২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বগুড়ায় ভিপি নুরের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

-

বগুড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার সঙ্গীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে ভিপি নুরসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। রোববার বিকেল ৫টায় বগুড়া উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলনের ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ভিপি নুরকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলনের বগুড়া জেলা শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান রাকিব অভিযোগ করে জানান, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বগুড়ায় ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন তারা। অনুষ্ঠানে ডাকসু ভিপিকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের খবর পেয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফের নেতৃত্বে বিপুল ছাত্রলীগের নেতাকর্মী অনুষ্ঠানস্থলে এসে অবস্থান নেন। এর আগে পুলিশকে দিয়ে অনুষ্ঠান না করার জন্য হুমকি দেয় তারা। বিকেল ৫টায় ভিপি নুরকে বহনকারী মাইক্রোবাস অনুষ্ঠানস্থলে আসে। এ সময় ভিপি নুরসহ তার সফর সঙ্গীরা মাইক্রোবাস থেকে নামলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালান। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিপি নুর ও তার সফরসঙ্গীদের কিলঘুষি ও লাঠিপেটা করেন। এ সময় হামলার দৃশ্য ভিডিওধারণ করায় যমুনা টিভির ক্যামেরাপারসন শাহনেওয়াজকে মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজ হাসান ভিপি নুরকে উদ্ধার করে রিকশায় হাসপাতালে পাঠান। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ৩০-৪০ জন অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু তাৎক্ষণিক তাদের চেনা যায়নি।
এ দিকে, ভিপি নুরের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তার ফোনটি রিসিভ করেন নুরের বন্ধু এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রুবেল। রুবেল বলেন, সারা দেশে চলমান সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বগুড়াতে আমাদের ইফতার মাহফিল ছিল। সেখানে অংশ নিতে ভিপি নুর, ফারুকসহ অন্যরা পৌর পার্কের সামনে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালান। এতে নুর, ফারুকসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ফারুক হাসান বলেন, পৌর পার্ক মোড়ে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের একটি ইফতার মাহফিলে অংশ নেয়ার কথা ছিল। বিকেল সাড়ে ৫টায় সেখানে আমরা উপস্থিত হলে লাঠিসহ ছাত্রলীগের একদল সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমি, ভিপি নুর, রাতুল, আবিদ, রুবেলসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছি। এর মধ্যে নুর সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু সেখানেও ছাত্রলীগের হামলার আশঙ্কা থাকায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছি।’ এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রলীগের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হেলমেট বাহিনী-হাতুড়ি বাহিনী নানা ভার্সনে আপনারা ছাত্রলীগকে দেখেছেন : ভিপি নুর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরকে প্রধান অতিথি করে আয়োজিত ইফতার মাহাফিল নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। স্থানীয় ছাত্রলীগের বাধায় ইফতার মাহফিলটি পণ্ড হয়ে যাওয়ায় রাস্তায় ইফতার করে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরকে।
জানা যায়, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার উদ্যোগে ডাকসুর ভিপি নুরুল হককে প্রধান অতিথি করে গত শনিবার শহরের মসজিদ রোডের গ্র্যান্ড এ মালেক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। রেস্টুুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে বিল পরিশোধ করে ইফতারের আয়োজন সম্পন্ন করার পর বিকেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ইফতার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে হোটেলে তালা লাগিয়ে দেয়। এ সময় ভিপি নুর ও তার সহযোগীদের প্রতিহত করারও ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ।
এর আগে ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভিপি নুর ঢাকা থেকে চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু তাকে ঘিরে শহরে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে রাখা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর পুলিশ তালশহর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ভিপি নুরকে নিয়ে আসে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় কড়া পুলিশি প্রহরায় মসজিদ রোডে গ্র্যান্ড এ মালেক রেস্টুুরেন্টে যান নুর। কিন্তু এর আগেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রেস্টুুরেন্টে তালা দিয়ে দেয়ায় তিনি আয়োজকদের নিয়ে রেস্টুুুরেন্টের সামনে অবস্থান নেন।
এ সময় ভিপি নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কেন এমন উগ্র আচরণ করছে এটি আমাদের বোধগম্য নয়। বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি। ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। কিন্তু কিছু অতিউৎসাহী এবং উগ্র নেতাকর্মীরা সবসময় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেন। সেটা আমাদের কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে হেলমেট বাহিনী-হাতুড়ি বাহিনী নানা ভার্সনে আপনারা দেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের একজন নেতাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অপমান করেছেন। তাদের কথাবার্তায় আচরণে উগ্রতা ফুটে উঠেছে। এ সময় তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ভিপি নুর সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের সাথে ছাত্র অধিকারের ব্যানারে শিবিরের ছেলেরা আসছে। এ জন্য সাধারণ ছাত্ররা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে গ্র্যান্ড এ মালেক চাইনিজ রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী আবদুল মালেক সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রলীগ পরিচয়ে কয়েকজন ছেলে এসে ইফতার আয়োজকদের বের করে দিয়ে রেস্টুরেন্টে তালা দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাাম্মদ সেলিম উদ্দিন জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নিরাপত্তার সাথেই শনিবার সন্ধ্যায় মহানগর গোধূলী ট্রেনে ঢাকায় ফিরেছেন ভিপি নুর।


আরো সংবাদ



premium cement