২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
একুশের চেতনা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে সরকার

দল পুনর্গঠনের পরই কঠোর আন্দোলন : মির্জা ফখরুল

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপির আলোচনা সভায় নেতারা : নয়া দিগন্ত -

বর্তমান ‘ফ্যাসিবাদী’ আওয়ামী লীগ সরকার একুশের চেতনা সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে মন্তব্য করে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। সেই সাথে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দল পুনর্গঠনের পর কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান নেতারা। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গতকাল বুধবার বিকেলে বিএনপির উদ্যোগে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে আজিমপুরে শহীদদের কবর জিয়ারত এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণসহ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৩০ ডিসেম্বর তারা যে নির্বাচন করেছে তার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি নয়, তারা ফ্যাসিবাদী শক্তি। এই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের অবশ্যই সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী করতে হবে এবং সংগ্রামী করে তৈরি করতে হবে। এই লড়াইকে আমাদের আরো সামনের দিকে নিতে হবে, এই লড়াইয়ে আমাদের আরো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, একুশের চেতনা ধারণ করে ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য রাখেন। আলোচনায় আরো অংশ নেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভূঁইয়া, ছাত্রদলের আকরামুল হাসান। অনুষ্ঠানে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভোট ছাড়া নির্বাচনে সরকার গঠন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বারবার বলেছি এবং আপনারা দেখেছেন, একটা বিশ্বজনমত তৈরি হচ্ছে এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। এ কথা কেন ভাবছেন যে, আপনারা পরাজিত হয়েছেন? এ কথা কেন ভাবেন আপনারা? নিজেদের সংগঠিত করে আমরা লড়াই করব, লড়াই সামনের দিকে নিয়ে যাবো এবং সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হবোই, বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ী হবেই।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কখনোই মনের জোর হারিয়ে ফেলবেন না, মনের বল হারিয়ে ফেলবেন না। হতাশায় নিমজ্জিত হবেন না। অন্ধকার থেকে সূর্যের সেই প্রভাতÑ সূর্যোদয় হবেই, সেই সূর্যোদয়ের দিকে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশনেত্রী কারাগারে আছেন তিনি বারবার বলে যাচ্ছেনÑ তোমরা সংগ্রাম করো, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রাম করো। সেই সংগ্রামই আমরা করে চলেছি। মনে রাখতে হবে, এই সংগ্রামে আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সেই ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাইÑ অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে এবং সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলি, নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে সম্পূর্ণ নতুন নির্বাচন দিতে হবে। সেটা নতুন নির্বাচন কমিশন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করতে হবে। আসুন এটাই হোক আমাদের আগামী দিনের সংগ্রাম ও লড়াই। এই সংগ্রাম-লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মাতা যিনি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছেন সেই মহান নেত্রী আজকে কারাগারে। আজকে (গতকাল) ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গিয়েছিলেন কোর্টে। আমি জেল গেটের কোর্টের সামনে থেকে ফিরে এসেছি। তিনি কোর্টে আসতে পারেননি, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। দীর্ঘ এক বছর ধরে তিনি কারাগারে, তার সুচিকিৎসা হচ্ছে না। তাকে একটা নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। স্পষ্ট করে বলতে চাই এই মানবাধিকার লঙ্ঘন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে রাখার জন্য তাদের বিচার হবে।
এ সময়ে মিলনায়তনের পেছনের দিকে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেয়ার স্লোগান দিলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কর্মসূচি হবে ধৈর্য ধরেন। কর্মসূচি চাইলে কি হবে তা পালন করতে হবে তো। সব কিছু হবে, ধৈর্য ধরেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, একুশের চেতনা সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। এখনো তারা একদলীয়ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। মুখে যতই বলেন তারা বিরোধী দলে বিশ্বাস করে না, বিরোধী দল থাকুক তারা চায় না। এবার যে নির্বাচন হয়েছে সেটা নির্বাচন হয়নি। এটা হয়েছে দুর্বৃত্তায়ন। এই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের চরম দৃষ্টান্ত এই সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা বাইরে এমন প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে যে দেশে সুন্দর একটা নির্বাচন হয়েছেÑ কিন্তু কেউ তাদের বিশ্বাস করে না। দেশের কোনো একজন মানুষ তাদের কথা বিশ্বাস করে না। তারা ভোট চুরি করে রাষ্ট্র পরিচালনা করার দায়িত্ব পালন করছেন সেটা দেশের মানুষ মানে না।
তিনি বলেন, এ থেকে উত্তরণে করণীয় কী? যে জনপ্রিয়তা, তাই যথেষ্ট নয়। আমাদের বিরাট ও বিশাল জনপ্রিয়তা। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা যথেষ্ট নয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে, সংগঠন ছাড়া জনপ্রিয়তা কখনোই কাজে লাগানো সম্ভবপর নয়। সে জন্য এই সংগঠনকে পুনর্গঠন করতে হবে, নতুন করে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। যারা তরুণ-নবীন তাদের সুযোগ করে দিতে হবে এবং সবপর্যায়ে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যারা মার খেয়েছেন, যারা হাসপাতালে গিয়েছেন, যারা জীবন দিয়েছেন, যারা গ্রেফতার হয়েছেন, যাদের বাড়িঘর পুড়েছে, যারা জামিনের জন্য এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বারান্দায় হেঁটে বেড়াচ্ছে তাদের উপযুক্ত সম্মান দিয়ে তাদের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই সংগঠন হবে ত্যাগী, শক্তিশালী এবং যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করার ক্ষমতা সেই সংগঠনের থাকবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় সম্ভবপর নয় মন্তব্য করে মওদুদ আহমদ বলেন, আন্দোলন ছাড়া আমাদের প্রিয় নেত্রীর মুক্তি সম্ভবপর নয়। সে জন্য এবার আমাদের সুপরিকল্পিতভাবে কর্মসূচি নিতে হবে; যাতে এবার আমরা পরাজিত না হই। এবার আমরা সত্যিকার অর্থে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে পারি। তার মুক্তির মধ্য দিয়ে ইনশাআল্লাহ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশের প্রাণশক্তি হচ্ছে ছাত্ররা। আর বিএনপির প্রাণশক্তি হচ্ছে ছাত্রদল। তাই বলব, আপনারা ছাত্ররা এগিয়ে আসুনÑ আমরা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। নজরুল ইসলাম খান বলেন, এক বছর হলো কিন্তু আমরা বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে পারিনি। আমাদের অনেক সমর্থন ও অনেক নেতা আছে। এরপরও বেগম জিয়া মুক্ত হচ্ছে না। যাতে হয়, এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাই মিলে একসাথে নামলে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা অবশ্যই সম্ভব।

 


আরো সংবাদ



premium cement