১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’

রাজধানীতে বর্ষবরণ
-

‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’, ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’ প্রতিপাদ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে বরণ করা হলো বাংলা নতুন বছর ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে। শুরুতে রাজধানীর ঐতিহাসিক রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’Ñ এ প্রতিপাদ্যে ছায়ানটের এ আয়োজন শুরু হয় সকাল ৬টায়। সেখানে রবীন্দ্রনাথের ‘মোরে ডাকিয়া লয়ে যাও’ গানটি পরিবেশিত হয় যৌথকণ্ঠে। মোট ৩১টি পরিবেশনায় সাজানো হয় ছায়ানটের এবারের আয়োজন। শেষ হয় জাতীয় সঙ্গীতে। অনুষ্ঠানে দেশে সংঘটিত নানা অনাচারের বিপক্ষে ক্ষোভ-প্রতিবাদ জানানো হয়। এ সময় স্মরণ করা হয় নুসরাত জাহানসহ অবিচার-অনাচারে প্রাণ হারানো মানুষদের। তাদের জন্য এক মিনিটের নীরবতাও পালন করা হয়।
এ সময় ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন বলেন, আমরা যেন নীতিবিহীন অন্যায়-অত্যাচারের নীরব দর্শকমাত্র হয়ে না থাকি। তিনি বলেন, আর্থসামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, সামাজিক বৈষম্য-অনাচার পিছু ছাড়ছে না। গেল সপ্তাহেই খুন হয়েছেন ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। এমন ‘অত্যাচার-অনাচার নিপাত যাক, জয় হোক সত্যের সুন্দরের।’
এরপর সকাল ৯টায় ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’ প্রতিপাদ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রতি বছরের মতো বৈশাখ বরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধনের পর শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে চারুকলা থেকে বের হয়ে শাহবাগ শিশুপার্ক ঘুরে এসে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রা। তবে এবারের শোভাযাত্রার সামনে র্যাবের মোটর বহর ছাড়াও পুলিশ ও স্কাউট দলের সদস্যরা ঘিরে রাখায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের সুযোগও ছিল কম। মুখোশে রাজা-রানীর পেছনে গাছের চূড়ায় পাখি আর পাখির ছানা আর প্যাঁচা এবং তাদের অনুসরণ করে হরিণ, বাঘ, বকসহ নানা কিছু ছিল এই শোভাযাত্রায়।
এর আগে ভোরের সূর্য ফোটার আগেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ নানান পোশাকে রমনা পার্কসহ শাহবাগ অভিমুখে ছুটে আসেন। সকাল ৮টার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এ সময় রাজধানীর নীলক্ষেত, পলাশী, বকশিবাজার, কাঁটাবন মোড়সহ বিভিন্ন প্রবেশপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুরো এলাকা হয়ে যায় জনসমুদ্র। মানুষের কোলাহল, হর্ষধ্বনি, গান ও ঢাকঢোলে মুখর হয়ে ওঠে চারুকলা চত্বর। সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি বের হওয়ার মূহূর্তে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয় পুরো এলাকা। শোভাযাত্রায় নিয়ে নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকলেও ঢাকঢোলের বাদ্যি আর তালে তালে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের কাছে হার মানে সব কিছুই।
এবার শোভাযাত্রার শিল্পকাঠামোগুলোর মূলটিতে বাঘের মুখ থেকে কাঁটা তোলার চিরায়ত গল্পটি উপস্থাপিত হয় বাঘ ও বকের অনুষঙ্গে। মঙ্গলের বার্তা নিয়ে ছিল প্যাঁচা। সমৃদ্ধির কথা বলছে ছাগল আর সিংহের সমন্বয়ের বিশেষ মোটিফ। লোকজ ঐতিহ্যের চিত্র মেলে ধরে গাজির পটের গাছ। এ ছাড়া অনুষঙ্গের মধ্যে ছিল দুই মাথা ঘোড়া, দুই পাখি, কাঠঠোকরা, পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় সওয়ার মানুষ। শোভাযাত্রায় ছিল মানুষের হাতে রঙ-বেরঙের পাখা, সরাচিত্র, বাদুড়, টিয়াসহ নানা জাতের পাখি। মুখে নানা আকৃতির মুখোশ। শোভাযাত্রায় সবাই ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটিতে কণ্ঠ মেলান।
শোভাযাত্রার পুরো পথে সিসিটিভি ক্যামেরা আর পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। পথিমধ্যে কেউ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারেনি। কারণ চতুর্দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে মানবশিল্ড গঠন করা হয়েছে। গতবারের মতো এবারো মুখোশ ব্যবহার আর ভুভুজেলা নিষিদ্ধ ছিল। নিরাপত্তার জন্য বন্ধ ছিল রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় কেন্দ্রীয় রাস্তা।
এ ছাড়া বর্ষবরণে রাজধানীজুড়ে ছিল মেলা গানসহ নানান আয়োজন। ছিল হরেক পণ্যের পসরা। একাধিক মেলা ঘুরে দেখা গেছে মাটির আম, কাঁঠাল, আপেল, পেঁপে, কামরাঙ্গা, কলা, ডালিম ঘোড়া, হাতি, গরু, হাতি, বক, সরা, পাতিল, পুতুলসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি হচ্ছে মেলায়। এ ছাড়া ছিল শিশুদের বিচিত্র সব খেলনা।
ঢাবিতে ভিন্ন আয়োজনে বর্ষবরণ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, বাংলা বছরের প্রথম দিনে প্রতিবারের মতো এবারো বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ। তবে এবার নাটমণ্ডল মিলনায়তন প্রাঙ্গণে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজনে এসেছে ভিন্নতা। ‘সাংস্কৃতিক শিক্ষায় ডানা মেলুক শিকড়’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার এক ব্যতিক্রমধর্মী উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাবির এ বিভাগটি। এতে সহযোগিতা করেছে উত্তরণ ফাউন্ডেশন।
ব্যাতিক্রমধর্মী এ অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল রিথিং বাংলাদেশের পরিকল্পনায় হিজড়া সম্প্রদায়ের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা। এ ছাড়াও দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিভাগীয় শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় গীত ও নৃত্য এবং লোকগানের দল মাঠের বাঁশির সঙ্গীত পরিবেশনা থাকছে।
সকাল ৯টায় শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর খই-মুড়ি-পান্তা ভোজ চলে। ভোজন শেষে কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে। এরপর থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমেদুল কবিরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পুলিশের ডিআইজি হাবিবুর রহমান এবং ঢাবির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্যব্যক্তিত্ব ইসরাফিল শাহীন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবির প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাবিবুর রহমান বলেন, যারা হিজড়া সম্প্রদায় আমরা তাদের ভালো চোখে দেখি না। তারাও যে মানুষ, তাদেরও যে মন আছে, আমরা তা বুঝতে চেষ্টা করি না। সৃষ্টিকর্তা চাইলে আমরাও তাদের মতো হতে পারতাম। তারা আমাদের সমাজের অংশ, আমাদের মতোই মানুষ।
তিনি বলেন, এখানে পারফর্ম করেছে এমন দু’জন হিজড়া বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। এমন ঘটনা বিরল। তারা কাজ করতে পারে, আমাদের সমাজ তাদের কাজের সুযোগ দেয় না। যারা সমস্যা করে তারা সুযোগ না পেয়েই করে থাকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪ ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা মানবতার কল্যাণে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে : জামায়াত আমির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৭ ফিট তামিমকে যেকোনো ফরম্যাটের দলে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক

সকল