২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নতুন আঞ্চলিক ফোরাম গঠনে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব

ব্রুনাই সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়া মইজদ্দিন ওয়াদ্দাউলার সাথে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : পিআইডি -

বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। গতকাল সকালে ব্রুনাই সুলতানের সরকারি বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমান এ ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ার সাথে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব করেন।
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক বলেন, প্রস্তাবিত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (সিয়াকো) সদস্য হবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই। পররাষ্ট্র সচিব জানান, প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ব্রুনাইয়ের সুলতান আশ্বস্ত করেন যে, তিনি বিষয়টি নিয়ে ‘অনুকূল বিবেচনা’ করবেন।
ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম ও বক্তৃতা লেখক নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগসংক্রান্ত বিষয়গুলো স্থান পায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং এ লক্ষ্যে একটি অগ্রাধিকার বাণিজ্যব্যবস্থার সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রস্তাব করেছেন।
শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে যৌথ কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দেন। তিনি পাট ও পাটজাত পণ্য, সফটওয়্যার, কৃষি পণ্য, সিরামিক ও টেবিলওয়্যার, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শিল্প পার্ক স্থাপন করছে যেখানে ব্রুনাইয়ের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে। তিনি দ্বৈত কর পরিহার করার পাশাপাশি পারস্পরিক প্রচার এবং বিনিয়োগের সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে অগ্রাধিকার দেন এবং বলেন, দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য পেশাজীবী ও ফার্মাসিউটিক্যালসের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সহযোগিতা গড়ে তোলা যেতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী আহ্বান : এ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন যাত্রায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এখানে গতকাল বিকেলে হোটেল এম্পায়ার অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে আয়োজিত বাংলাদেশ-ব্রুনাই বিজনেস ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন যাত্রায় আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশে উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যও আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং জিডিপির পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থান বিশ্বে ৪১তম। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি একটি সুদৃঢ় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, গতিশীল বেসরকারি খাত এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তা সহায়ক অব্যাহত নীতিমালা এবং অবকাঠামো ও মানবোন্নয়নে জোরালো বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য সাফল্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, গত বছর ৭.৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরে চলতি বছর আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮.১৩ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় এ বছর এক হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার হবে যা মধ্যম আয়ের দেশের আয়ের কাছাকাছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাহাজ নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো ইউরোপসহ ১৪টি দেশে যাত্রী ও মালবাহী জাহাজ সরবরাহ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সফটওয়্যার হচ্ছে বাংলাদেশের আরেকটি প্রতিশ্রুতিশীল শিল্প। ‘বাংলাদেশে ৮০০টি সফটওয়্যার ও আইটি কোম্পানি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৫০টিরও বেশি বিদেশের গ্রাহকদের সেবা প্রদান করছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী আইটি পেশাদার বিশ্বব্যাপী মাইক্রোসফট, ইন্টেল, আইবিএম, ওরাকল এবং সিস্কোসহ বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত আইটি কোম্পানিতে কাজ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পণ্য, গৃহস্থ যন্ত্রপাতি, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং ইলেকট্রনিক গ্যাজেট বিশ্ববাজারে স্থান করে নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর : বাংলাদেশ ও ব্রুনাই গতকাল কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং এলএনজি সরবরাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এখানে ব্রুনাইয়ের সুলতানের সরকারি বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষর হয়।
সাতটি চুক্তির মধ্যেÑ ছয়টি সমঝোতাস্মারক (এমওইউ) এবং একটি বিনিময় নোট। এগুলো হচ্ছেÑ কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতাস্মারক (এমওইউ), মৎস্যক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতাস্মারক, পশুসম্পদক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতাস্মারক, সাংস্কৃতিক ও শিল্প সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতাস্মারক, যুব ও ক্রীড়াক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতাস্মারক, এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্পর্কিত সমঝোতাস্মারক ও কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডারদের জন্য ভিসার ছাড়সংক্রান্ত বিনিময় নোট।
পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের বলেন, দু’দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এমওইউ এবং বিনিময় নোট স্বাক্ষর করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়া উপস্থিত ছিলেন।
ব্রুনাইয়ের সুলতানের আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দেশটিতে রয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement