১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংসদে শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার ঘটনায় ক্ষোভ দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

-

শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার ঘটনায় দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কোথাও কোনো অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেলে, সাথে সাথে যেন দেশবাসী তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায়। আমরা জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমন করেছি। আমরা চাই না পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটুক। এসব ঘৃণ্য হামলার সাথে যারা জড়িত, সেসব সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের কোনো ধর্ম নেই, দেশকাল পাত্র নেই। জঙ্গি জঙ্গি-ই, সন্ত্রাসী সন্ত্রাসী-ই। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের সন্ত্রাসী কাজে জড়িত না হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
গতকাল বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ আহ্বান জানান। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বোমা হামলায় নিহত শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ানের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, ওই ঘৃণ্য হামলায় শুধু জায়ান চৌধুরীই নয়, প্রায় ৪০ জনের কাছাকাছি শিশুসহ প্রায় সাড়ে তিন শ’ মানুষ মারা গেছে। এই ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও বোমা হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তিনি আরো বলেন, যাদের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, এর মধ্যে হামলাকারীরা কী অর্জন করছে জানি না। এই ছোট নিষ্পাপ শিশুতো কোনো অপরাধ করেনি। তারা কেন এভাবে জীবন দেবে?
ফেনীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানুষ সৃষ্ট সন্ত্রাসও দেখেছি। নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। এই ধরনের অমানবিক ঘটনাগুলো সত্যিই মানবজাতির জন্য অকল্যাণকর। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের নামে যারা এসব কাজ করছে, ইসলাম যে শান্তির ধর্ম সেই ধর্মকেই সব মানব জাতির কাছে হেয়প্রতিপন্ন করছে। সব ধর্মেই শান্তির কথা বলা আছে। তারপরেও কিছু লোক ধর্মীয় উন্মাদনার নামে মানুষের প্রতি আঘাত হানে, মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়, যা মানবজাতির জন্য বেদনাদায়ক এবং কষ্টকর। তাই দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান, এই ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কাজের সাথে মানুষ যেন জড়িত না হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘৃণ্য কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরাই নয়, সহায়তাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আওয়ামী লীগ চতুর্থবার সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পূর্বে ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে অনেক তথ্য প্রকাশ পায়। এসব তথ্য হতে দেখা যায়, পরোক্ষভাবে দেশী-বিদেশী কিছু লোক ও সংস্থা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাই এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অন্যান্য পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ-সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এখনো যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে এবং আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। তিনি জানান, পলাতক আসামি নূর চৌধুরী কিভাবে কানাডায় বসবাস করছেন সে সম্পর্কে তথ্য দিতে কানাডা সরকারকে বাধ্য করতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আবেদন করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ এ বিষয়ে আদালতে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। শুনানি শেষে বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। পলাতক আসামি রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে আইনগত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য পলাতক আসামিকে ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স কাজ করছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত দশ বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। রমজান মাসে পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, ভোজ্যতেল, খেজুর এবং ডালের চাহিদা বেড়ে যায়। এই সময়ে অসাধুচক্র যাতে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সে লক্ষ্যে টিসিবির সক্ষমতা ও মজুদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নিরলস প্রচেষ্টায় ইতঃপূর্বে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পবিত্র মাহে রমজান, ঈদুল ফিতরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। জনগণ যাতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্বিঘেœ উদযাপন করতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা তৎপর রয়েছি।
অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ভেজালমুক্ত করতে সারা বছরই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে, এটি অব্যাহত থাকবে। ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ডাবল ডিজিটে। আমরা দক্ষভাবে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। খাদ্য ভেজাল দেয়া অত্যন্ত জঘন্য কাজ। আমি আশা করি, যারা এসবের সাথে জড়িত, তারা এ পথ থেকে সরে আসবে।
জাসদের শিরীন আখতারে সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদকে সামনে রেখে রমজান মাসে হকাররা যাতে ফুটপাথের বদলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে একই সময়ে বসে কেনাবেচা করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আগে কয়েক দফা কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থান দেয়া হলেও সেখানে হকাররা না বসে ফুটপাথ দখল করে। এটা যাতে না হয় সে জন্য সিটি করপোরেশন একটি নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ে হকাররা যাতে বসতে পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ওই ভবন পরিদর্শন করে। ভবনমালিক কর্তৃপক্ষকে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থাদি নিশ্চিত করার জন্য নোটিশ দেয়া হয়; কিন্তু এফ আর টাওয়ার কর্তৃপক্ষ এ-সংক্রান্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি আরো জানান, সম্প্রতি ভয়াবহ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের পর বহুতল ভবনগুলোর ইমারতের ব্যবহার, অনুমোদন অনুযায়ী ইমারতের তলার সংখ্যা, বর্তমানে ইমারতের তলার সংখ্যা, সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃক প্রদত্ত উচ্চতা, কার পার্কিং, অগ্নিনির্গমন সিঁড়ি, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত ইনটেরিয়র ডিজাইন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি। রাজউক ২৪টি টিমের মাধ্যমে এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। এ-সংক্রান্ত তথ্য ও প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement