১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিয়াম পালনে সুন্নাহর অনুসরণ জরুরি

-

রমজানুল মুবারকের আজ নবম দিবস। এ মাসের প্রতিটি দিন সিয়াম পালন ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। অন্যান্য ইবাদতের মতো এটিতেও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লøাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণেই নিহিত রয়েছে পূর্ণ প্রতিদানের নিশ্চয়তা। সিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ যদিও সংযমী হওয়া, কিন্তু ইসলামী শরিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার ও কামাচার থেকে সংযম পালন সিয়াম হিসেবে আখ্যায়িত। নিছক সংযম সাধনা ও কৃচ্ছ্র পালনকে শরিয়তের দৃষ্টিতে সিয়াম হিসেবে সাব্যস্ত করা যায় না। প্রথমত নিয়ত শর্ত। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালনার্থে পানাহার ও কামাচার থেকে নিবৃত্ত থাকার ইচ্ছা পোষণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত মেয়াদ রক্ষা করা শর্ত। অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় নিরবচ্ছিন্ন সংযমকে সিয়াম বলা হয়। কেউ যদি সুবহে সাদিকের পরে কিছুক্ষণ হলেও পানাহারে লিপ্ত থাকে কিংবা সারা দিন অভুক্ত থেকেও সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগেই সামান্য পানাহার করে বসে, তাহলে তার এই দীর্ঘক্ষণ সংযমকে সিয়াম নামে আখ্যায়িত করা যাবে না। শরিয়তের ইবাদতগুলোর ক্ষেত্রে সীমারেখা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলসেমিবশত শৈথিল্য যেমন নিন্দনীয়, তেমনি আগ্রহের আতিশয্যে মাত্রা অতিক্রম করাও নিষিদ্ধ। এ জন্য ইফতারের সময় হয়ে গেলে বিলম্ব না করেই আহার পানীয়ের প্রতি মনোযোগী হওয়াই আল্লাহর রাসূলের আদর্শ। এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখযোগ্য। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে প্রশ্ন করেছিলেন এক তাবেয়ি। বললেন, আল্লাহর নবীর দুই সাহাবির মধ্যে একজন নামাজও আদায় করেন সময় হলেই, ইফতারও করেন সময় হলেই। অন্যজন নামাজও আদায় করেন একটু বিলম্বে, ইফতারও করেন একটু বিলম্বে। হজরত আয়েশা রা: প্রশ্ন করেন, সময় হলেই কে নামাজ আদায় ও ইফতার করেন? তাবেয়ি জানান তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ। উম্মুল মুমিনীন বলেন, আল্লাহর রাসূল এমনটিই করতেন।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যখন ওফাত হয়, তখন মুসলিম উম্মাহর সামনে উপস্থিত হয় নানামুখী বিপদ। অনেকেই ভণ্ড নবী মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের দলে গিয়ে ভেড়ে। কেউ কেউ আগের মতো পৌত্তলিক হয়ে যায়। তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সাহাবায়ে কেরামের কোনো অসুবিধা হয়নি। কেননা তারা স্পষ্টভাবেই ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়; কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম জটিলতায় পড়েন একটি গোষ্ঠীকে নিয়ে, যারা ইসলামের অন্য কিছুই অস্বীকার করেনি। তারা শুধু জাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল। এই শ্রেণীর বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্নে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে দ্বিমত দেখা দেয়। স্বয়ং হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো কঠিন ব্যক্তিও দ্বিধান্বিত ছিলেন; কিন্তু হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন অটল ও স্থির। তিনি তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের কথা বলছিলেন। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আপনি তাদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেবেন কিভাবে? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো ইরশাদ করেছেন, ‘আমাকে লড়াই চালিয়ে যেতে আদেশ করা হয়েছে লোকদের বিরুদ্ধে যতক্ষণ না তারা এ মর্মে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। যখন তারা এ মর্মে সাক্ষ্য দেবে, তখন তারা তাদের জীবন ও সম্পদ সংরক্ষণ করবে। তবে ইসলামের খাতিরে হলে ভিন্ন কথা।’
এ হাদিস থেকে অনুমিত হয়, কেউ ঈমানের ঘোষণা দেয়ার পর ইবাদতে ত্র“টির কারণে শাস্তির উপযোগী হয় না বা ইসলামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যায় না; কিন্তু হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কেউ সালাত ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য করলে আমি তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করব। তিনি আরো বললেন, আল্লাহর রাসূলের কাছে তারা যে পরিমাণে জাকাত আদায় করত তা থেকে সামান্য ব্যতিক্রম করলেও আমি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাব। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি ভেবে দেখলাম মহান সিদ্দিকের হৃদয় স্থির হয়ে গেছে এবং তিনি যা বিবেচনা করছেন তাই সঠিক।
হজরত আবু বকর সিদ্দিক যে বিষয়টি স্পষ্ট করলেন, তা এই যে, সালাত যেমন অবশ্য পালনীয়, জাকাতও তেমনি। একটি পালন করে অন্যটি উপেক্ষা করে মুসলমান বলে দাবি করা যাবে না। সুতরাং সিয়ামের অবশ্য পালনীয়তা ও অপরিহার্যতা একইভাবে প্রমাণিত। সালাত, সিয়াম, জাকাত ইত্যাদি ইবাদত সন্দেহাতীতভাবে ফরজ। শুধু তা-ই নয়, এগুলো আদায়ের যে পদ্ধতি ও নিয়ম আল্লাহর রাসূল নির্দেশ করে গেছেন, ঠিক সেভাবেই করতে হবে। কেননা এসব নিয়মও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসূলের উক্তি, আচরণ ও অনুমোদনের ভিত্তিতে এসব নিয়ম বর্ণনা করেছেন। সুতরাং আভিধানিক অর্থ কিংবা অন্য কোনো যুক্তির দোহাই দিয়ে এ নিয়মের ব্যতিক্রম করা যাবে না। বিদায় হজে মহানবী সাল্লাল্লøাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করে গেছেন, আমি তোমাদের কাছে যা রেখে যাচ্ছি, তোমরা যত দিন তা মজবুত করে ধরে রাখবে, তত দিন তোমরা বিচ্যুত হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।


আরো সংবাদ



premium cement