২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয়

২৯ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন মোদি
-

ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর উচ্ছ্বাসে ভাসছেন ক্ষমতাসীন বিজেপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ’র নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে কংগ্রেসসহ বিরোধী শিবিরে নেমে এসেছে কবরের নীরবতা।
লোকসভার নির্বাচন হওয়া ৫৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ৩৪৯টি আসন পেতে চলেছে। এর মধ্যে বিজেপি একাই ৩০০’র বেশি আসন পেতে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ইউপিএ পেয়েছে ৯১ আসন। অন্যরা ১০২টি আসন পেয়েছে। গত তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। বিপুল বিজয় নিশ্চিত করার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল এক টুইটে বলেছেন, ‘ভারত আবার জিতে গেল’। তিনি আগামী ২৯ মে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এদিকে নির্বাচনের ফলাফল ভারতের শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। স্টক মার্কেটের মূল্যসূচক বাড়ার আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। খবর এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি ২৮২ আসনে জয় পেয়েছিল, এনডিএ’র আসন দাঁড়িয়েছিল ৩৩৬। এবার বিজেপির বিশাল ব্যবধানে এই জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বলেছেন, ‘আবারও ভারত জিতেছে। আমরা একসঙ্গে লড়বো। একসঙ্গে সমৃদ্ধ হবো। আমরা একত্রে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত গড়বো। ভারত আবারও জয়ী হয়েছে। বিজয় ভারত।’ টুইটে তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে বড় হই। সমৃদ্ধও হই এক সঙ্গে। কাজেই একই সঙ্গে শক্তিশালী ও সম্মিলিতভাবে ভারত গড়ে তুলব। নিজেকে চাওয়ালা পরিচয় দিয়ে বছর পাঁচেক আগে ভোটের লড়াইয়ে জিতে ভারতের মসনদে বসেছিলেন মোদি। আর এবার ভোটের আগে শাসক পরিচয়ের বদলে নিজেকে চৌকিদার হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
কংগ্রেসের আসন ২০১৪ সালের তুলনায় এবার কিছুটা বাড়লেও তা প্রত্যাশার তুলনায় নগণ্য। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তামিল নাড়–র ওয়েনাড আসনে জিতলেও উত্তর প্রদেশের আমেথি আসনে পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীর কাছে। নির্বাচনে দলের ও জোটের শোচনীয় পরাজয়ের পর কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘দেশের মানুষের রায়কে স্বাগত। নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছা। পরাজিতদের বলছি ভয় পাবেন না। এটা দুই দলের মতাদর্শের লড়াই। আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’ নির্বাচনে পরাজয়ের দায় নিয়ে রাহুল গান্ধী কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তার মা ও ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধীর কাছে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনও করেন রাহুল গান্ধী। পরাজয় স্বীকার করে তিনি বলেন, কোনটা ভুল হয়েছে, আজ এ নিয়ে আলোচনার দিন নয়। জনতা নরেন্দ্র মোদিকে স্বতঃস্ফূর্ত রায় দিয়েছে। জানতার রায়কে সম্মান জানাচ্ছি। জনগণই মালিক। জনগণের রায়কে সম্মান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, পরাজয় খতিয়ে দেখতে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। দলের কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে রাহুল বলেন, ভাবনার কখনো পরাজয় হয় না। ভয় করবেন না। এক সঙ্গে লড়ে মোকাবেলা করব আমরা।
উত্তর প্রদেশের আমেথি নেহরু পরিবারের ও কংগ্রেসের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। ওই আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য রাহুল এবার ধরাশায়ী হয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে। আমেথির পরাজয় নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে স্বল্প জবাবে বলেন, স্মৃতি ইরানিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রত্যাশা করছি, ওই আসনের মানুষকে স্মৃতি ইরানি ভালোবাসা দিয়ে দেখাশোনা করবেন।
সব পরাজিতই হারেনি : মমতা
লোকসভা নির্বাচনে এবার পশ্চিমবঙ্গেও ভালো করেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের মধ্যে ২৪টিতে এগিয়ে আছে তৃণমূল। অথচ ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ রাজ্যে ৩৪টি আসন পেয়েছিল দলটি। অর্থাৎ, ১০টি আসন হাতছাড়া হচ্ছে তৃণমূলের। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ রাজ্যে মাত্র দু’টিতে জয় পাওয়া বিজেপি এবার সেখানে ১৬টি আসন পেতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, সব পরাজিতই হারেনি। টুইটে মমতা লিখেছেন, ‘বিজয়ীদের অভিনন্দন। কিন্তু সব পরাজিতই হারেনি। আমাদের সবকিছু পর্যালোচনা করতে হবে। এরপর সবার সঙ্গে আমাদের মতামত শেয়ার করবো। আগে গণনা পুরোপুরি শেষ হোক। ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাট মিলুক।’
এমন শোচনীয় হার আগে দেখেনি বামরা : ভারতের এবারের নির্বাচনে বাম দলগুলো সংসদীয় রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের সব সমীক্ষার ইঙ্গিত সত্য প্রমাণিত করে হাতে থাকা দুটি আসনই হারিয়েছে সিপিএম। গত বছর ত্রিপুরায় ক্ষমতা হারানোর পর ওই রাজ্যে দুটি আসনই সিপিএমের হাতছাড়া হয়েছে।
একখণ্ড দ্বীপের মতো আশার বাতি জ্বলে ছিল শুধু কেরালা প্রদেশে। পুরো ভারত যখন নরেন্দ্র মোদির প্রত্যাবর্তনের পক্ষে রায় দিচ্ছে, একমাত্র এ রাজ্যই সম্পূর্ণ উল্টো দিকে গিয়ে বিজেপিবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু কেরালায় মোদিবিরোধী হাওয়ার কোনো ফায়দা বামদের পালে আসেনি। গতবারের জেতা আটটি আসনের জায়গায় এবার সেখানে শাসক বামরা এগিয়ে মাত্র একটি আসনে। এ তিন রাজ্যের বাইরে সবার নজর ছিল বিহারের বেগুসরাইর দিকে। এখানে মোদিবিরোধী মুখ হয়ে সিপিআইএমের প্রার্থী ছিলেন কানহাইয়া কুমার। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোট গণনার পর দেখা যায় তিনিও বড় ব্যবধানে হেরেছেন।
জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসলেন মোদির মা : লোকসভা নির্বাচনে ভূমিধস জয়ে গতবারের রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিজেপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। বিজয়ের এই আনন্দে শামিল হলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মা হীরাবান। গান্ধীনগরের বাসভবনের সামনে সকালের দিকে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়ে আনন্দ মিছিল করেন। এ সময় বাসভবনের বাইরে বেরিয়ে এসে কর্মী-সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানান হীরাবান।

 


আরো সংবাদ



premium cement