ্যেকার অন্তঃকলহ দূর করতে হবে। আওয়ামী লীগ যেন আওয়ামী লীগের শত্রু না হয়। কলহ বিদ্রোহ না হয়। জেলা পর্যায়ে সিনিয়র নেতারা আছেন আপনারা বসে দলের মধ্যেকার এই কলহগুলোর সমাধান করতে হবে। দলের শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে একটা বিষয়ে আমি খুব কষ্ট পাই, যখন দেখি দলের নেত্রী, অভিভাবক, বঙ্গবন্ধুর কন্যা স্বাক্ষরিত কোনো বিষয় আপনারা শৃঙ্খলার সাথে মেনে নিতে ব্যর্থ হন। তিনি মনোননপত্রে সই করেছেন, সেই মনোনয়নের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধাগ্রস্ততা থাকা ঠিক না। যদি থাকে, সেটা দলের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ বহন করে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement