২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যথাযথ ব্যবস্থা নিলে রাফি হত্যা এড়ানো যেত : মানবাধিকার কমিশন

-

মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে ঘটনাপ্রবাহে পুুলিশেরও অপরাধ ছিল, একইসাথে অবহেলা ছিল প্রশাসনেরও। মাদরাসা পরিচালনা কমিটি ও প্রশাসন যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে এই হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেতো। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের তদন্তে এমন মন্তব্য করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। রাফির হত্যাকাণ্ডে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা, এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান, অপরাধীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণসহ সাত দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
সুপারিশে মাদরাসায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। মাদরাসার গভর্নিং বডি পুনর্গঠনেরও সুপারিশ করা হয়।
এ ছাড়া নিহত নুসরাতের পরিবারের সব সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর পুলিশ নুসরাতকে বিভিন্ন অশালীন প্রশ্ন করে। তারা বিষয়টি হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করে। পুলিশের সাথে সাক্ষাতের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিপন্থী। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরাজ উদদৌলা ১৯৯৫ সালে দৌলতপুর মাদরাসার সুপার ছিলেন। তখন ওই মাদরাসার ছাত্রদের সাথে তার সমকামিতার অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। প্রতারণার মামলায় তিনি এর আগে জেল খেটেছেন। তিনি ২০০১ সাল থেকে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি নিয়মিত তার অফিসে মেয়েদের ডাকতেন। তার কক্ষে একই সময় একজনের বেশি ছাত্রীর প্রবেশ নিষেধ ছিল। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ছাত্রী ও অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মাদরাসার গভর্নিং বডি ও থানায় অভিযোগ করে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত অভিযোগ তিনি একটি মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কিভাবে নিয়োগ পান তা অবিশ্বাস্য। কারা তাকে নিয়োগ দিলেন, এর তদন্ত হওয়া উচিত। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পুলিশকে ক্লোজ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী সদস্যদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর এবং উপ-পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) এম রবিউল ইসলাম এ হত্যাকাণ্ডের সরেজমিন তদন্ত করেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা, নুরুন নাহার ওসমানী, উপ-পরিচালক সুস্মিতা পাইক প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement