২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নতুন ৩ ব্যাংকের অনুমোদনে কি গ্রাহকের আস্থা ফিরবে?

-

বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে চলমান নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর তিনটি নতুন বেসরকারি ব্যাংককে লাইসেন্স দেয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে, যেগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন সরকার দলীয় ব্যক্তিরা।
বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, দ্য সিটিজেন ব্যাংক ও পিপলস ব্যাংক নামে নতুন তিনটি ব্যাংকের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগ দলীয় একজন এমপির ভাই। আর পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন নেতা আর সিটিজেন ব্যাংকের প্রধান হিসেবে আছেন সরকারের একজন মন্ত্রীর মা।
তবে নতুন ব্যাংকে যারা আমানত রাখবেন সেসব গ্রাহকের কথা বিবেচনা করে এবার পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ তিনটি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করলে দেশে মোট ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬২তে।
গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাত নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের পটভূমিতে নতুন করে ব্যাংক অনুমোদন দেয়া নিয়ে সমালোচনা উঠলেও তাতে গুরুত্ব দিতে রাজি নন অর্থমন্ত্রী আ হ ম লোটাস কামাল।
যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ঠিক না করেই আশির দশকের প্রথম দিকে বেসরকারি ব্যাংকের অনুমতি দেয়া শুরু হয়েছিল। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকেরা নিজেরাই ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন।
শুধু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বেসরকারি সংস্থা সিপিডির দেয়া এক হিসাবে, গত ১০ বছরে (ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত) ব্যাংক খাতে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে।
তবে অনিয়ম আর দুরবস্থার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ফারমার্স ব্যাংক, যেটি পরে নাম পরিবর্তন করে নতুন নামে কার্যক্রম শুরু করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতকে রক্ষা করতে হলে বা খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে হলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে সুশাসন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক ড. রাদ মজিদ লালন বলছেন, ব্যাংকিং খাতে মূল সমস্যা মন্দ ঋণ এবং এ বিষয়টি নিয়েই গত কয়েক বছরে বেশি আলোচনা হয়েছে।
নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার আগে এ বিষয়টির একটি সুরাহা হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করছেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার তাতে তিনটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
বরং আমাদের হিসাবে যে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বিদ্যমান ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের নামে বেরিয়ে গেছে যেগুলোকে মন্দ ঋণ বলা হচ্ছে সেগুলোকে কিভাবে উদ্ধার করে ধীরে ধীরে মিনিমাইজ করে নিয়ে আসা যায় সেটি দেখা উচিত, ড. লালন বলেন।
ব্যাংকিং বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এই শিক্ষক বলেন, সম্প্রতি কিছু পদক্ষেপ সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দিক থেকে শুরু হয়েছে। একই সাথে কিছু নির্দেশনা হাইকোর্ট থেকেও এসেছে।
এসব পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই কার্যকর হলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পাবে। তখনি দরকার হলে নতুন করে ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া যৌক্তিক হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক না বাড়িয়ে বিদ্যমান ব্যাংকিং খাতের ওপর জনগণের বা গ্রাহকদের আস্থা কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে জোর দেয়া উচিত।
মন্দ ঋণ কমাতে গেলে নানা চাপ আসবে। সে চাপ মোকাবেলায় এবং মন্দ ঋণের জন্য যারা দায়ী ও যারা এসব ঋণদান প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করা উচিত, তারা মন্দ ঋণের জন্য দায়ীদের বিচার করবে।
শক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এগোতে পারলে ব্যাংকিং খাতের ওপর গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসবে।
ব্যাংকিংবিষয়ক বিশ্লেষক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ব্যাংকে খাতে সুশাসন ও তত্ত্বাবধানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করতে হবে। তারাই যদি যথাযথ মনিটরিং করে তাহলে ব্যাংক নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
তার মতে, নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া না দেয়ার বিষয়টি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো একটা ‘এক্সিট পলিসি’ ঠিক করা।
নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া যেতেই পারে। যদি কেউ সব শর্ত পূরণ করতে পারে তাহলে তিনি লাইসেন্স পেতেই পারেন।
তিনি জানান, তবে এক্সিট পলিসি থাকলে কোনো ব্যাংক ব্যর্থ হলেও সে মার্কেট থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, এখন সবাই মনে করছে লাইসেন্স পাওয়াটাই আসল। একবার লাইসেন্স পেয়ে গেলে এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারই ব্যাংককে টিকিয়ে রাখতে যা করার করবে।
এভাবে তো চলতে পারে না। সরকারের উচিত একটি এক্সিট পলিসি তৈরি করা। যাতে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন যা থাকবে তাতে কোনো ব্যাংক বেরিয়ে গেলেও গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ভবিষ্যৎ : মুডির পূর্বাভাস
গত নভেম্বর মাসেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ভবিষ্যৎ অবস্থা নেতিবাচক বলে উল্লেখ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডি।
এজন্য তারা দায়ী করেছে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতিকে।
গত ২৯ নভেম্বর তাদের ‘ব্যাংকিং সিস্টেম আউটলুক-বাংলাদেশী ব্যাংকস’ শীর্ষক রিপোর্টে বলেছে, দেশটির অর্থনীতি অনেক ভালো হলেও ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক।
পরবর্তী ১২ থেকে ১৮ মাসের অবস্থা পর্যালোচনা করে মুডি বলেছে, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সামনের দিনগুলোতে ঝুঁকি বাড়বে।
মুডি মনে করে, সামনের দিনগুলোতে খেলাপি ঋণের কারণে সুদের হার বাড়তে পারে এবং ব্যাংকিং খাতে মুনাফার হার কমতে পারে।
সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে কাজ করার পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও প্রদেয় ঋণের গুণগত মান, মূলধন ও মুনাফা নিম্নগামী।
তবে ব্যাংকিং খাতে অনেক অর্থ রয়েছে এবং সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মুডি।
নির্বাচনের আগে সিপিডি কী বলেছিল : একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত : সমস্যা ও করণীয়’ শিরোনামে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন লিখেছেন, ‘গত কয়েক বছরে দেশে ব্যাংকিং খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। তবে দুর্নীতি, অনিয়ম ও আত্মসাতের মতো ঘটনায় খাতটি ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।’
‘আর এ বিষয়গুলো ব্যাংকের সামগ্রিক কাজ ও গ্রহণযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলেছে। এ খাতের ধারাবাহিক অবনতি এবং এর ফলে যে পরিণতি হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলগুলো বারবার উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।’
সিপিডির ওয়েবসাইটে তার এ লেখায় আরো রয়েছে, ‘বাংলাদেশের আর্থিক খাত ব্যাংকনির্ভর হওয়ায়, ব্যাংকের নাজুক অবস্থা প্রভাব ফেলবে সমগ্র অর্থনীতির গতির ওপর।’
‘যে কারণে সমস্যার সমাধান খুবই জরুরি। এ নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে, এখন সবচেয়ে জরুরি সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া। পরবর্তী সরকারের উচিত হবে ব্যাংকিং সেক্টরের ত্রুটি সংশোধনে জোর দেয়া।’


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে

সকল