১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

তাকওয়ার মাত্রা উৎকর্ষের মাস রমজান

-

রমজানুল মোবারকের আজ পনেরো তারিখ। এ মাসে রোজা রাখার নির্দেশ দেয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে কুরআন মাজিদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ অর্থাৎ রমজানে সিয়াম পালনের মাধ্যমে মুমিন বান্দারা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারে। আর তাকওয়ার বদৌলতে মানুষ সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে।
সুরা হুজুরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, হে মানুষেরা, নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন নর ও একজন নারী থেকে এবং তোমাদের জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি এ জন্য যে, তোমরা পরস্পরে পরিচিত হবে। নিশ্চয়ই তোমাদের সবচেয়ে মুত্তাকিই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত।
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদার মাপকাঠি তার তাকওয়া। যার চরিত্রে তাকওয়ার মাত্রা যেমন, আল্লাহতায়ালার কাছে তার মর্যাদা তেমন। শুধু তা-ই নয়, কুরআন মাজিদের নির্দেশনা লাভের জন্যও মানব চরিত্রে তাকওয়ার গুণ থাকা প্রয়োজন।
তাকওয়া শব্দের অর্থ সাবধানতা ও সংযম। মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকাই তাকওয়ার অর্থ বলে বর্ণনা করা হয়। তবে মন্দ কাজ বর্জন যেমন জরুরি, তেমনি ভালো কাজগুলো করাও তাকওয়ার অন্তর্ভুক্ত। কর্তব্য পালন ও বর্জনীয় পরিহারের সমষ্টিই তাকওয়া।
বস্তুত পাপাচার ও অনাচার থেকে সংযমী হওয়ার জন্য রোজা অত্যন্ত সহায়ক। কেননা রমজানের পুরো মাস সিয়াম পালনের মাধ্যমে বান্দার মনোবৃত্তিতে এমন উৎকর্ষ হাসিল হয় যে, অন্যায় কাজের প্রতি তার ঝোঁক কমে আসে। সে অহেতুক ঝগড়া-বিবাদ থেকে বেঁচে থাকে এবং অন্যের প্রতি কটাক্ষ করা কিংবা হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে নিজেকে রক্ষা করে। সে চেষ্টা করে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ¡ারা যেন গুনাহের কাজ নয় বরং ছওয়াবের কাজ হয়। দিনের বেলায় সে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী পানাহার বর্জন করে। আর রাতে অতিরিক্ত নফল সালাতে মশগুল থাকে। তা ছাড়া প্রায় সারাক্ষণ আল্লাহর স্মরণ জাগরূক থাকার কারণে তার মধ্যে অন্যায়ের প্রবণতা কমতে থাকে। এ দিকে নেককার বান্দারা যখন আল্লাহর প্রতি আরো নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সময় অতিবাহিত করতে থাকে, তখন তাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত নাজিল হতে থাকে। যারা পরিবেশের প্রভাবে অন্যায় কাজ করতে চায়, তাদের ওপরেও প্রভাব পড়ে আল্লাহর এই বিশেষ রহমতের। তাদের মধ্যেও অন্যায়ের ঝোঁক কমে আসে।
মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ উভয় ধরনের সহজাত প্রবণতা রয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষ নিজ ইচ্ছায় যেকোনো একটি পথ অবলম্বন করতে পারে। তবে পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে মনীষীরা বলেন, কল্যাণের পথ অবলম্বন করলেও মানবীয় দুর্বলতার কারণে অনেক মানুষ বিচ্যুতির শিকার হয়। কেননা মানুষের মধ্যে এমন দু’টি সহজাত চাহিদা রয়েছে যা পূরণে নিয়মের শৈথিল্য ও লাগামহীনতার কারণে মানুষের জীবনে সমূহ অকল্যাণের পথ বিস্তৃত হয়। একটি খাদ্য, অপরটি জৈবিক চাহিদা।
পানাহারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে মানুষ অনেক সময় হালাল-হারামের সীমারেখা লঙ্ঘন করে, শুদ্ধ-অশুদ্ধের পার্থক্য ভুলে যায় এবং অন্যায় পথে অগ্রসর হয়। একপর্যায়ে তার মধ্য থেকে অন্যায় ও অশুভ কাজের বোধশক্তিই নষ্ট হয়ে যায়। মানব চরিত্রের এ পর্যায়টি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কেননা পাপকে যখন পাপই মনে হয় না, তখন ঈমানের অস্তিত্ব দাবি করা যায় না।
তেমনি জৈবিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে মানুষ যখন বৈধতার সীমালঙ্ঘন করে, তখন তা থেকে জন্ম নেয় হাজার হাজার অপরাধের পথ। অনাচার ও লাগামহীনতার অসংখ্য অপরাধে জড়িয়ে পড়া তার জন্য খুবই স্বাভাবিক। আল্লাহতায়ালা মেহেরবানি করে মুসলমানদের জন্য এক মাস রোজা রাখার বিধান দিয়েছেন, যা মানুষের মধ্যকার এ দুই চাহিদায় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য আনতে অত্যন্ত সহায়ক। দৈহিক শক্তি খর্ব করার ব্যবস্থার পাশাপাশি এতে রয়েছে ইবাদত-বন্দেগিতে দীর্ঘক্ষণ লিপ্ত থাকার অভ্যাস গড়ে তোলার সুযোগ। রোজাদার ব্যক্তি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই ক্ষান্ত হয় না। বরং সারাদিনের ক্লান্তি উপেক্ষা করে কিয়ামুল লাইলে আত্মনিবেদন করে এবং অসীম দয়ালু প্রভুর সমীপে আকুতি নিবেদন করতে থাকে। পার্থিব স্বার্থ নয়, বরং আল্লাহ তায়ালার সামনে হাজির হওয়ার, তার কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের আশা থেকে সে যখন এ অভ্যাস গড়ে তোলে তখন পাপাচার নয়, বরং নেক কাজের প্রতিই ধাবিত হয় তার অন্তর। এভাবেই পরিণতিতে রোজা তার জন্য ঢালের কাজ করে। সুতরাং পবিত্র মাহে রমজানে সিয়াম আদায়ের পাশাপাশি তাকওয়ার স্তর উন্নত করতে সচেষ্ট থাকাও আমাদের প্রয়োজন।

 


আরো সংবাদ



premium cement