২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কমলাপুরে দুদকের অভিযান

অব্যবস্থাপনার মধ্যে ঢাকার পাঁচ স্থানে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
কমলাপুর রেলস্টেশনে অগ্রিম টিকিটের জন্য ভিড় : নয়া দিগন্ত -

বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার মধ্যে আসন্ন ঈদুল ফিতরের ট্রেনের আগ্রম টিকিট বিক্রি গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ ঢাকার পাঁচটি স্পট থেকে ৩১ মে’র টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু সকাল থেকেই রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন গন্তব্যর টিকিট প্রত্যাশীরা টিকিট কাটতে পারেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সূত্র ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল কমলাপুর রেলস্টেশনের সার্ভার রুমে অভিযান চালান।
এবারই রেলপথের যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ ঢাকার পাঁচটি জায়গায় স্থাপিত কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির পাশাপাশি ই-টিকিটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু ই-টিকিট সংগ্রহ করতে না পেরে হতাশ অনেকেই গতকাল সকালে ছুটে গেছেন কমলাপুর রেলস্টেশনসহ অন্যান্য স্থানে। কাউন্টারে আগের রাত থেকে যারা লাইনে অপেক্ষমাণ ছিলেন তাদের সাথে তারাও যোগ দেন।
গতকাল সকালে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম সরেজমিন দেখতে কমলাপুর রেলস্টেশনে যান রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। পরিদর্শনের পর ই-টিকিটিংয়ের অব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা স্বীকার করেন রেলপথ মন্ত্রী। এ সময় তার সাথে ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোজাম্মেল হোসেনসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রেনের কাক্সিক্ষত টিকিট সেবা দিতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করে রেলপথ মন্ত্রী বলেন, অ্যাপসে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএসের সাথে ২০০৭ সাল থেকে চুক্তি আছে। এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আর বাড়ানো হবে না। সিএনএসের ব্যর্থতার দায় আমরা এড়াতে পারি না। তাই সিএনএসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সেবাদাতা সংস্থা সিএনএসবিডিকে পাঁচ দিন সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ই-টিকিটিং সেবা ঠিক না হলে অবিক্রীত টিকিটগুলো ২৭ মে কাউন্টারে দিয়ে দেয়া হবে। সিএনএসবিডি কাক্সিক্ষত যাত্রী সেবা দিতে ব্যর্থ হলে সেপ্টেম্বরে তাদের সাথে যে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে তা আর হবে না।
এর আগে টিকিট প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সকাল ১০টায় কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সিএনএসবিডির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন দুদকের কর্মকর্তারা। চলে যাওয়ার আগে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যাত্রীদের টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ পেয়ে আমরা এসেছিলাম। তবে অভিযোগগুলো অ্যাপসের মাধ্যমে ও অনলাইনে টিকিট কিনতে না পারার, কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বিক্রি নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই। এ বিষয়ে সিএনথএসবিডির কাছ থেকে আমরা কোনো সদুত্তর পাইনি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনে আমাদের প্রতিবেদন জমা দেবো।
গতকাল সকাল থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কেনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শান্তিনগরের গৃহিণী আসমা আরা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টারে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদের আগে দিনাজপুর যাবো। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য সকাল থেকে চেষ্টা করছি। পারলাম না। অ্যাপে ঢোকাই যাচ্ছে না। এজন্য আমি স্টেশনে চলে এসেছি। বাসায় ছেলেকে বলে এসেছি সে যেন মোবাইলে চেষ্টা করে টিকিট কেনার।
অনলাইনে টিকিট কিনতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ফেসবুক পেজেও অনেকে এ বিষয়ে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। মাহবুব কবির মিলন নামে একজন বলেন, সকাল ৯টা থেকে রেলওয়ের অ্যাপ খালি ঘুরছে আর ঘুরছে। টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সিএনএস বিডির অনলাইন অব্যবস্থাপনা এর জন্য দায়ী। মতিঝিল থেকে মোশাররফ নামে এক যাত্রী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি অ্যাপসের মাধ্যমে ঢাকা দিনাজপুরের টিকিট কেটেছি। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরও আমার মোবাইলে ম্যাসেজ আসেনি। টাকা কেটে নিয়েছে। এখন আমি কি করব? এসব অভিযোগের বিষয়ে সিএনএস বিডির কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেছেন, অ্যাপসে টিকিট কেটে ম্যাসেজ না পেলে অবশ্যই তার টাকা ফেরত দেয়া হবে।
কমলাপুর স্টেশনে দুদকের অভিযান : টিকিটপ্রত্যাশীদের নানা অভিযোগ দুদকের হটলাইনে পাওয়ার পর কমলাপুর রেলস্টেশনে আসে দুদকের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে অভিযান শেষে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা টিকিট সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এসেছি। এখানে অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমের সার্ভারের কর্মকর্তারা বলেছেন, সার্ভার ডাউন হয়ে যাচ্ছে। তাই টিকিট পেতে একটু সমস্যা হচ্ছে। সার্ভার ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে।
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, এবার অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। হটলাইনে পাওয়া ওই অভিযোগে বলা হয়, টিকিট বিক্রি শুরুর পর থেকেই অ্যাপটি নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। গ্রাহকরা টিকিট কিনতে পারছেন না। অভিযানে এসেও ওই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাপ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএসের (কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম) কর্মকর্তারাও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এবার অ্যাপে টিকিট বিক্রি পরিচালনা করছে একটি প্রতিষ্ঠান। মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের (অপারেশন) কাছে অ্যাপস নিষ্ক্রিয় থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেন, অতিরিক্ত চাপের কারণে সার্ভার ডাউন হয়ে আছে। এই উত্তরে আমরা সন্তুষ্ট না। আরো তদন্ত করে কমিশনের প্রতিবেদন দেয়া হবে এবং সেই অনুযায়ী কমিশন আগামী কিছু দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা থেকে ৩৩টি আন্তঃনগর এবং চারটি বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ২৮ হাজার ২২৪টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে পাঁচ ভাগ রেলওয়ে কমকর্তা-কর্মচারী ও পাঁচ ভাগ ভিআইপি ছাড়া বাকি সব টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইন, এসএমএস ও অ্যাপে পাওয়ার কথা।
ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী ১৬টি ট্রেনের ১৪ হাজার ৯৫টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে কাউন্টার থেকে পাঁচ হাজার ৯৪৪টি এবং অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপসে আট হাজার ১৫১টি টিকিট বিক্রি হবে। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সাতটি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৮৭৯টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৪৮টি অনলাইনে এবং দুই হাজার ৩৩১টি টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে। তেজগাঁও স্টেশন থেকে জামালপুরগামী পাঁচটি ট্রেনের তিন হাজার ৪৪৪টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে ৬৪৪টি অনলাইনে এবং ৬১৪টি কাউন্টারে বিক্রি হবে। বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রুটের দু’টি ট্রেনের এক হাজার ২৫৮টি টিকিট বিক্রি হবে। ৬৪৪টি টিকিট অনলাইনে বাকি ৬১৪টি টিকিট কাউন্টারে দেয়া হবে। ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলভবন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ রুটের সাতটি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৫৪৮টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে দুই হাজার ২৫১টি টিকিট অনলাইনে এবং দুই হাজার ২৯৭টি টিকিট কাউন্টারে বিক্রি হবে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ৫৭১টি টিকিট। আজ বৃহস্পতিবার বিক্রি হবে ১ জুনের আগাম টিকিট।

 


আরো সংবাদ



premium cement