২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বদিকে দিয়ে মাদক শাজাহানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ কতটা সক্ষম হবে সংসদে বিতর্ক

-

সড়কে দুর্ঘটনা রোধ ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সুপারিশমালা প্রণয়নে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করে রোববার গঠিত কমিটি নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে এ নিয়ে সংসদে পাল্টা জবাব, প্রতিবাদ ও কৈফিয়ত প্রদানের ঘটনা ঘটে। শাজাহান খান প্রশ্নকর্তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ ও প্রত্যাহারের দাবি করেন।
গতকাল প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম এই প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘বদিকে দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ, শাজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ। গতবার শাজাহান খানের একটা হাসি নিয়ে কত কিছু ঘটল। সেই শাজাহান খানকে প্রধান করে গঠিত কমিটি সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কতটা সক্ষম হবে?’
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে ব্যক্তিগত কৈফিয়তের বিধিতে ফ্লোর নিয়ে শাজাহান খান ইয়াবা ব্যবসার সাথে সড়ক দুর্ঘটনাকে মিলিয়ে তার সম্পর্কে প্রশ্ন তোলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যায়িত করে বক্তব্যের প্রতিবাদ ও এক্সপাঞ্জের দাবি জানান। পরে শাজাহান খান মাইক ছাড়াই বক্তব্যটি এক্সপাঞ্জের বিষয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলে স্পিকার বলেন, আপনি বসেন, বিষয়টি আমি দেখবো।
বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, রোববার রাজধানীর বনানীতে নবনির্মিত বিআরটিএ ভবনে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রীও ছিলেন। তারা নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে এসেছেন। পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দও ছিলেন। সড়ক বিশেষজ্ঞরাও যেমন ইলিয়াছ কাঞ্চন, সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং রিলেটেড মিনিস্ট্রির সচিব কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ডিআইজি হাইওয়ে সবার উপস্থিতিতে আমরা নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা করেছি। সেখানে আমরা সাম্প্রতিককালে বিগত শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে যে সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়েছিল এই আইন বাস্তবায়নের কিছু বিধি-প্রবিধি প্রণয়নের বিষয়ে ফেডারেশন নেতৃবৃন্দের এবং শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা স্বরাষ্ট্র, আইন ও রেলপথ মন্ত্রীকে দিয়ে একটি কমিটি করেছি। সেখানে সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে একটি সুপারিশমালা/ রিপোর্ট তৈরি করার জন্য ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটা কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির প্রধান হিসেবে শাজাহান খানের নামটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। ওখানে কেউই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেননি। তার নেতৃত্বে আরো ১৫ জন কমিটিতে আছেন। আমি এখানে ব্যক্তি দেখব না। ব্যক্তি অতীতে তার কোনো স্মিতহাসির জন্য কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়েছে সেটা আমি দেখতে চাই না। আমি দেখব এই কমিটি যে সড়ক দুর্ঘটনা নিযন্ত্রণে সড়কের পরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়নে তারা সবাই মিলে সুপারিশমালা এবং রিপোর্টটি কিভাবে পেশ করে, কিভাবে তৈরি করে সেটার ভিত্তিতেই আমরা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করব। এখানে ব্যক্তি কোন বিষয় না। একজনইতো রিপোর্টটি প্রণয়ন করবে না। এখানে যেহেতু তিনি অভিজ্ঞ মানুষ সে জন্য তার নামটি এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে। দেখুন না মাননীয় সংসদ সদস্য এখান থেকে আপনি যতটা না আশা করছেন তার থেকেও ভালো রিপোর্ট ও প্রস্তাবওতো আসতে পারে।
পরে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে সরকারদলীয় এমপি শামীম ওসমান এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘শাজাহান খান একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। উনার হাসির জন্য ঘটেছে নাকি এ দেশে কেউ কিছু ঘটিয়েছে সে বিষয়ে আলোচনার কিছু আছে। সুতরাং এই বিষয়টার প্রতিবাদ জানাই।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে শাজাহান খান কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ বিধিতে ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দিতে ফ্লোর নিয়ে ফখরুল ইমামের প্রশ্ন তোলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, তিনি মাদক ব্যবসাও দুর্ঘটনাকে এক সাথে দাঁড় করিয়ে আমার সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক নিন্দনীয় এবং আমি তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, ফখরুল ইমাম আজকে যে কথাটা বললেন, আবার একদিন তাকে এখানে দাঁড়িয়ে বলতে হবেÑ তার এই মন্তব্য কত বড় ভুল এবং ভ্রান্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উনারাওতো ক্ষমতায় ছিলেন, সড়ক পরিবহন সেক্টরটাই অত্যন্ত সেনসেটিভ এবং বিশৃঙ্খল অবস্থা বহু আগ থেকেই। এখন শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। আমি ১৯৭২ সাল থেকে শ্রমিক রাজনীতি করি, ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতি করি। তিনি গার্মেন্টস সেক্টরে জ্বালাও পোড়াও বন্ধে তাকে দায়িত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এরপর গার্মেন্টসে জ্বালাও পোড়াও হয়নি। দুর্ঘটনা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে যদি কেউ বলেন, তাহলে এটা ভুল ধারণা। দুনিয়ার কোনো দেশ নেই, যে দেশে কমবেশি দুর্ঘটনা ঘটে না। আমাদের এখানে দুর্ঘটনা অনেক কমে গেছে।
ফ্লাইওভারেও হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে : সরকারি দলের সদস্য সাইফুজ্জামানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ডিভাইডারই একমাত্র সমাধান নয়। এখানে চালক, পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতাও জরুরি। কারণ রাস্তায় দেখা যায় ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরও ডিভাইডার দিয়ে লাফ দিয়ে মানুষ রাস্তা পার হচ্ছেন। মহিলারা বাচ্চা কোলে নিয়ে রাস্তা পার হয়। এমনকি ফ্লাইওভারের এপাশ থেকে ওপাশে হামাগুড়ি দিয়ে মানুষ পার হচ্ছে। মানুষ সড়কে শৃঙ্খলা মানছে না। মানুষের বিবেকটা এখানে খুব জরুরি।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছেন। এর মধ্যে গাড়ি এসে চাকায় পিষ্ট করে দিচ্ছে। এখানে কি শুধু চালককে দায়ী করবেন? অনেক গাড়িচালক ট্রাফিক সিগন্যাল মানেন না। ভিআইপি হয়ে অনেকে রং সাইডে গাড়ি নিয়ে যান। এটা ঠিক নয়। ভিআইপিরা তো অসাধারণ, তারা যদি রং সাইডে চলেন তাহলে সাধারণ মানুষ কেন রং সাইডে যাবে না! সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে তার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, সব মহাসড়কে ফোর লেনের পাশাপাশি বাইলেন ও ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে। সড়ক মন্ত্রণালয় সেইভাবেই কাজ করছে।
শহিদ ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের সংসদকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশেষ উদ্যোগে চলমান ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রান্সজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের নিমিত্ত সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে চলছে।
প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উত্তরা ৩য় পর্ব থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬ স্টেশনবিশিষ্ট উভয়দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম।

 


আরো সংবাদ



premium cement