২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

চাঁদাবাজ মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের দখলে দেশের নৌপথ

-

দেশের নৌপথ এখন সন্ত্রাসী ও মাস্তানদের দখলে। একদিকে চাঁদাবাজি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, অপরদিকে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে নৌপথে। মালিক ও শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন, কোথাও না কোথাও চাঁদা দিতেই হচ্ছে তাদেরকে। চাঁদা না দিলে শ্রমিকদের ধরে মারধর করা হচ্ছে। নানা অজুহাতে এই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে মালিক-শ্রমিকরা জানান। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নৌপথে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। তিনি বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নদীতেই চাঁদাবাজি ও ডাকাতি হচ্ছে।
মালিক ও শ্রমিকদের একাধিক সূত্র জানান, নৌপথে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ, শীতলক্ষ্যা নদী, আমিনবাজার, দিয়াবাড়ি, গাবতলী, ঝালকাঠী, মেহেন্দিগঞ্জ, সোনারগাঁও, সুরমা নদী, আশুগঞ্জ, তুরাগ নদী ও বালু নদীতে। যেসব নদীতে যত বেশি বালু ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করে সেসব নদীতে তত বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে। কোনো কোনো চাঁদা প্রত্যক্ষভাবে নৌযান থেকে আদায় করা হয়। আবার কোনো কোনোটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাঁদাবাজদের হাতে চলে যায়। আবার কোনো কোনো স্থান রয়েছে যেখানে চাঁদাবাজি সম্ভব নয়; কিন্তু কৌশলে নানা অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। দেখা যায় নদীতে মাছ ধরার নাম করে জাল ফেলে রাখছে। এর ওপর দিয়ে নৌযান গেলেই ওই নৌযানগুলোকে জাল ছিঁড়ে ফেলার অজুহাতে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায় প্রতিদিন গড়ে কয়েক শ’ বালুবাহী জাহাজ নোঙর করে। প্রতিটি থেকে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালুবাহী জাহাজের চালক বলেন, জাহাজ নোঙর করলেই চাঁদা দিতে হয়। চাঁদার টাকা পরিশোধের আগে ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়া যায় না। শীতলক্ষ্যা নদীতে চাঁদাবাজরা ছোট ছোট বোট নিয়ে টহল দেয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই নদীতে চলাচলকারী বালু ও পণ্যবাহী জাহাজের একটি তালিকা চাঁদাবাজদের হাতে রয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী তারা নিয়মিত চাঁদার টাকা বুঝে নেয়। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, কম হলেও এই নদীতে দিনে ১০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। সোনারগাঁও এলাকায়ও সমানহারে চাঁদাবাজি চলছে।
নৌযান ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, গত মঙ্গল-বুধবার তারা যেসব দাবিতে ধর্মঘট করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবি ছিল চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা। তিনি বলেন, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এক শ্রেণীর টাউট বাটপার সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের নামে কোথাও কোথাও এই চাঁদা আদায় করছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় নৌপথ ইজারা দেয় দুর্র্বৃত্তরা। এই ইজারার মাধ্যমে চাঁদা হাতিয়ে নেয়া হয়। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানানোর পরে মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নৌযান মালিক-শ্রমিকদের কয়েকজন জানান, দেশে কম করে হলেও ২০ হাজার নৌযান চলাচল করছে। এর অধিকাংশ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো নদীতে নিয়মিত ডাকাতি ও দস্যুতা চলছে। অনেক সময়ই ডাকাতরা শ্রমিকদের মারধর করে নদীতে ফেলে দেয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement