২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কৃষক ধানের উপযুক্ত দাম না পেলেও চালের বাজার চড়া

-

প্রান্তিক কৃষক নিজেদের উৎপাদিত ধানের উপযুক্ত মূল্য না পেলেও বাজারে চালের দাম বেশ চড়া। এক মাসের ব্যবধানে ধানের দাম মনপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমলেও চালের দাম কমেনি মোটেই। কৃষকপর্যায়ে বর্তমানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। অথচ এক কেজি চাল কেনার জন্য ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, চালকল মালিকদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা উৎপাদন খরচের অর্ধেক মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। চালের দামও নিয়ন্ত্রণ করছেন তারাই। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে নতুন চাল না আসায় দাম এখনো বেশি। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন চাল বাজারে এলে খুচরাপর্যায়ে চালের দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা।
প্রান্তিক কৃষকের সাথে আলোচনার পাশাপাশি কৃষি বিভাগের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছর এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করতে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। সমপরিমাণ জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে গড়ে ১৫ মণের মতো। জমির ইজারা খরচ এবং ধান ঘরে তোলার জন্য কৃষকের মজুরি যোগ করলে খরচ দাঁড়ায় ২০ হাজারের মতো। কিন্তু ধান বিক্রি করছেন তার অর্ধেক দামে। প্রতি মণ ধান বিক্রি করা যাচ্ছে গড়ে ৫০০ টাকা দরে। অর্থাৎ এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করে কৃষকের লোকসান ছয় থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি।
নিত্যপণ্যের বাজারদর পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ভালো মানের চাল বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে। এক মাস পূর্বেও এ চাল একই দরে বিক্রি হয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি। টিসিবির হিসাবে বাজারে গতকাল সবচেয়ে কম দামি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে। গত এক মাসে এ চালের দাম শতকরা দুই দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে বলে জানায় টিসিবি।
রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে বর্তমানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ টাকা। মিনিকেট নতুন চাল দুই হাজার ২০০ টাকা এবং পুরনোটা দুই হাজার ৪০০ টাকায়। স্বর্ণা ৫০ কেজির বস্তা এক হাজার ৩৮০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা এক হাজার ৩২০ টাকায়।
চালের দাম না কমলেও ধানের দাম কমেই চলেছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও বাজারে নতুন ধান বিক্রি হয়েছে স্থানভেদে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণ দরে। আর এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন চিকন ধান মাত্র ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ধানের দাম আরো কম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দর কমেছে ২৩ থেকে ২৫ শতাংশেরও বেশি।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মতে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চাল উৎপাদন প্রতি বছর গড়ে চার লাখ ৮৮ হাজার টন বেড়েছে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত আছে। ২০১৮ সালে রেকর্ড ৩৬২ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, এ বছর সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে ধানের উৎপাদন ৩৮০ লাখ টন ছাড়াবে। কিন্তু যাদের শ্রমে-ঘামে এ সাফল্য, সেই কৃষকরা উপযুক্ত দাম না হয়ে হতাশায় ডুবছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ধানের বাজার এখন ফড়িয়া আর চালকল মালিকদের হাতের মুঠোয়। সারা দেশের ধান-চালের বাজারে ফড়িয়ারা গুজব ছড়াচ্ছে, সরকার বিদেশ থেকে বেশি চাল আমদানি করায় গুদামে জায়গা নেই। তাই এবার বেশি ধান-চাল কিনতে পারবে না। চালকলের মালিকেরা ধান ওঠার সময় ধান না কেনার ভান করে দামটা কমিয়ে রেখে সস্তা দরে ধান কেনার কৌশল গ্রহণ করেন। তারা একজোট হয়ে একেবারেই ধান কিনছেন না বলা চলে। তাদের অজুহাত, গুদামে জায়গা নেই, আগের মওসুমের ধানই বিক্রি হয়নি, নতুন ধান দিয়ে করব কী?

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দেশের কৃষি পরিবারগুলোর ৮৪ শতাংশ ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, যারা পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য ধান উৎপাদন করে। বিশেষত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা অর্থকরী বোরো ধান আবাদের আগে সারের জোগানদাতা, সেচ পাম্পের মালিক ও মহাজনের কাছ থেকে বাকিতে এবং চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সার, বীজ, সেচের পানি সংগ্রহ করে থাকেন। ধান মাড়াইয়ের পরপরই এসব পাওনা পরিশোধ করতে হয়, পরিবারের চাহিদা মেটাতে হয় এবং পরবর্তী ফসলের প্রস্তুতি নিতে হয়। এ কারণে তারা বর্তমান কাটার মওসুমেই সব ধান নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement