২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রমজানে সুপেয় পানির সঙ্কটে রাজধানীবাসী

-

রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম সাত দিন ধরে পেটের পীড়ায় ভুগছেন। ওয়াসার সরবরাহ করা নোংরা পানির কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান। আমিনুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ওয়াসা পাইপলাইনের মাধ্যমে বাসায় যে পানি সরবরাহ করে তা ময়লা ও দুর্গন্ধ, অনেক সময় পানিতে পোকা পাওয়া যায়। পানির ময়লা ঠেকাতে কলের মাথায় কাপড় বেঁধে রাখতে হয়। না হলে পোকামাকড় মুখে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর কয়েকদিন পর কলের কাপড় সরিয়ে ফেললে ময়লার আস্তরণ ও পোকা দেখা যায়। এ পানির কারণে চর্মজাতীয় বিভিন্ন রোগও দেখা যাচ্ছে বলে তিনি জানান। শুধু এ বাসায় নয় আশপাশের সব বাসার পানির অবস্থাও একইরকম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজীপাড়া, পীরের বাগ এলাকার পানিতেও ময়লা ও দুর্গন্ধ। বাড়ি মালিকেরা পানির ট্যাংকি পরিষ্কার করার পরও দুর্গন্ধ কিছুতেই যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন থেকেই এ অবস্থা চলে আসছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে পানির বিল বাবদ হাজার হাজার টাকা নিলেও পানি ভালো করার ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। সব দায় যেন জনগণের।
মীর হাজিরবাগের আবু হাজী স্কুল রোডের কয়েক শ’ বাড়িতে গত ১৩ দিন পানি নেই বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসাইন। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, এলাকায় মানবিক বিপর্যয় চলছে। একে রোজার মাস তার উপর তীব্র গরমের সময় পানির কষ্টে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। খাওয়া গোসলের জন্য অন্য এলাকার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যেতে হচ্ছে। অনেকে চার-পাঁচ শ’ ফুট পাইপ লাগিয়ে দূরের কোনো বাসা থেকে পানি আনা হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা থেকে মাঝে মধ্যে গাড়িতে পানি দিতে আসলে তখন মানুষের যুদ্ধ লেগে যায় পানি নিতে। কে কার আগে পানি নেবে সেজন্য হাঁড়ি-কলসি নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে শত শত নারী-পুরুষ।
এদিকে জুরাইন, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, দনিয়াসহ আশপাশের এলাকায় সুপেয় পানির সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ওয়াসা এমডিকে ওয়াসার সরবরাহ করা নোংরা পানি দিয়ে কাওরানবাজারের অফিসে গিয়ে শরবত বানিয়ে পান করাতে যান। পরে ওয়াসা এমডি এলাকার পানির উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এরপরও ওই এলাকার পানির কোনো উন্নয়ন হয়নি। আগের মতোই নোংরা কালো পানি সরবরাহ করছে ঢাকা ওয়াসা। এজন্য গত শুক্রবার বিশুদ্ধ পানির দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পূর্ব জুরাইনের মিষ্টির দোকান এলাকা থেকে এ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি খালপাড়, মুরাদপুর হাইস্কুল রোড, মুরাদপুর জিরো পয়েন্ট, কুদার বাজার-দনিয়া, গোয়ালবাড়ি মোড় হয়ে শনির আখড়ার সিএনজি স্ট্যান্ডে এসে শেষ হয়। এ সময় তারা বিভিন্ন দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। এ সময় ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলনের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এখানে পানির ব্যাখ্যা করছি না। কারণ, ওয়াসার পানির ব্যাখ্যা করা যাবে না। বৃহস্পতিবার আমরা পদযাত্রাকে সফল করার জন্য লিফলেট বিলি করেছিলাম। আমরা প্রথমত মানুষ এবং রাষ্ট্রকে জানাতে চাই যে, এই এলাকায় আমরা মানুষ থাকি। দ্বিতীয়ত আমরা ওয়াসার কল খুলে গ্লাস দিয়ে পানি খেতে চাই। রাষ্ট্র যদি ন্যূনতম সভ্য হতো, তাহলে তোড়জোড় করে এতদিনে নেমে যেত। পানির অপর নাম জীবন এই বোধ রাষ্ট্রের নেই। রাষ্ট্রকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্য আমরা এখন মানুষের ওপর ভর করছি। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই কর্মসূচি। মুরাদপুরের বাসিন্দা তামিম জামশেদ কিশোর বলেন, আমরা গত ১০ বছর ওয়াসা থেকে যে পানি পাই, তা খাওয়া এমনকি ব্যবহারেরও যোগ্য না। আমরা তাই আশপাশের এলাকার মানুষ সবাই একত্রিত হয়েছি।
এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক শহিদ উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, ওয়াসার পানি উৎপাদন ঠিক আছে। তবে সারা ঢাকায় মোট নয় শ’ পাম্প রয়েছে। এর দুয়েকটি নষ্ট হলে তখন সেখানে ঘাটতি দেখা যেতে পারে। ওয়াসার ১৬১৬২ নম্বরে ফোন করে জানালে সেখানে ওয়াসার পানির গাড়িতে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক সময় চোরাই লাইনের কারণে পানিতে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। ভুক্তভোগীরা ওয়াসার নম্বরে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

 


আরো সংবাদ



premium cement