২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আরব আমিরাতের প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে প্রধানমন্ত্রী

আবুধাবিতে গতকাল আন্তর্জাতিক ডিফেন্স প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল্ নাহিয়ান : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী (আইডিইএক্স) পরিদর্শন করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মেদ বিন রাশিদ আল মাকতুমর আমন্ত্রণে তিনি এই প্রদর্শনীতে যোগদান করেন।
আবুধাবির ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে পাঁচ দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে সামরিক কর্মকর্তা এবং সরকারি সংস্থার জন্য সামরিক কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ এবং সামগ্রী প্রদর্শিত হচ্ছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদর্শনী কেন্দ্রে পৌঁছলে তাকে আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মেদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান অভ্যর্থনা জানান।
আইডিইএক্স হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর অফ্রিকার দেশগুলোর জন্য একমাত্র প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী এবং সম্মেলন। যেখানে প্রতিরক্ষা খাতের স্থল, নৌ এবং আকাশ পথের নবতর প্রযুক্তির প্রদর্শনী করা হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়কের পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যার মূল উদ্দেশ্য এই অঞ্চলের দেশগুলোতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে শক্তিশালী করা।
গত মাসে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণের পর তার প্রথম বিদেশ সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে শেখ হাসিনা আজ সকালে এখানে এসে পৌঁছেন।
সফরকালে শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন এবং এখানে প্রবাসী বাংলাদেশী আয়োজিত এক সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করবেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন।
আইডিইএক্স প্রদর্শনীতে ১৩শ’র অধিক প্রতিরক্ষা ফার্ম এবং সংস্থাগুলো অংশগ্রহণ করছে।
এই অঞ্চলের বৃহত্তম বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী আইডিইএক্স এ বছর তার রজতজয়ন্তী উদযাপন করছে এবং এতে ৬০টির অধিক দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আবুধাবি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। এর পর প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রাসহ আবুধাবির সেন্ট রেজিস হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমিরাতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা এখানেই অবস্থান করবেন। এর আগে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগদানের জন্য জার্মানিতে তিন দিনের সরকারি সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির উদ্দেশে মিউনিখ সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ২টা ৪০ মিনিট) মিউনিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
আমিরাত সফরকালে শেখ হাসিনা গতকাল আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিভিশন সেন্টারে (এডিএনইসি) আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা মেলার (আইডিইএক্স-২০১৯) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের সাথে সাক্ষাৎ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাই আমিরাতের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মকতুমের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ ছাড়া অন্য নেতৃবৃন্দের সাথেও বৈঠক করেন।
শেখ হাসিনা আল বাহার প্রাসাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের শাসক মরহুম শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের পতœী শেখ ফাতিমা বিনতে মোবারক আল কেতবির সাথে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী সেন্ট রেজিস আবুধাবি হোটেলে একটি কমিউনিটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা গত মাসে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর জার্মানি ও ইউএইতে প্রথম বিদেশ সফরে বৃহস্পতিবার মিউনিখে পৌঁছান। তিনি দুই দিনের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেন। শনিবার ওই সম্মেলন শেষ হয়েছে। সম্মেলনের ৫৫তম এডিশনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সঙ্কটবিষয়ক একটি গোলটেবিলে বক্তৃতা করেন এবং নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি ড. ফাতু বেনসুদা ও পরমাণু অস্ত্র বিলুপ্তিকরণবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রচারণার নির্বাহী পরিচালক নোবেল বিজয়ী বেট্রিস ফিন পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী এখানে হোটেল শেরাটনে জার্মানিস্থ বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় যোগ দেন। শেখ হাসিনা ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে দেশে ফিরবেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ধনী দেশগুলোকে ‘সদিচ্ছা’ প্রদর্শনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে রক্ষায় ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে কাজ করার জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনা ও অর্থায়ন রয়েছে। আমাদের এখন কেবল প্রয়োজন সমাজের সর্বত্র ধনিক শ্রেণীর সদিচ্ছা, আগ্রহ ও প্রচেষ্টা।’
শনিবার রাতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এজ এ সিকিউরিটি থ্রেট’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে পোস্টডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট পরিচালক হানস জোয়াসিম সভাপতিত্ব করেন। ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অব কেনিয়া মনিকা জুমা, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইনি ইরিকসন সরিডি, ইউএস সিনেটর সেলডন, হোয়াইট হাউজ অ্যান্ড কো-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অব গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনাল বুন্নি ম্যাকডিয়ারমিড প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। ডয়চে ভেলের চিফ পলিটিক্যাল করসপন্ডেন্ট বার্লিন ম্যালিন্ডা ক্রেনি রোর্স অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অব্যাহত উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জন্য সত্যিকার এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাইক্লোন, ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও মওসুমি বন্যা মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এ বিষয় কারো কোনো সন্দেহ থাকে, তাদের আমি বাংলাদেশে এসে প্রকৃত অবস্থা দেখে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আরো অনেক হুমকির কারণে লাখ লাখ মানুষ পৈতৃক ভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে, নদী ভাঙন, লবণাক্ত পানি এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মিশ্রণের কারণে এসব ঘটছে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে পানিতে অ্যাসিডিটি বাড়ছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা সামান্যই।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি বর্ষা মওসুমে নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ছে এবং হাজার হাজার একর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতে অনিয়ম এবং অতিবৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষকের জন্য চাষাবাদ কঠিন হয়ে পড়েছে এবং শুষ্ক মওসুমে পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তার সরকার নিজস্ব সম্পদ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল গঠন করেছে এবং অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪০ কোটি মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা এখন বড় ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি : আমাদের অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখতে পারব কি না? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও অন্যান্য অনেক দেশেরই জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement