২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায় কাটছাঁট হচ্ছে ১৪ হাজার কোটি টাকা

-

চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। এ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা দেয়া রয়েছে ৩২ শতাংশ। কিন্তু এর বিপরীতে সাত মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সার্বিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট মনিটিরিং বিভাগ ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি প্রাথমিক প্রস্তাব তৈরি করেছে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে এই কাটছাঁটের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।
ও দিকে রাজস্ব আদায় কাটছাঁট করে প্রতি বছর বাজেট সংশোধন করা হলেও বছর শেষে দেখা যায় এ লক্ষ্যও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। গত তিনটি অর্থবছরের বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে এবং প্রতি বছর ঘাটতি বেড়েই চলেছে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। বর্তমান সার্বিক রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এটা কমিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। সে হিসাবে মোট ১৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হতে পারে। তবে এ কাটছাঁটের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছেন। কারণ গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই রাজস্ব আদায়ের হার সবচেয়ে খারাপ।
যেমন চলতি অর্থবছরে এনবিআর অংশে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। কিন্তু এ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে মাত্র এক লাখ ১৫ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বছরের বাকি পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় করতে হবে এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা কখনোই এনবিআরের পক্ষে সম্ভব হবে না। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এত কম রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি হয়নি বলে তথ্য-উপাত্ত বলছে।
এ দিকে বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব বাজেট সংশোধনের পরও ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা, ১৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা এবং ২৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি বছরই ঘাটতি বাড়ছে।
সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে প্রকৃত আদায় দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা (জিডিপির ৯ শতাংশ)। এর আগে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআরের আওতাধীন সংশোধিত রাজস্ব বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ও ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৪২ কোটি টাকা এবং ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের মতে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত এনবিআরের আওতাধীন কর-রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে গত অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৫ শতাংশ। তবে বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের তুলনায় দ্বিতীয় মেয়াদে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধিতে নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে। অর্থ বিভাগের মতে, এনবিআরের আওতাধীন সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পেছনে ‘ভ্যাট আইন ২০১২’ বাস্তবায়ন না হওয়া একটি অন্যতম কারণ। এ পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আয়কর আদায় জোরদার করার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অর্থবছরের প্রথমার্ধে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় শুল্ক আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী করতে পারেনি কাস্টম হাউজগুলো। ভোটের কারণে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আহরণে মাঠ পর্যায়ে বড় তদারকি বন্ধ ছিল। এখন কর্মকর্তাদের নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ছয় মাসে এটি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকবে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা। অন্য দিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি এনবিআর কর্মকর্তার সাথে এক বৈঠকে বলেছেন, তারা যেন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করেন। তিনি আরো বলেছেন, এখন থেকে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া হবে না। এনবিআরই ঠিক করবে তারা কত রাজস্ব আদায় করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement