২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পুনর্গঠন নীতিমালা চূড়ান্ত : অচিরেই সার্কুলার

শর্তসাপেক্ষে সব খেলাপিই ঋণ নবায়নের সুযোগ পাবেন

-

অর্থমন্ত্রণালয়ের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে শর্তসাপেক্ষে সব ধরনের ঋণখেলাপিদের ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হবে। তবে এটি সার্বজনীন হবে না, কেস টু কেস ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া হবে। এক্ষেত্রে খেলাপিদের ব্যবসার ধরন, ঋণের প্রকৃতি, গ্রাহকের নগদ টাকার প্রবাহ, লেনদেন পরিস্থিতি, সম্পদ দায় দেনা, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে গ্রাহকের প্রাপ্ত সুবিধা। এ নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক আপত্তিই আমলে নেয়া হয়নি; এর পরও শিগগিরই তা সার্কুলার আকারে জারি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্যাংক সূত্র জানায়, নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আপত্তি করা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা আমলে নেয়া হয়নি। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে গঠিত তিনটি কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করেছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মতভেদগুলো কমিয়ে এনেছে। এর ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমদ জামালের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির চারজন সদস্য অনির্ধারিত বৈঠকে বসে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করেছেন। তবে তার আগে নীতিমালার খসড়াটি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার পরই অর্থমন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ দু’জন কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকে আসেন। গত সপ্তাহের শেষ দিকে তারা ডেপুটি গভর্নর আহমদ জামালের কক্ষে বৈঠকে বসেন। এর একপর্যায়ে ওই ডেপুটি গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এর মাধ্যমেই নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, নীতিমালার অনেক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপত্তি তারা লিখিতভাবে এবং বিভিন্ন সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন। কিছু ছাড়া তাদের বেশির ভাগ সব আপত্তি আমলে নেয়া হয়নি। যেমনÑ ঋণখেলাপিদের বিনা ডাউন পেমেন্টেই পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিষয়টির বিরোধিতা করে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মতামতে বলেছে, ডাউন পেমেন্ট দেয়ার মাধ্যমে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সদিচ্ছা প্রকাশ পায়। বিনা ডাউন পেমেন্টে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হলে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা এর অপব্যবহার করতে পারে। ঋণ শৃঙ্খলার স্বার্থে বিনা ডাউন পেমেন্টের পরিবর্তে ঋণ স্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বল্পমাত্রায় হলেও বিভিন্ন হারে ডাউন পেমেন্ট ধার্য করা উচিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতের ভিত্তিতে ডাউন পেমেন্টে ঋণ স্থিতির ১ শতাংশ অথবা এক কোটি টাকা, দুইয়ের মধ্যে যেটি কম সেটি জমা করে আবেদন নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ঋণ পরিশোধের সময়কাল ১৫ বছর পর্যন্ত রাখার পক্ষে সরকার গঠিত উচ্চপর্যায়ের এ কমিটি। কমিটি বলেছে, এই ১৫ বছরের মধ্যে আবার দুই বছর মরিটরিয়াম থাকবে। অর্থাৎ এ দুই বছর ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এটি করা হলে ব্যাংকের তারল্য সঙ্কটসহ মুনাফার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অতিরিক্ত বর্ধিত মেয়াদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হলে বিশেষ করে নিয়মিত ঋণগ্রহীতারা শুধু দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পরিশোধের সুবিধা গ্রহণের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণগ্রহীতায় পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে ঋণ আমানত ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতি সৃষ্টি হতে পারে এবং ব্যাংক তারল্য সঙ্কটে পড়তে পারে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক মরিটরিয়ামসহ চলতি মূলধন ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ছয় বছর এবং মেয়াদি ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর করার পরামর্শ দিয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরামর্শ আমলে না নিয়ে কমিটির প্রস্তাব চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু কেস টু কেস বিবেচনায় নেয়ার কথা বলেছে মন্ত্রণালয়।
ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ৭ শতাংশ হিসাবে সরল সুদহারে ঋণ পুনঃতফসিল হবে বলে প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী আমানত ও ঋণের সুদহার চক্রবৃদ্ধি হারে নির্ধারণ করা হয়। সরল সুদে ঋণ দেয়ার বিষয়টি বিদ্যমান বাজার তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদ হিসাবায়ন নীতিমালার (বিআরপিডি সার্কুলার নং-২৭, তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১০ ও বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-১৪, তারিখ ৭ ডিসেম্বর, ২০১০) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কমিটির সুপারিশ মোতাবেক সুবিধা দেয়া হলে ব্যাংক তাদের আয়ের যে অংশ থেকে বঞ্চিত হবে তা পুষিয়ে নিতে অন্যান্য খাতের ভালো ঋণগ্রহীতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে। এ ছাড়া পুনঃতফসিলকৃত ঋণের জন্য স্বল্প সুদ নির্ধারণ করা হলে এই সুবিধা গ্রহণের জন্য ভালো ঋণগ্রহীতারাও ইচ্ছাকৃত খেলাপিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর ব্যাংক ব্যবসায় কস্ট অব ফান্ড একটি গুরুত্ব¡পূর্ণ নির্দেশক। বিশেষ খাতের ঋণগ্রহীতাদের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমানতকারীদের স্বার্থ যাতে ক্ষুণœ না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদেরকে পুনঃতফসিল সুবিধার হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ-সংক্রান্ত বিদ্যমান সব নীতিমালার পাশাপাশি ব্যাংকের দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কস্ট অব ফান্ড ও তারল্য অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। কমিটি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের পক্ষে প্রস্তাব করেছে। কমিটি বলেছে, কিস্তির মধ্যে আসল ও সুদের পরিমাণ মোট আসল ও সুদ আনুপাতিক হারে আদায়যোগ্য হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কিস্তি নির্ধারণের কথা বলেছে।
সূত্র জানায়, নতুন নীতিমালার আওতায় বড়, মাঝারি, ছোট, কৃষি ঋণ গ্রহীতা ও নারী উদ্যোক্তারা ব্যবসার ধরন বুঝে সুবিধা পাবেন। নীতিমালার সব সুবিধা সার্বজনীন হবে না। ট্রেডিং, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড (এক বছর কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না) পাবেন। বড় উদ্যোক্তারা পাবেন ২ বছরের গ্রেস পিরিয়ড। ঋণের সুদের হার নির্ধারিত হবে ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের বা তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ভিত্তিতে। সরকারি ব্যাংকগুলো শর্তসাপেক্ষে সুদহার কস্ট অব ফান্ডের চেয়েও কম নিতে পারবে। সুদ হিসাব করা হবে সরল সুদে। অর্থাৎ সুদের ওপর কোনো সুদ আরোপ করা যাবে না। গ্রাহকের কাছ থেকে মূল ঋণের সঙ্গে সুদও আনুপাতিক হারে আদায় করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ সংসদ সদস্যের চিঠি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে মহিষের আক্রমণে বাবা-ছেলেসহ আহত ৪ গফরগাঁওয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার তীব্র মাত্রায় হিংস্র হয়ে উঠেছে সরকার : মির্জা ফখরুল মিরসরাইয়ে মৃত্যুর ১৫ দিন পর ব্যাংক কর্মকর্তার কবর থেকে লাশ উত্তোলন দেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ রংপুরে মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি, অনলাইনে ক্লাস চালুর চিন্তা বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা হবে বাংলাদেশে : ধর্মমন্ত্রী সিলেটে ৪৪ লাখ টাকার ভারতীয় চিনিসহ গ্রেফতার ৪ অবৈধ সম্পদ : এস কে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন

সকল