২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এলএনজি খাতেই ভর্তুকি ১০ হাজার কোটি টাকা

ভর্তুকি কমাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা
-

আগামী অর্থবছরে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) খাতে সর্বাধিক ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। এ খাতে ভর্তুকির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এবারই প্রথম এ খাতে বিশাল পরিমাণ ভর্তুকির অর্থ রাখা হচ্ছে। মূলত বিদেশ থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে দেশে অভ্যন্তরীণ বাজারে কম দামে বিক্রির করা কারণে পেট্রোবাংলাকে এই ভর্তুকির অর্থ দেয়ার প্রয়োজন পড়বে বলে জানা গেছে। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে ভর্তুকির পরিমাণ কমবে বলে অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে প্রথমবারের মতো এলএনজি খাতে এক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। এই ভর্তুকি প্রদান করা হয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাকে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়ে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এ বাবদ কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। গত মার্চ পর্যন্ত ৩ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ঘাটতিতে ছিল সংস্থাটি। এপ্রিলের যে টাকা পাওয়া গেছে তা বর্তমান ঘাটতির কিছুটা মেটানো সম্ভব হবে। কিন্তু সামনে এলএনজি আমদানি আরো বাড়বে। গ্যাসের দাম না বাড়ানো হলে ভর্তুকিও আরো বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়বে।
জানা গেছে, দেশের গ্যাসের সঙ্কট পূরণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করছে। এক বছর ধরে দেশে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট করে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এতেও সঙ্কটের সুরাহা হচ্ছে না। এ জন্য এলএনজি আমদানি দ্বিগুণ করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এলএনজি আমদানি করে দেশের গ্যাস সঙ্কটের সুরাহা করা গেলেও অর্থনৈতিকভাবে ভয়াবহ চাপে পড়ছে পেট্রোবাংলা।
দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলিত প্রতি ঘনমিটার গ্যাস যেখানে গড়ে সাড়ে ৬ টাকা করে কেনা হয়, সেখানে প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে খরচ পড়ছে প্রায় ৪০ টাকা। কিন্তু পেট্রোবাংলাকে দেশের অভ্যন্তরে কম দামে গ্যাস বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমদানিকৃত গ্যাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসে এক বছরে ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এলএনজি আমদানি দ্বিগুণ করা হলে ভর্তুকিসহ লোকসান ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট এ সূত্র জানায়। শুধু পেট্রোবাংলা থেকেই নয়, একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকেও সরকার এলএনজি কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলার বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২৭ শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়। বর্তমানে পেট্রোবাংলা ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতির বিপরীতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করছে।
এ দিকে আগামী অর্থবছরে এলএনজি ছাড়াও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও কৃষিখাতে ভর্তুকি দিতে হবে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা।
প্রণোদনা : আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনার টাকার অঙ্কে কোনো হেরফের হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের মতো আগামীতেও ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রফতানিতে নগদ প্রণোদনাও রাখা হচ্ছে চার হাজার কোটি টাকা। আর পাট খাতের জন্য ৫০০ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করছে অর্থ বিভাগ।
এর ফলে আগামী অর্থবছরে ‘ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ’ খাতে প্রাথমিকভাবে ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এটি চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেশি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল