২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জবি-এমসিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্র; সিলেট এমসি কলেজে বিবদমান ছাত্রলীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে ৪ সাংবাদিক আহত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্র -

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দিনভর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের রাকিব ইসলাম, খবরপত্রের সোহাগ রাসিফসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে সাত-আটটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম-সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের অনুসারীরা একত্র হয়ে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এরপর বেলা ১১টায় পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়।
এরপর অন্যান্য পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস গেট থেকে সরে গেলে স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে মোবাইলে ছবি ধারণ করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এ সময় কমপক্ষে পাঁচ সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এরপর বেলা ৩টায় ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকের সামনে ক্যাম্পাসের বাইরের পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় দু’পক্ষের কর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু করে। এ সময় ৭ থেকে ৮টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মারামারির সংবাদ সংগ্রহকালে স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মী সিএসই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১২তম ব্যাচের আবিদ আল হাসান,সমাজকর্ম বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কিবরিয়াসহ আট-দশ জন সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাকিবের ওপর, সাধারণ সম্পাদকের কর্মী ইতিহাস বিভাগের অষ্টম ব্যাচের কর্মী আলী হাসান, খবরপত্রের সোহাগ রাসিফ, বিডি ২৪ রিপোর্টের প্রতিনিধি সানাউল্লাহ ফাহাদের ওপর হামলা করে। রাকিককে উদ্ধার করে পুলিশ সুমনা হাসপাতাল এবং লতিফুল ইসলামকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করে। এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিচ্ছিল। এ সময় তাদের হাতে ককটেল, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, রামদা, বঁটি, হকিস্টিকসহ দেশীও ধারালা অস্ত্র দেখা যায়।
এ দিকে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রায়সাহেব বাজার থেকে সদরঘাটের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
দু’পক্ষের সংঘর্ষে জবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান আহমেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান, ছাত্রলীগ কর্মী আনিসুর রহমান, হাসিবুর রহমান শুভ, জুয়েল, জিয়াউল হক, মাহবুবুুল হাসান রনি, মহিউদ্দিন অনি, শেখ মেহেদী আল হাসান, ইমরান, অপি, ইমরুল নিয়াজ, টুটুল, শরিফুল ইসলাম হিমু, মিরাজ, শাকিল, মিনুন মাহফুজ, শাহরুক আল শোভন, সোহান, আবু মুসা রিফাত, সাজেদুল নাঈম, কাজী তৈয়ব, কামরুল হাসান, শিশিরসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কলেজ এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে।
এ সময় তাদের হাতে ককটেল, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, রামদা, বঁটি, হকিস্টিকসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা জানার কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। কারা কী করছে সেটার দায় আমাদের ওপর এখন বর্তায় না। সভাপতি তরিকুল ইসলামকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজুয়ানুল হক শোভন বলেন, সাংবাদিকদের ওপর আঘাত অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদেরকে (জবি ছাত্রলীগ) একবার স্থগিত করে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জবির সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল ছাত্রলীৈগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষকে অস্বীকার করে বলেন, ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়াকে ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে কোনো কিছু হয়নি। আমরা সকাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কোতোয়ালি জোনের এসি বদরুল রিয়াদ বলেন, ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াতে চাইলে আমরা মাঝখানে অবস্থান নিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দুই দিকে পাঠিয়ে দেই। এ ঘটনায় তিন প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও চার রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এমসি কলেজে ৪ ফটোসাংবাদিক আহত
সিলেট ব্যুরো জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার সকালে সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে সংঘটিত এ ঘটনার সময় চার ফটোসাংবাদিকের ওপরও হামলা চালানো হয়। হামলার শিকার ফটোসাংবাদিকরা হলেন- ইউসুফ আলী (দৈনিক সমকাল), অসমিত অভি (দৈনিক ভোরের কাগজ), মিঠু দাশ জয় (সিলেট শুভ প্রতিদিন) ও কাওসার আহমদ (সিলটিভি)।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো: জেদান আল মুসা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার খবর পাওয়া মাত্র শাহপরাণ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। এ উৎসব চলাকালীন বেলা সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠানস্থলে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় সেখানে থাকা সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা।
আলোকচিত্রী অসমিত অভি বলেন, এমসি কলেজে মোহনার বসন্ত উৎসবস্থলে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় দৈনিক শুভ প্রতিদিনের ফটোসাংবাদিক মিঠু দাস জয় সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে তার ওপর চড়াও হয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে অন্যান্য সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
ইউসুফ আলী জানান, ছাত্রলীগ কর্মীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় আমার হাতে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু সবার উপস্থিতিতে তা আর ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।
শাহপরাণ থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে আছি। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ব্যাপারটি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি।


আরো সংবাদ



premium cement