২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বগুড়ায় ২০ ঘণ্টায় ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও এক যুবকসহ ৪ খুন

-

বগুড়ায় গত ২০ ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এগুলো হলো মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া শহরের চেলোপাড়ায় নিজের বেড রুমে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত মারুফ হোসেন ওরফে পাভেল (৩৫) নামের এক যুবক, সকালে জেলার মোকামতলা এলাকায় মামী আলেয়া বেগমকে (৩৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার পর রাজমিস্ত্রি আপেল (২০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেট কেটে আত্মহত্যা এবং শহরের এসপি বাংলো লেনে সোমবার বিকেলে বেড রুমে খুনের শিকার হয়েছেন ফল ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন ওরফে হাজী মুকুলের দ্বিতীয় স্ত্রী জিন্নাত ফারজানা তালুকদার এলমা (৪৫)। এসব হত্যাকাণ্ডের খবরে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্ক অবস্থা বিরাজ করছে।
বেডরুমে গুলিতে যুবক নিহত : বগুড়ায় নিজের বাসার বেড রুমে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছেন মারুফ হোসেন ওরফে পাভেল (৩৫) নামের এক যুবক। তিনি শহরের চেলোপাড়া এলাকার মৃত আলহাজ মকবুল হোসেনের ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বেলা ১টায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে পুরনো তিনতলা বাড়ির উপর তলায় একটি কক্ষের বিছানা, বাথরুম এবং ড্রইং রুমে ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে। বাসার অন্যান্য কক্ষগুলোও অগোছালো এবং এলোমেলা। দু’টি কক্ষের একটিতে নেশাপানের উপকরণ দেখা যায়।
নিহত মারুফের বোন ফরিদা ইয়াসমিন জানান, মারুফ নেশাগ্রস্ত ছিল। তার বাবার তিন স্ত্রী। তাদের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন। একজন বেঁচে আছেন। তারা চারবোন ও তিনভাই ছিল। এক ভাইয়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। অন্য একভাই গুম হয়েছে। দুই বোন এবং মারুফ ওই বাসায় থাকতো। মারুফ অন্য পক্ষের সন্তান। অন্য দুই বোন আরেক বাসায় বাস করেন। বাকি কক্ষগুলো মেস বা ছাত্রাবাস হিসেবে ভাড়া দেয়া আছে। মারুফ বাসায় সারাদিন বন্ধুবান্ধব নিয়ে নেশা করত। সারাদিন বাসা থেকে বের হতো না। এক মাস আগে মারুফ তার এক বন্ধুকে বাসায় ডেকে নিয়ে মারধর করে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ হলেও পরে মীমাংসা হয়ে গেছে। ফরিদা আরো জানান, বাসায় থাকলেও মারুফকে গুলি করে হত্যার বিষয়ে জানত না সে। তার চাচী একটি শব্দ পেয়ে গিয়ে দেখেন, মারুফ করিডোরে পড়ে আছে। চাচী জীবননাহার জানান, তিনি ওই বাসার পাশেই থাকেন। দুপুরে বেড়াতে এসে একটি শব্দ শুনতে পায়। পরে গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় মারুফ করিডোরে পড়ে আছে।
বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক আসলাম আলী জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নিহতের বোন ফরিদা ইয়াসমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গুলিতে নিহত হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে তবে কোনো মামলা হয়নি। কারা কেন তাকে হত্যা করেছে তা জানাতে পারেনি কেউ।
ব্যবসায়ীর স্ত্রী এলমা বেড রুমে খুন : বগুড়া শহরের মালতীনগর এসপির বাসভবন সংলগ্ন ভাড়া বাড়ির বেড রুমে খুন হয়েছেন গৃহবধূ জিন্নাত ফারজানা তালুকদার এলমা (৪৫)। তিনি বগুড়ার ফল ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন ওরফে মুকুল হাজীর দ্বিতীয় স্ত্রী। সোমবার বিকেলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ সময় স্বামী মুকুল বাসায় ছিলেন না। কেউ এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি।
বগুড়া সদর থানার ওসি বদিউজ্জামান জানান, শহরের মালতিনগর এলাকার যেখানে এলমা নিহত হয়েছে সেটি একটি চার তলা ফ্লাট বাড়ি। ওই ফ্লাটবাড়ির নিচতলায় তিন কক্ষের একটি বাসায় এলমা ব্যবসায়ী মুকুলের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে স্বামীর সাথে বসবাস করে আসছিল। কে বা কারা হত্যা করেছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে তার স্বামী মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
মুকুল হোসেন জানান, আসরের নামাজ বগুড়া সেন্ট্রাল মসজিদে আদায় করার পর পাশেই দোকানে ব্যবসার খোঁজখবর নিচ্ছিলাম। এমন সময় প্রতিবেশী একজনের ফোন পেয়ে বাসায় গিয়ে দেখি এলমার রক্তাক্ত লাশ। নিহতের মেয়ে জামাই পাপ্পু জানায়, বাসার বাইরে মূল দরজা সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। সেখানে দিনের বেলায় আমার শ^াশুড়ি একাই থাকেন। ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি শাশুড়ির লাশ তার শয়ন কক্ষে পড়ে আছে। তার বুকে এবং পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তিনি জানান, শাশুড়ির সাথে শ^শুরের সম্পর্ক ভালো ছিল না। দাম্পত্য জীবনে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
একটি সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে বাইরের একাধিক লোক ওই বাসয় যাতায়াত করত।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানতন চক্রবর্তী জানান, পরকীয়া বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে।
শিবগঞ্জে মামীকে হত্যার পর ভাগ্নের আত্মহত্যা
শিবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জে পরকীয়া প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এক ভাগ্নে তার মামীকে কুপিয়ে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের ভাটকোলা গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ নিহত দুইজনের লাশ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরত হাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সনাতন চন্দ্র জানান, মোকামতলা ইউনিয়নের টেপাগাড়ী গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে রাজমিস্ত্রি আপেল মিয়া (২০) নামের এক উচ্ছৃঙ্খল তরুণ পরকীয়া প্রেমে প্রত্যাখ্যান হয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় তার মামী (মামা সাইদুলের দ্বিতীয় স্ত্রী ) আলেয়া বেগমকে (৩৫) ধারালো বাটাল দিয়ে ঘাড়ে, বুকে ও পেটে উপর্যুপরি আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মামী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে ঘাতক ভাগ্নে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে ওই গ্রামেরই একটি পরিত্যক্ত পাকা ঘরে ঢুকে আপেল নিজের পেটে ধারালো বাটাল দিয়ে চিরে নাড়িভূড়ি বের করে দেয়। ফলে সেও মারা যায়। এলাকাবাসী জানিয়েছে উচ্ছৃঙ্খল আপেল কিছুদিন আগে তার মামা সাইদুলের দ্বিতীয় স্ত্রী আলেয়াকে পরকীয়ার প্রস্তাব দেয়। মামী ঘটনাটি বাড়ির লোকজনকে জানালে সবাই আপেলকে শাসন করে। বিষয়টি নিয়ে আপেল মনে মনে ক্ষিপ্ত ছিল। ক্ষিপ্ততার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।  

 


আরো সংবাদ



premium cement